সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মিশনই বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার। বন্দরের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-কে দুবাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।
পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীই টার্মিনালটিকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০২০ সালে দু’দেশের সরকার পর্যায়ের বৈঠকে সে সময়ের নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বা পিসিটি, গাজীপুরের ধীরাশ্রম আইসিডি ও ডিজিটাল টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ ও অপারেশনের আগ্রহ প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড উক্ত তিনটি প্রকল্পের জন্য আগ্রহী বলে জানায় দেশটি।
কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেই চিঠিকে অগ্রাহ্য করে পিপিপি পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ছাড়াই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়েকে। ২০২৪ সালের ১০ জুন ডামি নির্বাচনের আগে পিসিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেড সী গেটওয়ের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ায়ও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
দুবাই সরকারের আনুষ্ঠানিক চিঠি প্রথমে অগ্রাহ্য করলেও তিন বছর পর একরকম উপযাচক হয়েই এনসিটিকে ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। হঠাৎ সরকারের এই ইউটার্ন মনোভাবে প্রশ্ন ওঠে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
বন্দরে খবর রটে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাবেক স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেনের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠে দুবাইয়ে। সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি তদন্তও শুরু করে। জামাইয়ের মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে শাশুড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম চলে আসার শঙ্কা থেকেই এনসিটি-কে দিয়ে দেওয়ার শর্তে দুবাইয়ের রাষ্ট্রীয় টার্মিনাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশ। যার সমঝোতা করেন সালমান এফ রহমান।
পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব (প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি) এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পিপিপি অফিসের সিইও ড. মো. মুশফিকুর রহমান মিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তখনকার অ্যাম্বাসেডর আবু জাফর। ২০২৩ সালের ১২ জুন পিপিপি প্ল্যাটফর্মের বৈঠকে পিপিপি অফিসের সিইও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব মোস্তফা কামাল এনসিটিকে দুবাইভিত্তিক টার্মিনাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বিষয়টি মিটিং নোটসে সংযুক্ত করে।
প্রতিযোগিতা এড়াতে টেন্ডারের পরিবর্তে পিপিপি
২০১৯ সালে একবার এনসিটিকে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে সময় দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই টেন্ডার আর আলোর মুখ দেখেনি তৎকালীন সরকারের নির্দেশে। টেন্ডার আহবান করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে বলেই পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতির আবিষ্কার করে আওয়ামী লীগ সরকার, যার মাধ্যমে কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায়ই বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বছরে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা সম্পন্ন এই টার্মিনালটি গত বছরের জুন মাস থেকে অপারেশন করছে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়ে। দৈনিক এক হাজার ৩৬৯ টিউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একদিনে দুইশর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারেনি গ্লোবাল এই প্রতিষ্ঠানটি। যদিও রেড সী গেটওয়ের দাবি আধুনিক যন্ত্রাংশ সংযুক্ত হলে শিগগির গতি পাবে অপারেশনাল কাজে।
বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চেয়ারম্যান পরিবর্তন
২০২০ সাল থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বা পিসিটিতে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়েকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর এই দেশবিরোধী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে ‘কেবিনেট কমিটি অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স’ নামের একটি সংসদীয় কমিটিও করে পতিত সরকার। মন্ত্রণালয় ও বন্দরের বেশির ভাগ শীর্ষ কর্মকর্তা রাজি না থাকা সত্ত্বেও তাদের বাধ্য করা হয় এই প্রক্রিয়ার সহযোগী হতে।
২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রক্রিয়ায় বন্দর ও দেশের ক্ষতি হবে উল্লেখ করে এ ধরনের চুক্তি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।
এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে আস্থাভাজন নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা একসময়ের র্যাবের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান করে পাঠানো হয়। সরকার পতনের পর বন্দর থেকে গিয়ে র্যাবের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি।
বন্দর বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, ২০২২ সাল পর্যন্ত এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না সরকারের। হঠাৎ এই প্রক্রিয়া কেন শুরু হলো তা বোধগম্য নয়।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, মূলত বিদেশি কোম্পানিকে সামনে রেখে পতিত সরকারের একটি পক্ষ লুটেপুটে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। নইলে একটি টার্মিনাল স্মুথলি চলা অবস্থায় বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। এমন দেশবিরোধী পরিকল্পনা এখনো চলমান থাকাটা দুঃখজনক। তার মতে, বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে দীর্ঘদিন টেন্ডার ছাড়া কাজ করে যেসব প্রতিষ্ঠান মনোপলি ব্যবসা করছিল তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা সরকারের পলিসি মেকাররা ঠিক করবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে গ্লোবাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে যে মনোপলি ব্যবসা হচ্ছে তা বন্ধ হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মিশনই বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার। বন্দরের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-কে দুবাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।
পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীই টার্মিনালটিকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০২০ সালে দু’দেশের সরকার পর্যায়ের বৈঠকে সে সময়ের নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বা পিসিটি, গাজীপুরের ধীরাশ্রম আইসিডি ও ডিজিটাল টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ ও অপারেশনের আগ্রহ প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড উক্ত তিনটি প্রকল্পের জন্য আগ্রহী বলে জানায় দেশটি।
কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেই চিঠিকে অগ্রাহ্য করে পিপিপি পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ছাড়াই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়েকে। ২০২৪ সালের ১০ জুন ডামি নির্বাচনের আগে পিসিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেড সী গেটওয়ের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ায়ও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
দুবাই সরকারের আনুষ্ঠানিক চিঠি প্রথমে অগ্রাহ্য করলেও তিন বছর পর একরকম উপযাচক হয়েই এনসিটিকে ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। হঠাৎ সরকারের এই ইউটার্ন মনোভাবে প্রশ্ন ওঠে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
বন্দরে খবর রটে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাবেক স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেনের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠে দুবাইয়ে। সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি তদন্তও শুরু করে। জামাইয়ের মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে শাশুড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম চলে আসার শঙ্কা থেকেই এনসিটি-কে দিয়ে দেওয়ার শর্তে দুবাইয়ের রাষ্ট্রীয় টার্মিনাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশ। যার সমঝোতা করেন সালমান এফ রহমান।
পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব (প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি) এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পিপিপি অফিসের সিইও ড. মো. মুশফিকুর রহমান মিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তখনকার অ্যাম্বাসেডর আবু জাফর। ২০২৩ সালের ১২ জুন পিপিপি প্ল্যাটফর্মের বৈঠকে পিপিপি অফিসের সিইও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব মোস্তফা কামাল এনসিটিকে দুবাইভিত্তিক টার্মিনাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বিষয়টি মিটিং নোটসে সংযুক্ত করে।
প্রতিযোগিতা এড়াতে টেন্ডারের পরিবর্তে পিপিপি
২০১৯ সালে একবার এনসিটিকে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে সময় দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই টেন্ডার আর আলোর মুখ দেখেনি তৎকালীন সরকারের নির্দেশে। টেন্ডার আহবান করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে বলেই পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতির আবিষ্কার করে আওয়ামী লীগ সরকার, যার মাধ্যমে কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায়ই বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বছরে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা সম্পন্ন এই টার্মিনালটি গত বছরের জুন মাস থেকে অপারেশন করছে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়ে। দৈনিক এক হাজার ৩৬৯ টিউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একদিনে দুইশর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারেনি গ্লোবাল এই প্রতিষ্ঠানটি। যদিও রেড সী গেটওয়ের দাবি আধুনিক যন্ত্রাংশ সংযুক্ত হলে শিগগির গতি পাবে অপারেশনাল কাজে।
বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চেয়ারম্যান পরিবর্তন
২০২০ সাল থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বা পিসিটিতে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়েকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর এই দেশবিরোধী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে ‘কেবিনেট কমিটি অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স’ নামের একটি সংসদীয় কমিটিও করে পতিত সরকার। মন্ত্রণালয় ও বন্দরের বেশির ভাগ শীর্ষ কর্মকর্তা রাজি না থাকা সত্ত্বেও তাদের বাধ্য করা হয় এই প্রক্রিয়ার সহযোগী হতে।
২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রক্রিয়ায় বন্দর ও দেশের ক্ষতি হবে উল্লেখ করে এ ধরনের চুক্তি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।
এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে আস্থাভাজন নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা একসময়ের র্যাবের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান করে পাঠানো হয়। সরকার পতনের পর বন্দর থেকে গিয়ে র্যাবের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি।
বন্দর বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, ২০২২ সাল পর্যন্ত এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না সরকারের। হঠাৎ এই প্রক্রিয়া কেন শুরু হলো তা বোধগম্য নয়।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী জানান, মূলত বিদেশি কোম্পানিকে সামনে রেখে পতিত সরকারের একটি পক্ষ লুটেপুটে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। নইলে একটি টার্মিনাল স্মুথলি চলা অবস্থায় বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। এমন দেশবিরোধী পরিকল্পনা এখনো চলমান থাকাটা দুঃখজনক। তার মতে, বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে দীর্ঘদিন টেন্ডার ছাড়া কাজ করে যেসব প্রতিষ্ঠান মনোপলি ব্যবসা করছিল তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা সরকারের পলিসি মেকাররা ঠিক করবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে গ্লোবাল অপারেটর প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে যে মনোপলি ব্যবসা হচ্ছে তা বন্ধ হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৬ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে