চার কারণে রাজধানীতে যানজট, ভোগান্তিতে নগরবাসী

মাহফুজ সাদি
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৫
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৬

রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এলেও প্রধানত চার কারণে যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সড়কে স্বস্তি মিললেও কর্মদিবসগুলোতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। এতে মূল্যবাদ সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি দূষণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সেই চিত্রই দেখা গেছে নগরজুড়ে। এর পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্মদিবসে অফিসগামী ও ফেরত মানুষ ও যানবাহনের চাপ, স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় বাড়তি গাড়ি ও মানুষের চাপ, রাজপথে নানা ইস্যুতে কর্মসূচি বেড়ে যাওয়া এবং ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে নমনীয়তা ও আইন না মানার প্রবণতা।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও কয়েকমাস লেগে যায় ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে, সহায়তা করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদেরও।

এরপর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে। তবে রাজপথে নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই যানজট দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার স্বস্তি মিললেও অন্যান্য দিন অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুরু ও শেষের সময় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল রোববার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিগন্যালেও তুলনামূলক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।

শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, রামপুরা, মিরপুর, মহাখালী, বনানী, উত্তরা, কারওয়ানবাজার, সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন এলাকায় সময়ে সময়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হতে দেখা গেছে।

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সিগনালগুলোর বিপরীত দিকের উভয় প্রান্তে, বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্ট সড়ক, সচিবালয়, অফিস ও আদালতপাড়ায় যানজট বেশি ছিল। সকাল ৯টার পর থেকে ১১টা আবার বেলা ৩টা থেকে ৫টায় সড়কে গাড়ির চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেড়ে পড়লেও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কর্মসূচি এই সরকারের সময় বেড়ে যাওয়ায় যানজট লেগেই থাকছে।

এর সঙ্গে নতুন বছরে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু ও বন্ধের সময় বিভিন্ন সড়কে গাড়ির জটলা লেগে যাচ্ছে। কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে নমনীয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে আবার কোথাও ট্রাফিক পুলিশের বাধা অমান্য করতেও দেখা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) নজমুল হাসান দৈনিক আমার দেশকে জানান, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে যানবাহনের চাপ ছিল। তার ওপর আবার ঢাকার কয়েকটি স্থানে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান করেছিল। সচিবালয়ের সামনে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা অবস্থান করেছিল। পাশাপাশি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেও সড়কে জটলা ছিল। বনানী এলাকায়ও সিএনজি চালকরা সড়ক অবরোধ করেছিল।

এতে ঢাকায় যানজটের মাত্রা বেড়ে যায়। পুলিশ প্রথমে যানজট নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হিমশিম খেলেও পরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলেও জানান তিনি।

প্রথম কর্মদিবসে অফিসে যাওয়ার সময় শাহবাগে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে একজন আসলাম হোসেন বলছিলেন, বাসা থেকে আসতে প্রথমে মিরপুরে, পরে আগারগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেটের জ্যামে পড়েছি। এখন শাহবাগে ১৫ মিনিট ধরে বসে আছি। সচিবালয় পর্যন্ত যেতে আরও ভুগতে হবে।

রামপুরার বনশ্রী থেকে গুলিস্তানে এসেছেন মো. আসাদ। তিনি বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে ওঠার পর রামপুরা বাজার, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এবং কাকরাইলে যানজটে পড়েছি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল ও রমনা ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, ছুটির দিনে সড়ক স্বাভাবিকই থাকে। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসগামী ও স্কুল-কলেজগামীদের যানবাহনের চাপ থাকে। বিশেষ করে সকাল ৯টা ও বিকাল ৪টার পরে অনেক সড়কে যানজট লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজপথে প্রতিদিনই নানা সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কারণে সাময়িক যানজট তৈরি হচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে কয়েকজন বাসযাত্রী বলছেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালনে নমনীয়তা দেখাতে দেখা গেছে আবার গাড়ির চালকদেরও ট্রাফিকের বাধা অমান্য করতে দেখা গেছে। তা ছাড়া সিগন্যাল ছাড়ার ক্ষেত্রেও সময়ের হেরফের হচ্ছে। তাতে বেশি সময় সিগন্যালগুলোতে বসে থাকতে হয়। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একাধিক ট্রাফিক বিভাগের অন্তত চারজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে এলেও পুলিশ সদস্যরা আগের মতো কঠোর অবস্থান নিতে পারছেন না। আবার গাড়ি চালকরাও অনেক সময় আইন মানছেন না, ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিলেও অগ্রাহ্য করছেন। এ কারণে সিগন্যালে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া উল্টোপথে গাড়ি চালানো এবং সড়ক ডিভাইডার কাটা পেলেই মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ঘুরিয়ে দেওয়ায় জটলা লেগে যাচ্ছে।

এমবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত