আজাদুল আদনান
চলতি জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন রাফাত ইসলাম (ছদ্মনাম)। ২৭ বছর বয়সি রাফাতকে নেওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটিতে (ওসেক)।
এ সময় রাফাতের মাথা ও শরীরের একাধিক স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়। দিতে হয় সেলাই। অস্ত্রোপচারকালে উপস্থিত ছিলেন রাফাতের বন্ধু ইমন। হঠাৎ ক্ষতস্থানে সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতার প্যাকেট হাতে নিলে ইমন দেখতে পান দু্বছর আগেই সুতার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ইমন আমার দেশকে জানান, ‘সুতা মেয়াদাত্তীর্ণ কি না ইচ্ছেকৃতভাবে সেটি দেখা হয়নি। হঠাৎ করেই প্যাকেট হাতে নিলে দেখা যায় প্যাকেটের গায়ে লেখা উৎপাদনের তারিখ ২০১৮, আর মেয়াদোত্তীর্ণের সময় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। বিষয়টি নার্সদের জানালেও তারা কোনো জবাব দেননি।’
রোগীর এই স্বজনের বক্তব্য ধরে গত ২১ জানুয়ারি সরেজমিনে হাসপাতালের ওসেকে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের স্টোর রুম, নার্স ও আবাসিক সার্জন মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। এ সময় হাসপাতালের স্টোর থেকে একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সুতার প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। যার মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। তবে এ ঘটনায় নিজেরা দায় না নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের ফলে রোগীর সংক্রমণ হতে পারে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দু-এক মাস হলে মানা যায়; কিন্তু দুবছরের মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের সুযোগ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো ভালোভাবে দেখার কথা। সরবরাহ করার আগেই ঠিকঠাকভাবে দেখে নিলে এমন হতো না। কেন এমন গাফিলতি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের স্টোর রুম সূত্রে জানা যায়, ওসেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি অস্ত্রোপচারের রোগী আসে। এ জন্য প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজারটি সুতার প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট ঠিকাদার কোম্পানির মাধ্যমে এসব সুতা কেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী, বছর শেষে প্রতিবার মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা, ওষুধ, গ্লাভসসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ ধ্বংস করার কথা। কিন্তু হাসপাতালটিতে গত ছয় বছরেও তা হয়নি।
গত ২০ জানুয়ারি অভিযোগের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্র সমন্বয়ক হাসপাতালে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের বিষয়টি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। শুধু সুতা নয়, রোগীকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ানোর প্রমাণও পান তারা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহার নিয়ে ভয়াবহ তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ওসেকে দুটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ওসেক অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) নার্স ইনচার্জ ছিলেন ইসরাত জাহান। অন্যদিকে ক্যাজুয়ালটি ওটির প্রধান ছিলেন নার্স মো. খোরশেদ আলম (সেতু)। এর মধ্যে নতুন সরবরাহ করা দীর্ঘমেয়াদি সুতা বিক্রি করে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে।
ওসেকের একাধিক নার্স আমার দেশকে জানান, ‘ক্যাজুয়ালটি ওটিতে মারাত্মক আহতদের অস্ত্রোপচার হয়। খোরশেদ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওসেকের দুটি ওটিই নিয়ন্ত্রণ করতেন। চিকিৎসকরা সেলাই করার কথা থাকলেও তিন শিফটে তিনজন ওয়ার্ডবয় দিয়ে সেলাই করানো হতো, এখনো হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানেন; কিন্তু ব্যবস্থা নেন না।’
তারা বলেন, ‘২০২৩ সালে ব্যবহৃত সুতার ইস্যু হয় ২২ সালে, একইভাবে ২০২৪ সালে যা ব্যবহার হয়েছে, তা ইস্যু করা হয়েছে ২০২৩ সালে। তাহলে গত বছর চলতি বছরের সুতার ইস্যু ও সরবরাহ হয়ে থাকলে সেসব সুতা কোথায়? যেহেতু কেউ দেখে না, সুতার গায়েও সরকারি লেখা থাকে না, সে সুযোগে বাইরে বহু সুতা বিক্রি করে দেন খোরশেদ আলম। আর পুরোনো সুতা দিয়ে সেলাই করা হচ্ছে। এতে রোগীরা মারাত্মক সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রতিদিন শত শত আহত রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে, যার অধিকাংশ সেলাই হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতায়।’
নানা অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি খোরশেদ আলমকে সুনামগঞ্জে বদলি করা হয়। তবে নানা কায়দায় সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জে, পরে রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) বদলি নেন তিনি। দুই মাসের ব্যবধানে এসব বদলির পেছনে নিজেকে বিএনপির সক্রিয় নেতা বলে পরিচয় দেন খোরশেদ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে খোরশেদ আলমের মুঠোফোনে দুদিনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের বিষয়ে ওসেক ওটির ইনচার্জ ইসরাত জাহান আমার দেশকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দেড় বছরে আমি কোনো সুতা স্টোর থেকে সরবরাহ করিনি। সব ধরনের সুতা খোরশেদ আলম সরবরাহ ও তদারকি করতেন। কাজেই মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা কেন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি তিনিই বলতে পারবেন।’
সেবা তত্ত্বাবধায়ক শাহনেওয়াজ পারভীন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আমরা কেবল সেবা দিই। তারা তদন্ত করুক, দায়ীরা বেরিয়ে আসবে।’
দায় এড়িয়ে যান ছয় মাস আগে যোগদান করা আবাসিক সার্জন ডা. আহমেদ কবির চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন নার্স ইনচার্জরা। আমি স্বাক্ষর দিই, কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ সরবরাহ করেছে কি না, সেগুলো আমার দেখার দায়িত্ব নয়।’
শুধু সুতা নয়, ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ ও সরঞ্জামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার তদারকি ছয় বছর ধরে হয় না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের স্টোর অফিসার রফিকুল ইসলাম। আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই ওষুধ, সুতাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণের মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছরই মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা উপকরণ ব্যবহার তদারকি ও মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ ধ্বংস করার কথা।
কিন্তু ২০১৮ সালের পর তা আর হয়নি। এগুলো করতে নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে (ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার) চিঠি দিতে হয়, দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় বাস্তবায়ন হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ যে সুতা ও ওষুধ ব্যবহার হয়েছে, তা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টেন্ডারে কেনা।’
পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, ‘ঘটনা জানার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে প্রতিটি বিভাগে আলাদা ইনচার্জ রয়েছেন, ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা পরিচালকের দায় হতে পারে না। তবে পরিচালক হিসেবে একেবারে আমিও এড়াতে পারি না। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।’ ছয় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা উপকরণ ধ্বংস না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কনডেমনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বাইরে পড়ে থাকা মালামাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে টেকনিক্যাল জিনিসগুলো দেখা হবে। কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর আমার দেশকে বলেন, ‘ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমবি
চলতি জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন রাফাত ইসলাম (ছদ্মনাম)। ২৭ বছর বয়সি রাফাতকে নেওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটিতে (ওসেক)।
এ সময় রাফাতের মাথা ও শরীরের একাধিক স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়। দিতে হয় সেলাই। অস্ত্রোপচারকালে উপস্থিত ছিলেন রাফাতের বন্ধু ইমন। হঠাৎ ক্ষতস্থানে সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতার প্যাকেট হাতে নিলে ইমন দেখতে পান দু্বছর আগেই সুতার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ইমন আমার দেশকে জানান, ‘সুতা মেয়াদাত্তীর্ণ কি না ইচ্ছেকৃতভাবে সেটি দেখা হয়নি। হঠাৎ করেই প্যাকেট হাতে নিলে দেখা যায় প্যাকেটের গায়ে লেখা উৎপাদনের তারিখ ২০১৮, আর মেয়াদোত্তীর্ণের সময় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। বিষয়টি নার্সদের জানালেও তারা কোনো জবাব দেননি।’
রোগীর এই স্বজনের বক্তব্য ধরে গত ২১ জানুয়ারি সরেজমিনে হাসপাতালের ওসেকে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের স্টোর রুম, নার্স ও আবাসিক সার্জন মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। এ সময় হাসপাতালের স্টোর থেকে একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সুতার প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। যার মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। তবে এ ঘটনায় নিজেরা দায় না নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের ফলে রোগীর সংক্রমণ হতে পারে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দু-এক মাস হলে মানা যায়; কিন্তু দুবছরের মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের সুযোগ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো ভালোভাবে দেখার কথা। সরবরাহ করার আগেই ঠিকঠাকভাবে দেখে নিলে এমন হতো না। কেন এমন গাফিলতি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের স্টোর রুম সূত্রে জানা যায়, ওসেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি অস্ত্রোপচারের রোগী আসে। এ জন্য প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজারটি সুতার প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট ঠিকাদার কোম্পানির মাধ্যমে এসব সুতা কেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী, বছর শেষে প্রতিবার মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা, ওষুধ, গ্লাভসসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ ধ্বংস করার কথা। কিন্তু হাসপাতালটিতে গত ছয় বছরেও তা হয়নি।
গত ২০ জানুয়ারি অভিযোগের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্র সমন্বয়ক হাসপাতালে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের বিষয়টি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। শুধু সুতা নয়, রোগীকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ানোর প্রমাণও পান তারা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহার নিয়ে ভয়াবহ তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ওসেকে দুটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ওসেক অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) নার্স ইনচার্জ ছিলেন ইসরাত জাহান। অন্যদিকে ক্যাজুয়ালটি ওটির প্রধান ছিলেন নার্স মো. খোরশেদ আলম (সেতু)। এর মধ্যে নতুন সরবরাহ করা দীর্ঘমেয়াদি সুতা বিক্রি করে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে।
ওসেকের একাধিক নার্স আমার দেশকে জানান, ‘ক্যাজুয়ালটি ওটিতে মারাত্মক আহতদের অস্ত্রোপচার হয়। খোরশেদ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওসেকের দুটি ওটিই নিয়ন্ত্রণ করতেন। চিকিৎসকরা সেলাই করার কথা থাকলেও তিন শিফটে তিনজন ওয়ার্ডবয় দিয়ে সেলাই করানো হতো, এখনো হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানেন; কিন্তু ব্যবস্থা নেন না।’
তারা বলেন, ‘২০২৩ সালে ব্যবহৃত সুতার ইস্যু হয় ২২ সালে, একইভাবে ২০২৪ সালে যা ব্যবহার হয়েছে, তা ইস্যু করা হয়েছে ২০২৩ সালে। তাহলে গত বছর চলতি বছরের সুতার ইস্যু ও সরবরাহ হয়ে থাকলে সেসব সুতা কোথায়? যেহেতু কেউ দেখে না, সুতার গায়েও সরকারি লেখা থাকে না, সে সুযোগে বাইরে বহু সুতা বিক্রি করে দেন খোরশেদ আলম। আর পুরোনো সুতা দিয়ে সেলাই করা হচ্ছে। এতে রোগীরা মারাত্মক সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রতিদিন শত শত আহত রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে, যার অধিকাংশ সেলাই হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ সুতায়।’
নানা অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি খোরশেদ আলমকে সুনামগঞ্জে বদলি করা হয়। তবে নানা কায়দায় সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জে, পরে রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) বদলি নেন তিনি। দুই মাসের ব্যবধানে এসব বদলির পেছনে নিজেকে বিএনপির সক্রিয় নেতা বলে পরিচয় দেন খোরশেদ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে খোরশেদ আলমের মুঠোফোনে দুদিনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা ব্যবহারের বিষয়ে ওসেক ওটির ইনচার্জ ইসরাত জাহান আমার দেশকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দেড় বছরে আমি কোনো সুতা স্টোর থেকে সরবরাহ করিনি। সব ধরনের সুতা খোরশেদ আলম সরবরাহ ও তদারকি করতেন। কাজেই মেয়াদোত্তীর্ণ সুতা কেন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি তিনিই বলতে পারবেন।’
সেবা তত্ত্বাবধায়ক শাহনেওয়াজ পারভীন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আমরা কেবল সেবা দিই। তারা তদন্ত করুক, দায়ীরা বেরিয়ে আসবে।’
দায় এড়িয়ে যান ছয় মাস আগে যোগদান করা আবাসিক সার্জন ডা. আহমেদ কবির চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন নার্স ইনচার্জরা। আমি স্বাক্ষর দিই, কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ সরবরাহ করেছে কি না, সেগুলো আমার দেখার দায়িত্ব নয়।’
শুধু সুতা নয়, ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ ও সরঞ্জামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার তদারকি ছয় বছর ধরে হয় না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের স্টোর অফিসার রফিকুল ইসলাম। আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই ওষুধ, সুতাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণের মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছরই মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা উপকরণ ব্যবহার তদারকি ও মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ ধ্বংস করার কথা।
কিন্তু ২০১৮ সালের পর তা আর হয়নি। এগুলো করতে নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে (ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার) চিঠি দিতে হয়, দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় বাস্তবায়ন হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ যে সুতা ও ওষুধ ব্যবহার হয়েছে, তা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টেন্ডারে কেনা।’
পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, ‘ঘটনা জানার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে প্রতিটি বিভাগে আলাদা ইনচার্জ রয়েছেন, ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা পরিচালকের দায় হতে পারে না। তবে পরিচালক হিসেবে একেবারে আমিও এড়াতে পারি না। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।’ ছয় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা উপকরণ ধ্বংস না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কনডেমনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বাইরে পড়ে থাকা মালামাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে টেকনিক্যাল জিনিসগুলো দেখা হবে। কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর আমার দেশকে বলেন, ‘ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
২১ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে