৫ আগস্টের পরবর্তী অবস্থা

রাজশাহী থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ০৯
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৩

৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয়-পরবর্তী রাজশাহী অঞ্চল থেকে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী অবৈধ উপায়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাতারাতি দেশত্যাগ করলেও ভারতে এসে কেউই নেই অর্থ সংকটে। পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভারতে আগে থেকে গড়ে তোলা সম্পদ ও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া টাকায় বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

জনরোষ থেকে বাঁচতে নেতাকর্মীরা দ্রুত সময়ে কাছাকাছি গোপন স্থানে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। অনেকে বাসাবাড়িতে না ফিরে এক কাপড়েই পদ্মা পাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকা পদ্মার চরাঞ্চলে চলে যান। পদ্মা চরাঞ্চলের আবু যর গিফারী বলেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকেই অপরিচিত মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীও এদের অনেককে আটকে রেখে মোটা টাকার দেন দরবারের মাধ্যমে সীমান্ত পার করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের অনেক এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যেতে পেরেছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার সিটি হাটের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, রাজশাহীর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে জমিদারি হালেই আছে। বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যবসাই তারা ঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থের বিনিময়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রভাবশালীদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দিতে একাধিক চক্র কাজ করেছে। আশ্রয়প্রার্থীর আর্থিক সংগতি ও সামাজিক পরিচিতি বুঝে টাকা নেয় চক্রটি। বিএসএফ এরই মধ্যে চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও সূত্র জানায়।

জানা গেছে, প্রভাবশালীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১ লাখ রুপি করে দর হাঁকানো হয়। এ ছাড়া তারা যতদিন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকবেন, ততদিন বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকতে মাসে ৫০ থেকে ১ লাখ রুপি করে দিতে হচ্ছে। গত ৭ আগস্ট বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয়-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিছু দুর্নীতিবাজ ও দুষ্কৃতকারী ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নগরীর কুমারপাড়া দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। তিনি তখনো জানতেন না শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতের পথে রয়েছেন।

কয়েকজন নেতাকর্মী টিভি চ্যানেলের খবর দেখে তাকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। সূত্রগুলো জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় লিটন প্রথমে রাজশাহী উপশহরের নিরাপদ এলাকার ভবনে আশ্রয় নেন। সেই রাতেই বিশেষ ব্যবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তপথে ভারতে চলে যান। লিটনের সহধর্মিণী শাহীন আকতার রেণি ও ছোট মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়া জামান ৪ আগস্ট ভারতে চলে যান।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ৫ আগস্ট বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকায় নিজ বাসভবনে ছিলেন। এরপর তাকে প্রকাশ্যে আর দেখা যায়নি। তবে অনেকে বলছেন, তারা সীমান্তের দালালচক্রের মাধ্যমে একে একে ভারতে চলে যায়। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা ৫ আগস্ট রাতে দালালচক্রের মাধ্যমে লালমনিরহাট সীমান্তপথে ভারতে চলে যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়।

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনিসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই রাজশাহী সীমান্তপথে ভারতে গেছেন। নওগাঁ-১ এলাকার সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ৬ আগস্ট কোনো একসময় হিলি সীমান্তপথে ভারতে চলে গেছেন বলে জানা যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচারের মাধ্যমে নিয়ে আসার অভিযোগে ভারতের কয়েকটি জায়গায় দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, সে দেশের ১৭টি স্থানের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ১২টি জায়গায় চলছে ইডির অভিযান। ইডির অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত