রাজনীতিতে ডাকসু ঝড়

এমরান এস হোসাইন ও মাহির কাইয়ুম
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল চমকে দিয়েছে সবাইকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা) প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেই বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস বিজয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ঝড় তুলেছে। প্রগতিশীলদের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠনের এমন জয় নতুন চিন্তার দিক উন্মোচিত করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, উৎসবমুখর পরিবেশে এই শান্তিপূর্ণ ও আলোড়িত নির্বাচন আগামী দিনে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য সুন্দর একটি নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ডাকসুর এই ফল আগামী দিনে দেশের মতাদর্শের লড়াইটা কীরূপ হতে পারেÑতার ধারণাও লাভ করা যায়। এছাড়া নতুন রাজনৈতিক মেরূকরণও হতে পারে। ডাকসুর সুন্দর নির্বাচন থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ছাত্রশিবির। তা সত্ত্বেও গত ৪৮ বছরে রাজনীতির এই সূতিকাগারে ছাত্রশিবির নিজেদের অবস্থানের জানান দিতে পারেনি। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈরী পরিবেশে অনেকটাই গোপনে নিজেদের সংগঠন পরিচালনা করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে গোপনীয়তার সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়েছে। ওই সময় বামসহ প্রায় সব ছাত্রসংগঠন একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি একপ্রকার নিষিদ্ধ করে দেয়। কেউ কেউ শিবিরকে তাচ্ছিল্য করে ‘গুপ্ত সংগঠন’ বলেও আখ্যায়িত করে।

তবে, গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতির ঘোষণা দেয় শিবির। আর প্রকাশ্য রাজনীতি শুরুর এক বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের কর্তৃত্ব পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

গত মঙ্গলবার উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন (ডাকসু) ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ভূমিধস বিজয় লাভ করেছে। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সিনেট ভবন থেকে নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণার সময় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ডাকসুর ২৮ পদের ২৩টিতেই জিতেছে ছাত্রশিবির প্যানেলের প্রার্থীরা। সম্পাদকীয় ১২টি পদের মধ্যে ৯টিতে এবং ১৩টি সদস্য পদের মধ্যে ১১টিতে শিবিরের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৯টি প্যানেলের মধ্যে শিবিরের বাইরে মাত্র একটি প্যানেলের এক প্রার্থী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সাত বামপন্থি সংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী হেমা চাকমা ডাকসুর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য প্যানেলের কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি। এ ছাড়া তিনটি সম্পাদকীয় পদ ও একটি সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

সম্পাদকীয় পদে জয়লাভকারী তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক) ও যুবাইর বিন নেছারী (সমাজসেবা সম্পাদক) জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবং সানজিদা আহমেদ তন্বি (গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক) জুলাই আন্দোলনে আহত হয়েছিলেন।

ডাকসু নির্বাচনের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, শীর্ষ তিন পদে শিবিরের প্রার্থীদের সঙ্গে মূলত ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এ পদ তিনটিতে ছাত্রদল নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে ভিপি পদে ব্যবধান তিন গুণের কাছাকাছি। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। বিপরীতে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।

ভিপি পদে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা চতুর্থ হয়েছেন। আর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আব্দুল কাদের পঞ্চম হয়েছেন ১ হাজার ১০৩ ভোট পেয়ে।

জিএস পদে ছাত্রশিবিরের নেতা এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এ ছাড়া ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন বামপন্থি সাতটি ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী ৪ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। ২ হাজার ১৩১ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার।

এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের নেতা মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী (গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা) তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী ৩ হাজার ৮ ভোট পেয়ে আছেন তৃতীয় অবস্থানে। ১ হাজার ৫১১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল। আর ১ হাজার ১৩৭ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন রনি। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছেন ৯০০ ভোট। শীর্ষ তিন পদে ছাত্রদল নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ডাকসুর অন্য পদগুলোতে ছাত্রদলের প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি।

নির্বাচনে শিবির প্যানেল থেকে এক দম্পতি নির্বাচন করে দুজনেই জয়লাভ করেছেন। এছাড়া দুজন চাকমা সম্প্রদায়ের এবং একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সদস্য পদে (শিবির প্যানেল) জিতেছেন।

অন্য সম্পাদকীয় ও সদস্য পদে জিতল যারা

ডাকসুতে অন্য পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক—ফাতেমা তাসনিম জুমা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইকবাল হায়দার, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক উম্মে ছালমা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক জসীমউদ্দিন খান, ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এম এম আল মিনহাজ এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. জাকারিয়া। তারা সবাই ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

সদস্য পদে জয়ী কারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সদস্য পদ রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে ১১টিতে জয়ী হয়েছে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। একটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যটিতে জয়ী বাম-সমর্থিত প্রার্থী।

ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে জয়ী হলেন সাবিকুন নাহার তামান্না (১০০৮৪)। তিনি সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া অন্যরা হলেন সর্ব মিত্র চাকমা (৮৯৮৮), আফসানা আক্তার (৫৭৪৭), রায়হান উদ্দীন (৫০৮২), তাজিনুর রহমান (৫৬৯০), ইমরান হোসাইন (৬২৫৬), মিফতাহুল হোসাইন আল-মারুফ (৫০১৫), মো. রাইসুল ইসলাম (৪৫৩৫), শাহীনুর রহমান (৪৩৯০), আনাস ইবনে মুনির (৫০১৫) এবং মো. বেলাল হোসেন অপু (৪৮৬৫)। সদস্য পদে বামপন্থি প্যানেল থেকে হেমা চাকমা (৪৯০৮) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া (৪২০৯) জয়লাভ করেন।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ভরাডুবি

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। তবে ডাকসু নির্বাচনে তারা ঐকবদ্ধ প্যানেল দিতে পারেননি। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখভাগের সৈনিকদের একটি অংশ ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল’-এ ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। এই প্যানেলের কেউই নির্বাচনে জিততে পারেননি। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদে আবদুল কাদের পেয়েছেন এক হাজার ১০৩ ভোট। তার এই ভোট বিজয়ী সাদিক কায়েমের ভোটের ১৫ ভাগের একভাগ। তিনি এ পদে ৫ নম্বর হয়েছেন। দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। তার প্যানেল থেকে জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার পেয়েছেন দুই হাজার ১৩১ ভোট। তার অবস্থানও পঞ্চম। তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে এ পদে তৃতীয় হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছেন ৯০০ ভোট। তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন আরো পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ও বামপন্থি প্রার্থীও রয়েছেন। এ প্যানেলের অন্যান্য পদের প্রার্থীদের ফলাফলও উল্লেখ করার মতো নয়।

যা বললেন বিশ্লেষকরা

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এক প্রতিক্রিয়ায় আমার দেশকে বলেন, আমি মনে করি একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে। ছোটখাটো যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এসেছে, এগুলো সব নির্বাচনে থাকে। টানাটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটা দেশের জন্য স্বস্তিদায়ক। এই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগামী দিনে দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাবরই প্রগতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তবুদ্ধি চর্চার সূতিকাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। সে বিবেচনায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই ফলটা ভিন্ন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। সবাইকে অবাক করেছে। এ ফলটা আমাদের দেশ আগামী দিনে কীভাবে চলবে, এখানে মতাদর্শের লড়াইটা কীরূপ ধারণ করবে, তা আঁচ করতে পারি। মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লড়াই বাংলাদেশ তীব্র হবে। তবে তীব্র না হয়ে আপসের দিকে গেলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ে শিবির এক বছর ধরে প্রকাশ্যে এলেও তাদের রাজনীতি দীর্ঘদিনের। তারা কায়দাকানুন করে এখানে রাজনীতি সক্রিয় রেখে আসছে। আমি বহু বছর আগে জামায়াতের দুই-একজন নেতার কাছে শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের তিন-চার হাজার শিবিরকর্মী আছে। এবারের ভোটে তো সেটাই প্রমাণ হলো।

ছাত্রদলকে আত্মবিশ্লেষণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদল এ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। কেন এ ধরনের ফলাফল হলো, এজন্য তাদের উচিত হবে আত্মসমীক্ষণ করা। কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি বড় অংশ তাদের বুকে টেনে নিল না। এখানে আমি মনে করি সময়োপযোগী নতুন রাজনৈতিক বয়ান উপস্থাপন না করতে পারার কারণেই এ সমস্যা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে সাংগঠনিক সমস্যা। একটি আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠন হিসেবে যেভাবে তৈরি হওয়া উচিত ছিল, ছাত্রদল এতদিনেও তা পারেনি। এখানে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, লেখাপড়া এবং আদর্শবোধের ঘাটতি রয়ে গেছে। এটাকে একটি শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে ছাত্রদের আস্থা অর্জনসহ আগামী দিনে ভালো করার জন্য তাদের কাজ করা উচিত। তাদের হতোদ্যম হওয়ার কিছু নেই।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থীর সঙ্গে জিএস প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান প্রায় চার হাজার। এটা ইনডিকেট করে, ব্যক্তির ক্যারিশমা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। ভিপি প্রার্থীর জনপ্রিয়তার জন্য অনেক নিরপেক্ষ ভোটারও টানতে পেরেছে। তার ইমেজ দিয়ে প্যানেলের অন্যরাও উপকৃত হয়েছে।

ভোটারদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়ে ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ছাত্রশিবির সম্পর্কে আমরা যেসব কথাবর্তা অতীতে শুনে আসছি, আশা করব আজকের দিন থেকে তারা অতীতের ওই ধরনের খারাপ দৃষ্টান্তগুলো স্থাপন করবে না। ক্যাম্পাসে সহনশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করবে, নারীদের প্রতি সম্মান জানাবে। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখাবে। সহপাঠীদের জীবনমানকে তারা মূল্যায়ন করবে। এগুলো করলে তারা ভবিষ্যতে আরো ভালো করতে পারবে।

ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন এবারের ডাকসু নিরার্চন প্রসঙ্গে বলেন, ভোট দিতে বাধা দেওয়া, জালিয়াতি বা বড় ধরনের অনিয়মের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম করে পার পাওয়ার সুযোগ ছিল না।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই প্রজন্ম অভ্যুত্থান করে আপনাকে আমাকে শিখিয়েছে। আবার অভ্যুত্থানের পর একটি সুন্দর নির্বাচন করে আমাদের যেটা শিখিয়েছে, তা জাতীয় রাজনীতিতে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। আমি এই শিক্ষাকে লজ্জার কোনো বিষয় মনে করি না। আমরা ছাত্রদের থেকে শিখলাম।

সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে কাজ করার অঙ্গীকার নবনির্বাচিত ভিপির

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাদিক কায়েম সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিতের প্রতিজ্ঞা করেন। সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বিজয়ী হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর নেতৃত্বের আমানত রেখেছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর যে আমানত রেখেছে, আমরা এর যথাযথ হক আদায় করব ইনশাল্লাহ। আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের যে স্বপ্নের ক্যাম্পাস, সেই ক্যাম্পাস বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না। শিক্ষার্থীদের ভয়েস আমাদের ভয়েস। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা আমাদের প্রত্যাশা।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, এখানে যারা প্রার্থী ছিলেন, আমরা সবাই সহযোদ্ধা ছিলাম। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। যারা একসঙ্গে নির্বাচন করেছি, তারা প্রত্যেকেই আমাদের উপদেষ্টা। আমরা আশা করব তারা আমাদের যে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। আমাদের গাইড করবেন, ভুল বিষয় ধরিয়ে দেবেন।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত