রংপুরে নারী ফুটবল নিয়ে অস্থিরতা
বাদশাহ ওসমানী, রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবলারদের একটি প্রীতিম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় সেদিন ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। আর এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক নেতা এবং রংপুরে বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলার সভাপতি আশরাফ আলী। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতেও নারীদের ফুটবল ম্যাচের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, নারীদের এ ফুটবল ম্যাচ বন্ধের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছেন আশরাফ আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ উপজেলার বুড়ির পুকুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৬ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবলারদের নিয়ে একটি প্রীতিম্যাচের আয়োজনের পরিকল্পনা করেন। খবরটি জানতে পেরে আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আশরাফ আলী ইত্তেহাদুল ওলামার সাধারণ সম্পাদক দাবি করে ম্যাচ বন্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এর আগে তিনি আয়োজক কমিটিকে হুমকি দিয়ে মাইকিং করে খেলাটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। পরে তিনি মসজিদে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতকে দোষারোপ করে এলাকার সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলেন। স্থানীয়রা ম্যাচের আয়োজক কমিটিকে সহযোগিতা না করে বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়। পরে তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম ঘটনার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে ওই সময় তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। আশরাফ আলীর মারমুখী ভূমিকা দেখে জেলা প্রশাসক ৬ ফেব্রুয়ারি খেলার স্থানসহ আশপাশের আধা কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
ম্যাচটি হতে না পারার কারণে চারদিকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সয়ার ইউনিয়ন নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে আশরাফ আলীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, খেলা বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ এলাকা নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক খবর প্রকাশ হওয়া শুরু হয়। এতে আশরাফ আলীর ওপর ক্ষেপে যায় এলাকার লোকজন। কারণ তার কারণেই পত্রপত্রিকায় শান্তিপূর্ণ এ এলাকা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার কারণেই আয়োজক কমিটির সম্মানহানি হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুণ্ণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হলরুমে আলোচনা শেষে একই মাসের ২০ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবল ম্যাচটি শান্তিপূর্ণভাবে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর নারী ফুটবলারদের স্বর্গরাজ্য হলেও ওলামা লীগের সাবেক নেতা আশরাফ আলীর কারণে দেশজুড়ে এ এলাকা নিয়ে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে গেছে।
তারাগঞ্জসহ রংপুরের কয়েকটি উপজেলা ঘুরে জানা যায়, এখান থেকে জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলেছেন ৭ জন। বর্তমানে জাতীয় দলে রয়েছেন ২ জন ও জাতীয় রাগবী দলে খেলছেন ৩ জন। এছাড়া ফুটবল খেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন রংপুর-দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১০ জন নারী ফুটবলার। তারা এখন স্বাবলম্বী। তাদের দেখে বাকি মেয়েরাও ফুটবল খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের আগ্রহের কারণে রংপুর সদর উপজেলার পালি চড়ায় একটি স্টেডিয়ামও করা হয়েছে।
নারী ফুটবলের ম্যাচটি ঠেকাতে ইত্তেহাদুল ওলামা নামের একটি সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করেছেন আশরাফ আলী। এ বিষয়ে সংগঠনটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আমার দেশকে জানান, আশরাফ আলী নিজেকে জাহির করতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি বিভিন্ন কমিটি তৈরি করেন। সেসব কমিটির সভাপতি অথবা সেক্রেটারি হন তিনি। এরপর তৈরি করেন সংগঠনের প্যাড ও সিল। পরে তা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন নিবেদন করেন।
সংগঠনটির এসব সদস্য আরো জানান, ইত্তেহাদুল ওলামার কার্যক্রম তারাগঞ্জে তেমন একটি নেই। বর্তমানে আশরাফ আলী ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলা সভাপতি। আগে তিনি আওয়ামী লীগের ওলামা লীগ করতেন। নারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজক কমিটি তার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তিনি ধর্মীয় অনুভূতির আড়ালে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে তোলেন। তার কারণেই এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চান এবং শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তারাগঞ্জ বুড়িরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নারী ফুটবলের ম্যাচটি না হতে দেওয়ার জন্য চাপ দেন তারাগঞ্জ বড় মসজিদের ইমাম, সাবেক ওলামা লীগ নেতা এবং বর্তমানে ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি আশরাফ আলী। তিনি এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করেন, ফলে খেলাটি বন্ধ হয়ে যায়। তার কারণে এলাকায় এখনো নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
সয়ার ইউনিয়নের বিএনপি নেতা সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং নিজেদের ফায়দা হাসিল করার জন্য দেশবিরোধী একটি চক্র এখনো সক্রিয়। সেই চক্রটির একটি অংশ আশরাফ আলীর ওপর ভর করে আমাদের এলাকার নারী ফুটবল খেলাটিকে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আশরাফ আলী আগে থেকে ওলামা লীগ করার কারণে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সহায়তা করে এলাকার দুর্নাম করেছেন। তবে আগামীতে আশরাফ আলী কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
একই এলাকার আবদুল মোতালেব ও মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, নারীদের ফুটবল খেলা হলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ এখন দেশের সব জায়গায় নারীরা নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছেন। আশা করি পরে খেলা হলে কেউ বাধা দেবে না। আর আশরাফ আলী ওলামা লীগ করায় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে পছন্দ করছেন না। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ায় ছোট বিষয়কে বড় করে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য শুধু রংপুর নয়, সারা দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছেন।
সেই ফুটবল ম্যাচের আয়োজক কমিটির প্রধান সয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ বলেন, ওইদিনের ম্যাচে গাজীপুর ও জয়পুরহাটের নারী দলের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের সাবেক নেতার কারণে ওইদিন খেলাটি হতে পারেনি। তিনি এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন। এতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ২০ দিন পর একই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তারাগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জামায়াত নেতা ডক্টর আবদুস সালাম জানান, নারী ফুটবল খেলা বাংলাদেশের স্বীকৃত। খেলা বাধা দিয়ে বা কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। তবে এই খেলাকে কেন্দ্র করে একটি মহল নিজের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করেছিল শুনেছি।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা ও থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম জানান, আশরাফ আলী নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিল। তবে ওই সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। পরে শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু মাঝখানে বিভিন্ন মিডিয়ায় নেগেটিভ সংবাদ প্রচার হলে এলাকাসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
তারা আরো জানান, আশরাফ আলী কেন এমন করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের নেতা ছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি শান্তিপূর্ণ এলাকাটিতে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিলেন।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর উত্তরাঞ্চলের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল আমার দেশকে বলেন, তারাগঞ্জে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তাতে খেলা কোনো বিষয় ছিল না। ওখানে রাজনীতিটাই ছিল আসল।
বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় কমিটির ট্রাস্টি সাবেক এমপি এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, নারী ফুটবল খেলা আমাদের দেশে অহরহ সবখানেই হচ্ছে। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং উপজাতি মেয়েরা অংশগ্রহণ করছেন। তারা ভারতে এবং সাফজয়ী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। সয়ার ইউনিয়নে যেভাবে আওয়ামী দোসররা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল, এলাকার লোকজন তা সফল হতে দেয়নি। আগামীতে এরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক কখনো তা আমরা কামনা করি না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক তোহা হোসাইন আমার দেশকে জানান, খেলাধুলা ছেলেমেয়েদের শারীরিক বিকাশে অনেক ভূমিকা পালন করে। খেলা নিয়ে কোনো রাজনীতি বা উন্মাদনা সৃষ্টি হলে শিশু-কিশোরদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। নারী অথবা পুরুষের খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে সুদৃষ্টি রেখে পরিচালনা করাই ভালো।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, ওই সময় নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরে ইত্তেহাদুল ওলামার প্যাডে আবেদন করে খেলাটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। ওই সময় খেলাটি বন্ধ হলেও আবার একই মাসে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আশরাফ আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি ওলামা লীগ নেতা ছিলেন কি না। জবাবে জানান, চাপে পড়ে ওলামা লীগ করেছেন তিনি।
যদিও আশরাফ আলী ওলামা লীগের কোন পদে ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি তারাগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে ভবিষ্যতেও নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজন হলে তা ঠেকানোর আন্দোলন করবেন বলে জানান ওলামা লীগের সাবেক এই নেতা। তিনি বলেন, আবার ফুটবল খেলার আয়োজন করা হলে আমি আন্দোলন করব।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবলারদের একটি প্রীতিম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় সেদিন ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। আর এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক নেতা এবং রংপুরে বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলার সভাপতি আশরাফ আলী। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতেও নারীদের ফুটবল ম্যাচের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, নারীদের এ ফুটবল ম্যাচ বন্ধের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছেন আশরাফ আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ উপজেলার বুড়ির পুকুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৬ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবলারদের নিয়ে একটি প্রীতিম্যাচের আয়োজনের পরিকল্পনা করেন। খবরটি জানতে পেরে আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আশরাফ আলী ইত্তেহাদুল ওলামার সাধারণ সম্পাদক দাবি করে ম্যাচ বন্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এর আগে তিনি আয়োজক কমিটিকে হুমকি দিয়ে মাইকিং করে খেলাটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। পরে তিনি মসজিদে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতকে দোষারোপ করে এলাকার সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলেন। স্থানীয়রা ম্যাচের আয়োজক কমিটিকে সহযোগিতা না করে বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়। পরে তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম ঘটনার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে ওই সময় তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। আশরাফ আলীর মারমুখী ভূমিকা দেখে জেলা প্রশাসক ৬ ফেব্রুয়ারি খেলার স্থানসহ আশপাশের আধা কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
ম্যাচটি হতে না পারার কারণে চারদিকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সয়ার ইউনিয়ন নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে আশরাফ আলীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, খেলা বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ এলাকা নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক খবর প্রকাশ হওয়া শুরু হয়। এতে আশরাফ আলীর ওপর ক্ষেপে যায় এলাকার লোকজন। কারণ তার কারণেই পত্রপত্রিকায় শান্তিপূর্ণ এ এলাকা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার কারণেই আয়োজক কমিটির সম্মানহানি হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুণ্ণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হলরুমে আলোচনা শেষে একই মাসের ২০ ফেব্রুয়ারি নারী ফুটবল ম্যাচটি শান্তিপূর্ণভাবে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর নারী ফুটবলারদের স্বর্গরাজ্য হলেও ওলামা লীগের সাবেক নেতা আশরাফ আলীর কারণে দেশজুড়ে এ এলাকা নিয়ে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে গেছে।
তারাগঞ্জসহ রংপুরের কয়েকটি উপজেলা ঘুরে জানা যায়, এখান থেকে জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলেছেন ৭ জন। বর্তমানে জাতীয় দলে রয়েছেন ২ জন ও জাতীয় রাগবী দলে খেলছেন ৩ জন। এছাড়া ফুটবল খেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন রংপুর-দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১০ জন নারী ফুটবলার। তারা এখন স্বাবলম্বী। তাদের দেখে বাকি মেয়েরাও ফুটবল খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের আগ্রহের কারণে রংপুর সদর উপজেলার পালি চড়ায় একটি স্টেডিয়ামও করা হয়েছে।
নারী ফুটবলের ম্যাচটি ঠেকাতে ইত্তেহাদুল ওলামা নামের একটি সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করেছেন আশরাফ আলী। এ বিষয়ে সংগঠনটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আমার দেশকে জানান, আশরাফ আলী নিজেকে জাহির করতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি বিভিন্ন কমিটি তৈরি করেন। সেসব কমিটির সভাপতি অথবা সেক্রেটারি হন তিনি। এরপর তৈরি করেন সংগঠনের প্যাড ও সিল। পরে তা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন নিবেদন করেন।
সংগঠনটির এসব সদস্য আরো জানান, ইত্তেহাদুল ওলামার কার্যক্রম তারাগঞ্জে তেমন একটি নেই। বর্তমানে আশরাফ আলী ইসলামী আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলা সভাপতি। আগে তিনি আওয়ামী লীগের ওলামা লীগ করতেন। নারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজক কমিটি তার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তিনি ধর্মীয় অনুভূতির আড়ালে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে তোলেন। তার কারণেই এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চান এবং শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তারাগঞ্জ বুড়িরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নারী ফুটবলের ম্যাচটি না হতে দেওয়ার জন্য চাপ দেন তারাগঞ্জ বড় মসজিদের ইমাম, সাবেক ওলামা লীগ নেতা এবং বর্তমানে ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি আশরাফ আলী। তিনি এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করেন, ফলে খেলাটি বন্ধ হয়ে যায়। তার কারণে এলাকায় এখনো নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
সয়ার ইউনিয়নের বিএনপি নেতা সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং নিজেদের ফায়দা হাসিল করার জন্য দেশবিরোধী একটি চক্র এখনো সক্রিয়। সেই চক্রটির একটি অংশ আশরাফ আলীর ওপর ভর করে আমাদের এলাকার নারী ফুটবল খেলাটিকে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আশরাফ আলী আগে থেকে ওলামা লীগ করার কারণে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সহায়তা করে এলাকার দুর্নাম করেছেন। তবে আগামীতে আশরাফ আলী কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
একই এলাকার আবদুল মোতালেব ও মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, নারীদের ফুটবল খেলা হলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ এখন দেশের সব জায়গায় নারীরা নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছেন। আশা করি পরে খেলা হলে কেউ বাধা দেবে না। আর আশরাফ আলী ওলামা লীগ করায় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে পছন্দ করছেন না। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ায় ছোট বিষয়কে বড় করে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য শুধু রংপুর নয়, সারা দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছেন।
সেই ফুটবল ম্যাচের আয়োজক কমিটির প্রধান সয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ বলেন, ওইদিনের ম্যাচে গাজীপুর ও জয়পুরহাটের নারী দলের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের সাবেক নেতার কারণে ওইদিন খেলাটি হতে পারেনি। তিনি এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন। এতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ২০ দিন পর একই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তারাগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জামায়াত নেতা ডক্টর আবদুস সালাম জানান, নারী ফুটবল খেলা বাংলাদেশের স্বীকৃত। খেলা বাধা দিয়ে বা কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। তবে এই খেলাকে কেন্দ্র করে একটি মহল নিজের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করেছিল শুনেছি।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা ও থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম জানান, আশরাফ আলী নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিল। তবে ওই সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। পরে শান্তিপূর্ণভাবে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু মাঝখানে বিভিন্ন মিডিয়ায় নেগেটিভ সংবাদ প্রচার হলে এলাকাসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
তারা আরো জানান, আশরাফ আলী কেন এমন করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের নেতা ছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি শান্তিপূর্ণ এলাকাটিতে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিলেন।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর উত্তরাঞ্চলের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল আমার দেশকে বলেন, তারাগঞ্জে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তাতে খেলা কোনো বিষয় ছিল না। ওখানে রাজনীতিটাই ছিল আসল।
বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় কমিটির ট্রাস্টি সাবেক এমপি এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, নারী ফুটবল খেলা আমাদের দেশে অহরহ সবখানেই হচ্ছে। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং উপজাতি মেয়েরা অংশগ্রহণ করছেন। তারা ভারতে এবং সাফজয়ী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। সয়ার ইউনিয়নে যেভাবে আওয়ামী দোসররা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল, এলাকার লোকজন তা সফল হতে দেয়নি। আগামীতে এরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক কখনো তা আমরা কামনা করি না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক তোহা হোসাইন আমার দেশকে জানান, খেলাধুলা ছেলেমেয়েদের শারীরিক বিকাশে অনেক ভূমিকা পালন করে। খেলা নিয়ে কোনো রাজনীতি বা উন্মাদনা সৃষ্টি হলে শিশু-কিশোরদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। নারী অথবা পুরুষের খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে সুদৃষ্টি রেখে পরিচালনা করাই ভালো।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, ওই সময় নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরে ইত্তেহাদুল ওলামার প্যাডে আবেদন করে খেলাটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। ওই সময় খেলাটি বন্ধ হলেও আবার একই মাসে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আশরাফ আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি ওলামা লীগ নেতা ছিলেন কি না। জবাবে জানান, চাপে পড়ে ওলামা লীগ করেছেন তিনি।
যদিও আশরাফ আলী ওলামা লীগের কোন পদে ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি তারাগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে ভবিষ্যতেও নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজন হলে তা ঠেকানোর আন্দোলন করবেন বলে জানান ওলামা লীগের সাবেক এই নেতা। তিনি বলেন, আবার ফুটবল খেলার আয়োজন করা হলে আমি আন্দোলন করব।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৪ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে