ইউপি চেয়ারম্যান থেকে যশোরের সংসদ সদস্য
আহসান কবীর, যশোর অফিস
বাবা নগেন্দ্রনাথ সাহা ওরফে নগেন সাহা পেশায় ছিলেন একজন পান চাষি। নিজের বরজে উৎপাদিত পান তিনিই বিক্রি করতেন হাটে। সেই নগেন সাহার ছেলে রণজিৎ রায় এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। নিজে ও পরিবার-সদস্যরা চড়েন দামি গাড়িতে, কিনেছেন অন্তত দশটি বাড়ি, চারটি ফ্ল্যাট। আওয়ামী লীগ সরকারের অবাধ লুণ্ঠনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান রণজিৎ। ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শেষাবধি তিন দফা সংসদ সদস্য পদে থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অবৈধ টাকা উপার্জন করেন রণজিত। ক্রমেই আর্থিক উন্নতি হতে থাকা রণজিৎ টিনের ছাপড়া ছেড়ে উঠে আসেন শহরের ভাড়া বাড়িতে। এরপর একের পর এক দেশে-বিদেশে কিনতে থাকেন বিলাসবহুল বাড়ি, ফ্ল্যাট।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মানুষের মূল পেশা পানের ব্যবসা। এই গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ সাহা ওরফে নগেন সাহারও ছিল একই কারবার। ১৯৬০ সালের কিছু আগে নগেন ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান পাশের বাঘারপাড়া উপজেলার বর্ধিষ্ণু ব্যবসা কেন্দ্র খাজুরায়। সেখানে ফুটপাতে বসে পৈত্রিক কারবার পান বিক্রি করতেন। বিক্রি ভালো হওয়ায় সেখানেই পানের পাশাপাশি অন্যান্য পসরাও বিক্রি শুরু করেন। একপর্যায়ে পাশে চিত্রা নদীর ধারে একটি টিনের ঘর তোলেন। ফুটপাতের দোকান স্থানান্তরিত হয় এই ঘরে। খাজুরা এলাকার প্রবীণরা এই দৃশ্য চোখে দেখেছেন।
নগেন সাহা এখন পৃথিবীতে নেই। তার সন্তান রণজিৎ কুমার সাহা (অজ্ঞাত কারণে রণজিৎ রায় নামধারণকারী) এখন কত শত কোটি টাকার মালিক, সেই হিসাব করা দুরুহ। মাত্র এক পুরুষে বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে এই বিপুল সম্পত্তি অর্জন করা দুঃসাধ্য। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শেষে সংসদ সদস্য হয়ে তিনি গড়েছেন টাকার পাহাড়।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য এখন আত্মগোপনে আছেন। দুদক তার ও তার নিকটজনদের সম্পদের অনুসন্ধান করছে। এই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী- ছেলে যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই আদেশও দিয়েছেন আদালত। কিন্তু নানা সূত্রের দাবি, আদালতের আদেশের আগেই দেশ ছেড়েছেন সাবেক এই এমপি।
রণজিৎ রায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত তার স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাজুরা, বাঘারপাড়া, যশোর শহর, নওয়াপাড়া, চৌগাছা, ঢাকা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে তার বাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট। অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে এমন দশটি বাড়ি, চারটি ফ্ল্যাট; যেগুলো হয় রণজিৎ অথবা তার নিকটজনদের নামে কেনা। এর বাইরেও তার সম্পত্তি ছড়িয়ে আছে দেশে-বিদেশে। বিশেষ করে বাঘারপাড়া উপজেলাজুড়ে তার শত শত বিঘা জমি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রেল রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি বাড়ি। একটি তিন তলা, অপরটি পাঁচতলা। শহরের কেন্দ্রস্থলে লোহাপট্টিতে কিনেছেন দুটি বাড়ি। যশোর নতুন উপশহরে বহুতল ভবনে তার রয়েছে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
নির্বাচনী এলাকা বাঘারপাড়ায় আছে তার বিপুল সম্পত্তি। এর মধ্যে বাঘারপাড়া বাজারের কেন্দ্রস্থলে দোহাকুলা মন্দিরের সামনে রয়েছে রণজিতের বাড়ি। উপজেলার খাজুরা বাজারে বাবা নগেন সাহার সেই টিনের চালার পাশে এখন চারতলা ভবন, যার একটি ফ্লোর আন্ডারগ্রাউন্ডে। এই ভবনে কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত। খাজুরা বাজার জামে মসজিদের পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণ করছিলেন মার্কেট। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।
শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে কালিবাড়ীর কাছে পাশাপাশি দুটি ভবন রণজিতের। এর একটি দোতলা ও একটি তিনতলা। এখানকার চারতলা ভবনেই রয়েছে রণজিৎ রায়ের ছেলে বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজিব রায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নিয়তি ট্রেডার্স’। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় রণজিতের স্ত্রীর নামে নামকরণ করা এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িটিতে।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, রাজধানীর মিরপুরে দারুসসালাম রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়া দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে দুটি বাড়ি। এর একটি কলকাতার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা সল্টলেকে, অন্যটি এই নগরীসংলগ্ন শহর বারাসাতে।
যশোর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রণজিৎ রায়ের নামে কত বিঘা জমি আছে, তার হিসাব মেলানো ভার। বাঘারপাড়ার বাসিন্দা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাষ্য, এই উপজেলায় সম্ভবত এমন কোনো মৌজা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে রণজিত রায়ের জমি নেই। আর চৌগাছায় রয়েছে কয়েকশ বিঘা জমি। পাশের জেলা খুলনার ফুলতলা উপজেলায় রয়েছে তার বিশাল মাছের ঘের।
গেল নির্বাচনে রণজিৎ রায় নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দেন, সেখানে রাজধানীর পূর্বাচলে তার দশ কাঠার প্লট রয়েছে বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর শহরের বেজপাড়া পিয়ারীমোহন সড়কে কিনেছেন জমি। শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে এলবি টাওয়ারের সামনে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে দুই দফায় কিনেছেন দামি জমি।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে রণজিৎ রায় তার যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেন, সাকুল্যে তার দাম ছিল পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তার সম্পত্তি বেড়ে চার কোটি ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। ব্যবসা, বাড়ি ভাড়া, কৃষি ও সংসদ সদস্যের বেতন হিসেবে তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে, রণজিতের রয়েছে শত শত কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি। এর বাইরে নগদ টাকা ও সোনার গয়না কী পরিমাণে আছে তার হিসাব নেই।
সংসদ সদস্য থাকাকালে নির্বাচনী এলাকার কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে গেলে রণজিৎকে হয় সোনার নৌকা অথবা তার স্ত্রী নিয়তিকে সোনার চেইন দেওয়া এক প্রকার বাধ্যতামূলক ছিল। রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রায় ও ছেলে রাজিব রায়ের নামে জনতা ব্যাংক যশোরের প্রধান শাখায় দুটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে। হাসিনা রেজিম পতনের আগে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রণজিতের বিতণ্ডাও হয়। সেদিন রণজিতের ছেলে রাজিব জানিয়েছিলেন, তার লকারে ৩০০ থেকে ৪০০ ভরি সোনার গয়না আছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মতে, লকারে রক্ষিত ওই পরিবারের সোনার গয়না ৫০০ ভরিরও বেশি।
২০২৪ সালের নির্বাচনে রণজিৎ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা রণজিৎ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকেননি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে রণজিতের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তাকে প্রার্থী করা হয়নি বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
অভিযোগের বিষয়ে রণজিৎ রায় বা তার স্ত্রী-সন্তানদের বক্তব্য জানা যায়নি। তারা ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন।
এই বিষয়ে দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমীনকে প্রশ্ন করলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী বিপুল ফারাজী বলেন, ‘দলের সুসময়ে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছি। এখন দুঃসময়ে তেমনভাবে বলা উচিত না।’
তবে ‘বাঘারপাড়া, অভয়নগর, যশোর, ঢাকা এমনকি পাশের দেশে রণজিৎ রায়ের প্রচুর সম্পদ-সম্পত্তি আছে এ কথা সবাই জানে’, মন্তব্য করেন বিপুল।
প্রশ্ন করলে যশোর-৪ আসনে রণজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘আপনাদের কাছে যে হিসাব আছে, তা রণজিতের সম্পত্তির সামান্য অংশমাত্র। বেপরোয়া লুটপাটের টাকার বড় অংশই ভারতে পাচার হয়ে গেছে। ভারতে তার সুপার মার্কেট পর্যন্ত আছে।’
বাবা নগেন্দ্রনাথ সাহা ওরফে নগেন সাহা পেশায় ছিলেন একজন পান চাষি। নিজের বরজে উৎপাদিত পান তিনিই বিক্রি করতেন হাটে। সেই নগেন সাহার ছেলে রণজিৎ রায় এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। নিজে ও পরিবার-সদস্যরা চড়েন দামি গাড়িতে, কিনেছেন অন্তত দশটি বাড়ি, চারটি ফ্ল্যাট। আওয়ামী লীগ সরকারের অবাধ লুণ্ঠনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান রণজিৎ। ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শেষাবধি তিন দফা সংসদ সদস্য পদে থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অবৈধ টাকা উপার্জন করেন রণজিত। ক্রমেই আর্থিক উন্নতি হতে থাকা রণজিৎ টিনের ছাপড়া ছেড়ে উঠে আসেন শহরের ভাড়া বাড়িতে। এরপর একের পর এক দেশে-বিদেশে কিনতে থাকেন বিলাসবহুল বাড়ি, ফ্ল্যাট।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মানুষের মূল পেশা পানের ব্যবসা। এই গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ সাহা ওরফে নগেন সাহারও ছিল একই কারবার। ১৯৬০ সালের কিছু আগে নগেন ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান পাশের বাঘারপাড়া উপজেলার বর্ধিষ্ণু ব্যবসা কেন্দ্র খাজুরায়। সেখানে ফুটপাতে বসে পৈত্রিক কারবার পান বিক্রি করতেন। বিক্রি ভালো হওয়ায় সেখানেই পানের পাশাপাশি অন্যান্য পসরাও বিক্রি শুরু করেন। একপর্যায়ে পাশে চিত্রা নদীর ধারে একটি টিনের ঘর তোলেন। ফুটপাতের দোকান স্থানান্তরিত হয় এই ঘরে। খাজুরা এলাকার প্রবীণরা এই দৃশ্য চোখে দেখেছেন।
নগেন সাহা এখন পৃথিবীতে নেই। তার সন্তান রণজিৎ কুমার সাহা (অজ্ঞাত কারণে রণজিৎ রায় নামধারণকারী) এখন কত শত কোটি টাকার মালিক, সেই হিসাব করা দুরুহ। মাত্র এক পুরুষে বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে এই বিপুল সম্পত্তি অর্জন করা দুঃসাধ্য। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শেষে সংসদ সদস্য হয়ে তিনি গড়েছেন টাকার পাহাড়।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য এখন আত্মগোপনে আছেন। দুদক তার ও তার নিকটজনদের সম্পদের অনুসন্ধান করছে। এই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী- ছেলে যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই আদেশও দিয়েছেন আদালত। কিন্তু নানা সূত্রের দাবি, আদালতের আদেশের আগেই দেশ ছেড়েছেন সাবেক এই এমপি।
রণজিৎ রায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত তার স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাজুরা, বাঘারপাড়া, যশোর শহর, নওয়াপাড়া, চৌগাছা, ঢাকা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে তার বাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট। অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে এমন দশটি বাড়ি, চারটি ফ্ল্যাট; যেগুলো হয় রণজিৎ অথবা তার নিকটজনদের নামে কেনা। এর বাইরেও তার সম্পত্তি ছড়িয়ে আছে দেশে-বিদেশে। বিশেষ করে বাঘারপাড়া উপজেলাজুড়ে তার শত শত বিঘা জমি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রেল রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি বাড়ি। একটি তিন তলা, অপরটি পাঁচতলা। শহরের কেন্দ্রস্থলে লোহাপট্টিতে কিনেছেন দুটি বাড়ি। যশোর নতুন উপশহরে বহুতল ভবনে তার রয়েছে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
নির্বাচনী এলাকা বাঘারপাড়ায় আছে তার বিপুল সম্পত্তি। এর মধ্যে বাঘারপাড়া বাজারের কেন্দ্রস্থলে দোহাকুলা মন্দিরের সামনে রয়েছে রণজিতের বাড়ি। উপজেলার খাজুরা বাজারে বাবা নগেন সাহার সেই টিনের চালার পাশে এখন চারতলা ভবন, যার একটি ফ্লোর আন্ডারগ্রাউন্ডে। এই ভবনে কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত। খাজুরা বাজার জামে মসজিদের পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণ করছিলেন মার্কেট। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।
শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে কালিবাড়ীর কাছে পাশাপাশি দুটি ভবন রণজিতের। এর একটি দোতলা ও একটি তিনতলা। এখানকার চারতলা ভবনেই রয়েছে রণজিৎ রায়ের ছেলে বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজিব রায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নিয়তি ট্রেডার্স’। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় রণজিতের স্ত্রীর নামে নামকরণ করা এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িটিতে।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, রাজধানীর মিরপুরে দারুসসালাম রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়া দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে দুটি বাড়ি। এর একটি কলকাতার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা সল্টলেকে, অন্যটি এই নগরীসংলগ্ন শহর বারাসাতে।
যশোর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রণজিৎ রায়ের নামে কত বিঘা জমি আছে, তার হিসাব মেলানো ভার। বাঘারপাড়ার বাসিন্দা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাষ্য, এই উপজেলায় সম্ভবত এমন কোনো মৌজা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে রণজিত রায়ের জমি নেই। আর চৌগাছায় রয়েছে কয়েকশ বিঘা জমি। পাশের জেলা খুলনার ফুলতলা উপজেলায় রয়েছে তার বিশাল মাছের ঘের।
গেল নির্বাচনে রণজিৎ রায় নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দেন, সেখানে রাজধানীর পূর্বাচলে তার দশ কাঠার প্লট রয়েছে বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর শহরের বেজপাড়া পিয়ারীমোহন সড়কে কিনেছেন জমি। শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে এলবি টাওয়ারের সামনে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে দুই দফায় কিনেছেন দামি জমি।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে রণজিৎ রায় তার যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেন, সাকুল্যে তার দাম ছিল পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তার সম্পত্তি বেড়ে চার কোটি ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। ব্যবসা, বাড়ি ভাড়া, কৃষি ও সংসদ সদস্যের বেতন হিসেবে তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে, রণজিতের রয়েছে শত শত কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি। এর বাইরে নগদ টাকা ও সোনার গয়না কী পরিমাণে আছে তার হিসাব নেই।
সংসদ সদস্য থাকাকালে নির্বাচনী এলাকার কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে গেলে রণজিৎকে হয় সোনার নৌকা অথবা তার স্ত্রী নিয়তিকে সোনার চেইন দেওয়া এক প্রকার বাধ্যতামূলক ছিল। রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রায় ও ছেলে রাজিব রায়ের নামে জনতা ব্যাংক যশোরের প্রধান শাখায় দুটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে। হাসিনা রেজিম পতনের আগে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রণজিতের বিতণ্ডাও হয়। সেদিন রণজিতের ছেলে রাজিব জানিয়েছিলেন, তার লকারে ৩০০ থেকে ৪০০ ভরি সোনার গয়না আছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মতে, লকারে রক্ষিত ওই পরিবারের সোনার গয়না ৫০০ ভরিরও বেশি।
২০২৪ সালের নির্বাচনে রণজিৎ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা রণজিৎ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকেননি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে রণজিতের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তাকে প্রার্থী করা হয়নি বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
অভিযোগের বিষয়ে রণজিৎ রায় বা তার স্ত্রী-সন্তানদের বক্তব্য জানা যায়নি। তারা ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন।
এই বিষয়ে দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল আমীনকে প্রশ্ন করলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী বিপুল ফারাজী বলেন, ‘দলের সুসময়ে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছি। এখন দুঃসময়ে তেমনভাবে বলা উচিত না।’
তবে ‘বাঘারপাড়া, অভয়নগর, যশোর, ঢাকা এমনকি পাশের দেশে রণজিৎ রায়ের প্রচুর সম্পদ-সম্পত্তি আছে এ কথা সবাই জানে’, মন্তব্য করেন বিপুল।
প্রশ্ন করলে যশোর-৪ আসনে রণজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘আপনাদের কাছে যে হিসাব আছে, তা রণজিতের সম্পত্তির সামান্য অংশমাত্র। বেপরোয়া লুটপাটের টাকার বড় অংশই ভারতে পাচার হয়ে গেছে। ভারতে তার সুপার মার্কেট পর্যন্ত আছে।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
২১ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে