জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

স্বেচ্ছাসেবীদের কেউ দিচ্ছেন রক্তের জোগান, কারো হাতে পানি-স্যালাইন

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত

গত সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্বজনদের পাশে থেকে কাজ করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে এসব স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়ক ও হাসপাতালের গেটের সামনে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়েরও অনেকে ভিড় করেছেন আর্তের সেবায়। তাদের অনেকেই রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন রক্তদাতার সন্ধান দিয়ে। প্রয়োজনে এনে দিচ্ছেন খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন। হাসপাতালের সামনে যেন গাড়ির জটলা না বাঁধে, সেজন্য ট্রাফিকের দায়িত্বও পালন করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

গতকাল বুধবার বার্ন ইনস্টিটিউটের ফটকের সামনের দৃশ্য ছিল এমনই। এদিকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খবরের অপেক্ষায় আছেন সাংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। প্রবেশ গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। রোগীর স্বজন এবং হাসপাতালে দায়িত্বরত ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে বার্ন ইনস্টিটিউটে।

সরেজমিন সেখানে দেখা যায়, প্রবেশ গেটের পাশেই ‘হেল্প ডেস্ক’ খুলে তপ্ত রোদের মাঝেই বসে আছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন। বাংলাদেশ ছাত্রঅধিকার পরিষদের একটি হেল্প ডেস্কের ব্যানার থাকলেও ওই ব্যানারের সামনে কাউকে দেখা যায়নি। তবে ব্যানারে চারটি মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে।

ছাত্রদলের হেল্প ডেস্কে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ। তিনি বলেন, সকাল থেকে ২০ জনের মতো রোগীর স্বজনকে পানি, স্যালাইন, রক্ত আর দুপুরের খাবার দিয়েছেন তারা। তিনি জানান, তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রিয়াজুল আরফিন রিয়াদ বলেন, রোগীর স্বজনদের জন্য ফ্রি বাইক সার্ভিসও আছে। তারা কী ধরনের সহযোগিতা চাইছেনÑজানতে চাইলে শুভ বলেন, বেশিরভাগই আসছেন রক্তের জন্য। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া চ্যারিটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা আহতদের রক্তদানে সহায়তা, হাসপাতালে স্থানান্তর এবং উদ্ধারকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

এছাড়া জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও মনোঃসামাজিক সহায়তা প্রদান, উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা, প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ, রক্ত প্রদান ও রক্তদাতা ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে কাজ করছেন সোসাইটির দক্ষ যুব স্বেচ্ছাসেবকরা।

গত সোমবার দুপুরে ঘটনার দিন বিমান বিদ্ধস্ত হওয়ার পরপরই সোসাইটির ৩০ জন সদস্যের যুব স্বেচ্ছাসেবকদল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহত শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করছেন তারা। আহত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠাতেও সহযোগিতা করছেন যুব স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়াও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে রেড ক্রিসেন্ট যুব স্বেচ্ছাসেবকদের পৃথক দল স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহে কাজ করছে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম জানান, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা দিতে মাঠে আছে সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। ঢাকা রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্রের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের কাজে নিয়োজিত আছেন। জরুরি রক্তের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে সোসাইটির মোহাম্মদপুর রক্তকেন্দ্র ও হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট রক্তকেন্দ্রের হটলাইন নম্বর ০১৮১১৪৫৮৫৩৭ ও ০১৮১১৪৫৮৫৩৬-তে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে দুটি মোবাইল ব্ল্যাড ডোনেশন ইউনিট খোলা হয়েছে।

‘মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ডোনার সংগ্রহ করছেন। এ পর্যন্ত তারা ৭০০ ডোনার সংগ্রহ করেছেন। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নার্গিস সুলতানা আমার দেশকে বলেন, তারা সার্বক্ষণিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গত দুদিনে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে প্রায় ২০ জনকে রক্ত দিয়েছেন তাদের ডোনাররা।

অন্যদিকে সকাল ৭টা থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন হাসান মাহমুদ নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী। কেরানীগঞ্জ থেকে তিনি এসেছেন। হাসান বলেন, তিনি পেশাদার বাইক রাইডার নন। নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়েই এসেছেন যদি কাউকে সহযোগিতা করতে পারেন সে আশায়। মাইলস্টোন কলেজের অভিভাবকদের টাকার অভাব না থাকলেও তারা সাময়িক সংকটে পড়েছেন।

তিনি আরো বলেন, এ সংকটকালে রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনÑসবাই যে যার মতো সেবা করছে। তিনিও তাদের একজন হতে চান। মাহমুদ হাসানের এই মানবিক উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে হাসপাতাল এলাকায়। এমন দৃষ্টান্ত সংকটের মধ্যেও স্পষ্ট হয় মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মতো বিষয়ে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত