রাজশাহীতে মিলছে না সার, কৃত্রিম সংকট তৈরি

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩৭

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তায় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রাজশাহীর কৃষকরা। চলতি রবি মৌসুমে সারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে বলে অনেকের অভিযোগ। কৃষকদের মতে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো গুদামে সার সরবরাহ না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় সারের অভাবে রবিশষ্য চাষ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে আলু চাষিরা সারের অভাবে জমি তৈরি ও বীজ রোপণ করতে পারছেন না। ফলে অনেকে এবার আলু চাষ না করে সরিষাসহ অন্য ফসলের চাষ করছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ৫০ কেজির এক বস্তা ডিএপি সার চাষি পর্যায়ে সরকারি দাম ১০৫০ টাকা। এ সার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকায়। আর এক বস্তা টিএসপির সরকারি দাম ১২৫০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত।

সারের চাহিদা ও সরবরাহের পরিমাণ

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, চলতি মাসে (ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলায় সারের চাহিদা ছিল ডিএপি ১৭ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন। সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আট হাজার ১২৪ মেট্রিক টন।

তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সার জেলার ২১৮ জন ডিলারের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে ডিএপি তিন হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন, এমওপি দুই হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন ও টিএসপি এক হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন।

গত রোববার মজুত ছিল ডিএপি ২২১ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩০ মেট্রিক টন ও টিএসপি ৪১৭ মেট্রিক টন। বর্তমানে মজুত না থাকায় বরাদ্দকৃত সার ডিলারদের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উম্মে ছালমা আরও বলেন, চলতি আলু আবাদে চাহিদা অনুযায়ী সার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাহিদার কয়েকগুণ কম বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে যেটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে ডিলাররা ঠিকঠাকমতো সেটি কৃষকদের দিচ্ছে কি না তা আমরা নিবিড় তদারকির মাধ্যমে মনিটরিং করছি।

সার বিক্রেতাদের বক্তব্য

মোহনপুর ইউনিয়নের বিএডিসির সার ডিলার মেসার্স হিমেল ট্রেডার্স। চলতি মাসে এ ডিলার বরাদ্দ পেয়েছে ডিএপি সার ৪৫ মেট্রিক টন, এমওপি ২৮ ও টিএসপি ২০ মেট্রিক টন। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর এ ডিলার সরবরাহ পেয়েছে ডিএপি ৭, এমওসি ৮ ও টিএসপি ৫ মেট্রিক টন করে। এরপর গত ১৫ দিনে কোনো সার তিনি সরবরাহ পাননি।

হিমেল ট্রেডার্সের হুমায়ুন কবির বলেন, গুদামে সার না থাকায় তারা সরবরাহ পাচ্ছে না। যে কৃষকের ছয় বস্তা সার প্রয়োজন তাকে এক বস্তা দিয়ে ম্যানেজ করতে হচ্ছে। এতে ডিলাররা কৃষকের রোষানলেও পড়েছেন, বলেন এই ডিলার।

বাগমারার তালতলি বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইব্রাহীম হোসেন জানান, গত শুক্রবার তিনি একজন ডিলারের কাছ থেকে সার কিনেছেন। তার কাছে দাম ধরা হয়েছে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ডিএপি ১৩৫০ টাকা, টিএসপি ১৬৫০ টাকা ও এমওপি ১২০০ টাকা। তার গাড়ি ভাড়া লেগেছে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা। তিনি বিক্রি করছেন গোটা বস্তা গোটা ১০০ টাকা লাভে এবং খোলা ১৫০ টাকা লাভে।

সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা

মোহনপুরের কেশরহাট এলাকার কৃষক রায়হান আলী জানান, গত বছর ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এবার সার সংকটে ৩ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দিয়েও সার পাওয়া যায়নি। ফলে বাকি জমিগুলোতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়েক গুণ কম বরাদ্দ পাচ্ছেন, এই বলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।

বিএডিসি ডিলার হাসান আলী জানান, সরবরাহ ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেশি পরিমাণে সার নিতে চাপ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সার নিয়ে এবার বিপাকে রয়েছে ডিলাররা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, গোডাউনে যদি সার থাকে তাহলে কৃষকরা বরাদ্দ অনুযায়ী সার পাই। কিন্তু গোডাউনেই তো সার নেই। ডিলাররা পাবে কেমনে আর কৃষকদের দেবে কীভাবে।

সম্পাদনা: লাবিন

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত