পেনশনের অর্থ পেতে শিক্ষক কর্মচারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা

রকীবুল হক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৯
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫০

দেশের মাসিক বেতন আদেশভুক্ত (এমপিও) মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা পেতে অপেক্ষা বেড়েই চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে আবেদন করেও টাকা পেতে চার বছর পর্যন্ত ঘুরতে হচ্ছে এসব শিক্ষককে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার চেয়ে ফান্ড সংকটের কারণেই মূলত এই সময় লাগছে। বর্তমানে আবেদনের যে জট আছে, তা নিষ্পত্তি করতে অন্তত ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি স্থায়ী ফান্ড দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ আমার দেশকে জানান, তাদের কাছে ৫৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন জমা আছে। আবেদনের পর অবসর সুবিধা পেতে ৪৮ থেকে ৫০ মাস সময় লাগছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে। তিনি জানান, প্রতি মাসে যেসংখ্যক আবেদন জমা পড়ে তা নিষ্পত্তি করতে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লাগে। অথচ আমাদের ফান্ডে আসে ৭৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি করার আশা রয়েছে তাদের। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ আরো বলেন, বর্তমানে যে গতিতে আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে তাতে সময় আরো বাড়তেই থাকবে। কারণ, শিক্ষকরা যে স্কেল হিসেবে অবসরের চাঁদা জমা দেন, অবসরের সময় স্কেল অনেক বেড়ে যায়। এটির সমাধানের জন্য রাজস্ব বাজেটে নিতে হবে। অসুস্থতাসহ বিশেষ কিছু কারণে অবসর সুবিধা সিরিয়ালের আগেই পরিশোধের গতানুগতিক নিয়ম থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর এ ধরনের আবেদন আর নেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. শরিফা নাছরীন বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত আবেদনকারী ৬৪৪ জনের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০ জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আবেদনকারী ২ হাজার ৬১০ জনের আবেদন শিগগিরই নিষ্পত্তি করা হবে। এরপরও ৪২ হাজার আবেদন জমা থাকছে।

শরিফা নাছরীন বলেন, প্রতি মাসে অন্তত ১ হাজার ২০০ শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে আবেদন করেন। তাদের চাহিদা পূরণে প্রয়োজন হয় ৬৫ কোটি টাকা। অথচ টাকা পাওয়া যায় ৫৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাসে ১০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। সরকারি বিশেষ বরাদ্দ পেলেই এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব। বর্তমান সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শরিফা নাছরীন আরো জানান, বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী তারা চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর আপডেট তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ট্রাস্টের চলতি হিসাবে জমা থাকা ৫৭৪ কোটি টাকা দিয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। ওই বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২১৫টি আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা প্রয়োজন।

সূত্র মতে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ১৯৯০ সালের আইন এবং প্রবিধানমালা ১৯৯৯ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানটি দেশের ৩০ হাজারের অধিক এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারীদের অবসরকালীন সময়ে সরকারের একটি আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে ২০০২ সালের আইনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড গঠন হয়। এ আইনের এমপিওভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন সময়ের সুবিধা দেওয়া হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও থেকে ৬ শতাংশ টাকা সঞ্চয় করে অবসর সুবিধাদি দেওয়া হয়ে থাকে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত