সুদিন ফিরছে পাটচাষিদের, মনপ্রতি দাম বেড়েছে হাজার টাকা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ২০

চলতি মৌসুমের শুরুতেই পাটের বাজার বেশ চাঙ্গা। নতুন পাট বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি তিন হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকায়। গত মৌসুমে প্রতি মণ নতুন পাট বিক্রি হয় দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকায়। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা বেশি দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। পাটের দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাড়তি দাম পেয়ে পাটচাষিরা খুশি। তারা বলছেন, পাটের সঠিক দাম পেলে দিন দিন পাটের আবাদ বাড়বে। ময়মনসিংহ ত্রিশালের বীররামপুর গ্রামের পাটচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, দাম বাড়ায় আমরা খুশি, তবে পাটের দাম মণপ্রতি অন্তত পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

একই এলাকার পাট ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই পাটের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, দাম আরো বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) মহাপরিচালক দপ্তরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিশ্বজিৎ কুন্ডু বলেন, দীর্ঘদিন পর আবারো পাটচাষিদের সুদিন ফিরছে। বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাত বিশেষ করে তোষা পাটের চাষ ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাটকে আরো লাভজনক করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাটগাছ পানিতে পচিয়ে পাট মাড়াই মৌসুম চলছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আষাঢ়-শ্রাবণেও উত্তরের অনেক জেলায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে আছে খাল-বিল। বিকল্প উপায়ে পাট জাগ দেওয়ার কথা ভাবছেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, বৃষ্টি হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। যদি বৃষ্টি না হয় বিকল্প পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে হবে। সে বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) সূত্র জানায়, পাটের আবাদ ও উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯২ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেন কৃষকরা, এতে উৎপাদন হয় ১৪ দশমিক ২৭ লাখ টন।

আর চলতি মৌসুমে পাট চাষ হয়েছে ৭ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৭ লাখ টন। চলতি মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় পাটের আবাদ ও উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে হয় ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরো কমে হয় ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের পলিসির কারণে এ খাত পিছিয়ে ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুনরায় এর ওপর জোর দিয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের শেষের দিকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে দেশীয় বাজারেও পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে।

এদিকে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল আগের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছে সরকার। প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে এখন সরকার আগের মতোই দুই টাকা হিসাবে নেবে। আর পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে নেবে ১০ পয়সা।

৩০ বছর পর গত এপ্রিল মাসে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে সাত টাকা এবং পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ৫০ পয়সা মাশুল নির্ধারণ করে। সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আগের মতোই সরকারি মাশুল ঠিক করা হয়।

পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। ওই অর্থবছরে এক হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি এসেছে ভারত থেকে।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, কাঁচা পাট হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। একসময় পাটপণ্যের বড় বাজার ছিল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর দেশটি অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় সেখানে পাট সুতা রপ্তানি পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমেছে।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত