রমজানে এবার ভারতীয় পণ্যের দাপট থাকবে না খাতুনগঞ্জে

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ২৭

রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিবছর পণ্যের বড় অংশই আমদানি করা হতো ভারত থেকে। একটি বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকত ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।

বিজ্ঞাপন

এ সুযোগে নানা কারসাজিতে বিভিন্ন পণ্যের কৃত্তিম সংকট তৈরি করে ফায়দা লুটত ভারতীয় ব্যবসায়ী ও সরকার-সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির আমদানিকারকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যৌথ সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন পর এবার বাজারে সেই প্রভাব নেই।

এবার রমজানে পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে আশা করছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা। জুলাই বিপ্লবে সরকার পতনের পর ভারতের পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, চায়না, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে ঝুঁকেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের এলসি (ঋণপত্র) খোলার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তৃতীয় দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। পাইপলাইনে আছে আরও পণ্য।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের উদ্যোগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর তাই বন্দরে ঝামেলা ছাড়া বার্থিং দেওয়া হচ্ছে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খালাসও দেওয়া হচ্ছে নিত্যপণ্য।

ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই রমজানের পণ্য আসতে শুরু করেছে খাতুনগঞ্জের গুদামে। আমদানির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এ বছর আগের যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি পণ্য আসবে বাজারে। তাই বড় ধরনের কারসাজি না হলে দাম থাকবে হাতের নাগালে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা এবং চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৩ টাকায়। প্রতি কেজি খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। এক কেজি মটর ডালের দাম ৫৫ টাকা। সাদা মটর বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।

এছাড়া বর্তমানে মুগ ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা। রমজানের শীর্ষ চাহিদাসম্পন্ন নিত্যপণ্যের নাম সয়াবিন তেল। প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ৫৫০ টাকায়। আর প্রতি মণ পাম তেলে বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার টাকা করে। প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৩৩০ টাকা দরে। কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ১১৬ টাকা।

রমজান মাসজুড়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে চিনি ও ছোলার। চাহিদার কথা চিন্তা করে আমদানিকারকরা প্রয়োজনীয় চিনি আমদানির প্রক্রিয়া শেষ করেছেন অনেক আগেই। ৮০ হাজার টন ছোলা আমদানির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও এসেছে প্রচুর পরিমাণে ছোলা।

রমজানে সাদা মটর, মসুর ডাল, ভোজ্যতেল, চিড়া ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে খেজুরের শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই এবার দাম সহনশীল থাকবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

খাতুনগঞ্জ ডাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান বাদশা জানান, আগে এস আলম, সিটি, বসুন্ধরা, মেঘনা গ্রুপের মতো ৬-৭টি বড় গ্রুপই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। গত দুবছর ধরে তো ডলার সংকটের কথা বলে ছোট আকারের ব্যবসায়ীদের আমদানি করতেই দিত না বিগত সরকার।

এবার সেই সিন্ডিকেট নেই। ডলারের দাম একটু বাড়তি ও কিছুটা সংকট থাকলেও ছোট-বড় সব ধরনের আমদানিকারকই আমদানি করতে পারছে; ফলে পণ্যের সংকট হওয়ার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। তবে রমজানের আগে থেকেই বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে সরকারকে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্য আমদানির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সব পণ্যের বুকিং রেট কিছুটা বেড়েছে। এরপরও সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে পারলে বাজারে পণ্যের কোনো সংকট দেখা দেবে না।

বাজারে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ছোলা, মটর ডাল, মসুর ডাল, খেসারি ডাল ও চিনির কোনো ঘাটতি নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর দোকান-গুদামে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। গত বছরের অবিক্রীত পণ্যও রয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তরিক সরকার। সরকারের নির্দেশে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজগুলো জলসীমায় আসামাত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং দেওয়া হচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গে কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পণ্য খালাস দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সম্পাদনা :আলী হোসেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত