ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে ইসি

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ১৯
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৩০

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর কোনো সংসদ সদস্য কেউ খেলাপি থাকতে পারবেন না। এ নিয়মের ব্যত্যয় হলে তিনি পদে থাকায় অযোগ্য হবেন। ইসি স্বপ্রণোদিত হয়ে শুনানির মাধ্যমে আসনটি শূন্য করবে।

আগে কেউ ঋণখেলাপি হয়ে প্রার্থী হলে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ঋণ পুনঃতফসিল করে প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হতেন। এরপর খেলাপি হলেও ইসি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন না।

বিজ্ঞাপন

শুধু ঋণখেলাপি সংক্রান্ত বিধান না, গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও) আরো ১৫টি ধারা ও উপধারা সংযোজন-বিয়োজনের চিন্তা করছে এএমএম নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনা করছে ইসির নির্বাচন আইন সংশোধন-সংক্রান্ত কমিটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে আইনে রূপান্তরের জন্য শিগগিরই সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

প্রস্তাবিত আইনের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক পাসের নিচে নয়, এক প্রার্থীকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনসমর্থন প্রমাণ দেওয়া, সর্বোচ্চ দুটি আসনে একজনের প্রার্থী হওয়া ও আইনশৃঙ্খলার সজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরকে (বিএনসিসি) যুক্ত করা। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার দেশ’র কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ রাজনৈতিক দল ও সরকারের জন্য সুরক্ষা কবচ। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন এমপি বিল কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তে নিজ দলের বিপক্ষে সংসদে কথা বলেন না এবং ভোটও দেন না। যদি কেউ দলের বিপক্ষে ভোট দেন, সেটা সংসদীয় ভাষায় ‘ফ্লোর ক্রসিং’ বলা হয়। এ অপরাধে সংশ্লিষ্ট এমপির পদ শূন্য হয়। দলের অনুরোধে সংসদের স্পিকার পদ শূন্যের জন্য ইসিতে পাঠান। ইসি শুনানি করে পদটি শূন্য করেন। এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনে উপ-নির্বাচন হয়। নতুন আইনে, একজন এমপি ঋণখেলাপি হলে তার পদটি সরাসরি শূন্য করতে পারবে ইসি। এ ক্ষমতা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঋণখেলাপি সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় ইসি বলছে, ইদানীং সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অনেক ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পদের অপব্যবহার করে নিজস্ব ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের ঋণ নেন এবং একপর্যায়ে ঋণখেলাপি হন। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও ঋণ নিয়ে তা পরিশোধে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। অনেক সংসদ সদস্য কর্মকালীন সময়ে ঋণখেলাপি হলেও সংবিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি কেসও ইসিতে পাঠানোর নজির নেই। এ ছাড়া আরপিওতেও কোনো বিধানও যু্ক্ত করা হয়নি। আর এ কারণে যে মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সংবিধানে যে অনুচ্ছেদ প্রণয়ন করা হয়েছিল তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদে নতুন একটি দফা (৮) সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ আমার দেশকে বলেন, প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত ঋণখেলাপিদের এমপি হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে নতুন একটি ধারা সংযোজন করার চিন্তা করছি। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি এমপি হওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, কিন্তু সে ঋণখেলাপি না। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদের কোনো এক সময়ে ঋণখেলাপি হলে তিনি এমপি পদে থাকার অযোগ্য হবেন। আমরা এমন একটি বিধানের খসড়া তৈরি করছি; চূড়ান্ত হওয়ার পর আপনাদের জানানো হবে।’

আরো উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে, ব্যালটে ‘না ভোট’ ফেরানো। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করা। ইসি তার ব্যাখ্যায় বলেছে, একমাত্র বৈধ প্রার্থী হিসেবে কেউ বিনা ভোটে নির্বাচিত হলে জনমতের কোনো প্রতিফলন হয় না। বরং পদ্ধতিগত সুবিধা নিয়ে বিনা ভোটেই কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে যায়। সেই ব্যবস্থা রোধ করতে ‘না’ ভোটের বিধান সংযোজন করে জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

ইসি জানায়, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে দুটির বেশি নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রার্থী হতে পারবে না। অষ্টম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত পাঁচটিতে এবং নবম সংসদ থেকে তিনটিতে পারতেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, উপনির্বাচনের সংখ্যা কমিয়ে সাধারণ নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য দুটির অধিক নির্বাচনি এলাকার জন্য প্রার্থী না হওয়ার বিধান রাখা প্রয়োজন।

আরপিওতে এমপি হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাসের নিচে না হওয়ার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বর্তমানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে স্নাতক পাস হতে হয়। একজন সংসদ সদস্য দেশের আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। ফলে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি থাকা প্রয়োজন এবং তা স্নাতক পাসের নিচে হওয়া উচিত নয়।

এ ছাড়া সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করা, ডামি প্রার্থী ঠেকাতে নির্বাচন জামানত ২০ হাজার এবং নির্বাচনি ফি ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা, প্রার্থীদের হলফনামা জনসম্মুখে প্রকাশ করা, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে রেঞ্জের ডিআইজি শব্দাবলি যুক্ত করা, অনলাইনে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংযোজন করা, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় নির্বাচন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত