মাহবুব হোসেন সারমাত, গোপালগঞ্জ
আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর ভয়াবহ হামলার চিত্র আবার মনে করিয়ে দিয়েছে। একই কায়দায় তাণ্ডব চালিয়ে পণ্ড করেছে তরুণ জুলাইযোদ্ধাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গোপালগঞ্জ জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি। গতকাল বুধবার দুপুরে এ হামলা চালানো হয়।
জানা গেছে, জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সেখানে দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। তারা ককটেলের মুহুর্মুহু বিস্ফোরণও ঘটায়। এতে সেখানে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পার্শ্ববর্তী আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। তাদের সঙ্গে প্রাণ বাঁচাতে আদালত চত্বরে যান এনসিপি নেতারাও।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অতিরিক্তি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন। এতে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় হামলাকারীদের। এতে তারা পিছু হটে। কিছুক্ষণের মধ্যে সমাবেশ শুরু হলে দুপুর ২টায় মঞ্চে ওঠেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রমুখ।
সেনা-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪
এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশস্থলে দফায় দফায় হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে চার হামলাকারী নিহত হয় এবং তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ শেষে মাদারীপুরে যাওয়ার পথে শহরের লঞ্চঘাট, পৌরসভার সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় এ নিহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—জেলা শহরের থানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫), রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের ইমন (১৬) ও শহরের পোস্ট অফিস রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৮)।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে ২০০ মিটার দূরে লঞ্চঘাট এলাকায় যান। তাদের সামনে নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যরা। তাদের সবার পথরোধ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা। এ সময় দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তারা। ছোড়ে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়।
পুলিশ ও সেনাসদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ সময় এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢুকে সেখানে আশ্রয় নেন। এ খবর পেয়ে হামলাকারী সেখানেও দফায় দফায় হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় গুলি, ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে প্রকম্পিত হয় গোটা গোপালগঞ্জ শহর। কাঁদানে গ্যাসের সাদা ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ।
স্থানীয় এনসিপি নেতাকর্মীরা জানান, সমাবেশস্থলের চেয়ারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রাস্তায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলে প্রচুর গোলাগুলি হয় । সমাবেশস্থলসহ শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়া হয় । পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
হামলার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তারা সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখেন পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
কারফিউ জারি
এদিকে বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের নির্দেশে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রন্টি পোদ্দার। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
হামলার ছক আঁকা হয় আগেই
এনসিপি গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়ার পর হামলার ছক আঁকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা তৈরি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হয়। এনসিপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে হামলা চালানো হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে। সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। গতকাল সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশে লিঙ্ক রোডে সদর উপজেলার খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ওই সড়কের কংশুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসানের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ওই স্থানে সড়ক অবরোধ করে।
সামরিক যানে গোপালগঞ্জ ত্যাগ এনসিপি নেতাদের
থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের করে সেনাবাহিনী। পরে তারা খুলনায় পৌঁছান।
বিকালে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, এনসিপি নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা পড়েছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।
জেলা কারাগারে হামলা
বিকাল ৪টার দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। তবে কারারক্ষী ও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কারাগারের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয় হামলাকারীরা। পরে তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ।
কঠিন জবাবের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জের পদযাত্রা ও সমাবেশে ‘মুজিববাদীরা’ বাধা দিয়েছে। তার জবাব দেওয়া হবে। ‘মুজিববাদীরা’ আজ বাধা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে। সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছিলাম। আজ আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই আমরা এর জবাব দেব ইনশাল্লাহ।
নাহিদ বলেন, ‘যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, নতুন বাংলাদেশের পক্ষে; তাদের দায়িত্ব নিতে হবে—এই গোপালগঞ্জ যেন আর মুজিববাদীদের কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারে। পুলিশ যতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, নিজেদের জেলার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব, বাংলাদেশকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের নিতে হবে। যেমন আমরা গণঅভ্যুত্থানে নিয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, গোপালগঞ্জ নামের কারণে ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। কিন্তু আমরা গোপালগঞ্জকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে দেব না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে ‘মুজিববাদীরা’, গোপালগঞ্জকেও কলুষিত করেছে তারা। সেই গোপালগঞ্জকে আমরা উদ্ধার করব এবং সমুন্নত করব। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক সম্পদ আওয়ামী লীগ দখল করেছে। তাদের সঙ্গে বেইনসাফ করেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করব।
আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর ভয়াবহ হামলার চিত্র আবার মনে করিয়ে দিয়েছে। একই কায়দায় তাণ্ডব চালিয়ে পণ্ড করেছে তরুণ জুলাইযোদ্ধাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গোপালগঞ্জ জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি। গতকাল বুধবার দুপুরে এ হামলা চালানো হয়।
জানা গেছে, জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সেখানে দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। তারা ককটেলের মুহুর্মুহু বিস্ফোরণও ঘটায়। এতে সেখানে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পার্শ্ববর্তী আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। তাদের সঙ্গে প্রাণ বাঁচাতে আদালত চত্বরে যান এনসিপি নেতারাও।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অতিরিক্তি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন। এতে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় হামলাকারীদের। এতে তারা পিছু হটে। কিছুক্ষণের মধ্যে সমাবেশ শুরু হলে দুপুর ২টায় মঞ্চে ওঠেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রমুখ।
সেনা-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪
এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশস্থলে দফায় দফায় হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে চার হামলাকারী নিহত হয় এবং তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ শেষে মাদারীপুরে যাওয়ার পথে শহরের লঞ্চঘাট, পৌরসভার সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, এপিবিএন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় এ নিহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—জেলা শহরের থানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫), রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের ইমন (১৬) ও শহরের পোস্ট অফিস রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৮)।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে ২০০ মিটার দূরে লঞ্চঘাট এলাকায় যান। তাদের সামনে নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যরা। তাদের সবার পথরোধ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা। এ সময় দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তারা। ছোড়ে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়।
পুলিশ ও সেনাসদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ সময় এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢুকে সেখানে আশ্রয় নেন। এ খবর পেয়ে হামলাকারী সেখানেও দফায় দফায় হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় গুলি, ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে প্রকম্পিত হয় গোটা গোপালগঞ্জ শহর। কাঁদানে গ্যাসের সাদা ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ।
স্থানীয় এনসিপি নেতাকর্মীরা জানান, সমাবেশস্থলের চেয়ারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রাস্তায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলে প্রচুর গোলাগুলি হয় । সমাবেশস্থলসহ শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়া হয় । পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
হামলার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তারা সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখেন পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
কারফিউ জারি
এদিকে বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের নির্দেশে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রন্টি পোদ্দার। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
হামলার ছক আঁকা হয় আগেই
এনসিপি গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়ার পর হামলার ছক আঁকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা তৈরি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হয়। এনসিপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে হামলা চালানো হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে। সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। গতকাল সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশে লিঙ্ক রোডে সদর উপজেলার খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ওই সড়কের কংশুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসানের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ওই স্থানে সড়ক অবরোধ করে।
সামরিক যানে গোপালগঞ্জ ত্যাগ এনসিপি নেতাদের
থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের করে সেনাবাহিনী। পরে তারা খুলনায় পৌঁছান।
বিকালে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, এনসিপি নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা পড়েছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।
জেলা কারাগারে হামলা
বিকাল ৪টার দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। তবে কারারক্ষী ও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কারাগারের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয় হামলাকারীরা। পরে তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ।
কঠিন জবাবের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জের পদযাত্রা ও সমাবেশে ‘মুজিববাদীরা’ বাধা দিয়েছে। তার জবাব দেওয়া হবে। ‘মুজিববাদীরা’ আজ বাধা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে। সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছিলাম। আজ আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই আমরা এর জবাব দেব ইনশাল্লাহ।
নাহিদ বলেন, ‘যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, নতুন বাংলাদেশের পক্ষে; তাদের দায়িত্ব নিতে হবে—এই গোপালগঞ্জ যেন আর মুজিববাদীদের কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারে। পুলিশ যতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, নিজেদের জেলার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব, বাংলাদেশকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের নিতে হবে। যেমন আমরা গণঅভ্যুত্থানে নিয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, গোপালগঞ্জ নামের কারণে ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। কিন্তু আমরা গোপালগঞ্জকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে দেব না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে ‘মুজিববাদীরা’, গোপালগঞ্জকেও কলুষিত করেছে তারা। সেই গোপালগঞ্জকে আমরা উদ্ধার করব এবং সমুন্নত করব। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক সম্পদ আওয়ামী লীগ দখল করেছে। তাদের সঙ্গে বেইনসাফ করেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করব।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৭ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে