মাহমুদা ডলি
ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হলেও রাজধানীসহ সারা দেশে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাদক সাম্রাজ্য এখনো অক্ষত রয়েছে। কোথাও কোথাও শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও পুরো সাম্রাজ্য এখনো তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানাসহ চারপাশের অনেক এলাকায় মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছে। যেখান থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নেশাদ্রব্য সরবরাহ করা হয়।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার ও ভারত থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য দেশে আসছে স্থল ও নদীপথে। একদিকে নাফ ও গোমতী নদী; অন্যদিকে সুন্দরবন হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথকে মাদকের নিরাপদ নৌ-রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা আমার দেশকে বলেছেন, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছেন তারা। সে ক্ষেত্রে কোনো দলীয় পরিচয় দেওয়া ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। মাদক কারবারি যে-ই হোক, তাদের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, জনসমক্ষে বিক্রি করছেন মাদকদ্রব্য। গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে পাঁচটিরও বেশি সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
সূত্র জানায়, রাজধানীজুড়ে অন্তত ৬৫১ মাদক কারবারি সক্রিয় রয়েছেন। একেকজনের সঙ্গে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য মাদক বেচাকেনায় কাজ করছেন। কারবারিরা রাজধানীর ২৪৭ স্থানকে মাদক বিক্রির ‘হট স্পট’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আর মাদক কারবারে যাদের নাম উঠে এসেছে, তারা আওয়ামী লীগ শাসনামলে দাপটের সঙ্গে এই কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। বর্তমানেও তারাই বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নির্বিঘ্নে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পরিচয় পাল্টে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাব ও পুলিশের কাছে রাঘব বোয়ালদের তালিকা থাকলেও গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এর কারণ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা, পুলিশের মনোবল না থাকা, কারবারের সঙ্গে পুলিশ সোর্সের সম্পৃক্ততা এবং দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাতবদলসহ রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্রের সম্পৃক্ততা।
রাজধানীর মাদক সাম্রাজ্যে কারা কোথায় জড়িত
প্রায় দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ ও গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ডিলার ও রাঘব বোয়ালরা। তাদের অনেকের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় থাকলেও গ্রেপ্তার করা হয় না। বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, রাজধানীতে মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় হটস্পট হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে বসেই রাজধানীতে মাদকের কারবার ভাগ হয়; সিদ্ধান্ত হয় কোন স্পট কারা নিয়ন্ত্রণ করবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় যারা মাদকব্যবসা গত ১৫ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন যাত্রাবাড়ীতে সুমন, সবুজবাগে মো. ইব্রাহিম, মো. শিপন হোসেন; শাহজাহানপুরে মো. মশিউর রহমান; তেজগাঁও থানার রেলস্টেশনে মো. বশির হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম; শেরেবাংলা নগর থানায় স্বপন মিয়া, মো. সোহেল রানা; তেজগাঁও পশ্চিম নাখালপাড়ায় মো. আজীজুর রহমান, মো. রাজু ও মো. রফিকুল ইসলাম। মামুন চৌধুরী ওরফে মুন হাজারীবাগে, হুমায়ুন কবীর ওরফে গাজী কবীর ভাটারা এলাকায়, জয়নাল বাউনিয়া বটতলা এলাকায়, মো. রবিউল ইসলাম উত্তরা পশ্চিম, মো. মন্টু মিয়া কারওয়ান বাজার এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। যদিও এদের কোনো দলীয় পরিচয় সংস্থাগুলো প্রকাশ করতে চায়নি।
তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ‘মাদকের আখড়া’খ্যাত জায়গাগুলোর নাম ও নিয়ন্ত্রণকারীদের তালিকা।
যাত্রাবাড়ী থানা
যাত্রাবাড়ীতে মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন থানার অস্ত্র লুটের হোতা, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের বাস্তুহারা লীগের যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি মশিউর রহমান শাহিন, ওরফে ফর্মা শাহীন। কদিন আগে ধর্ষণচেষ্টা ও ডাকাতির মামলায় জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। থানার অস্ত্র লুটের হোতা ও চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত মাসুম ওরফে তিন ফুট মাসুম প্রকাশ্যে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আশরাফুল করিম মিন্টু যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি যুবদলের বিভিন্ন নেতার ছত্রছায়ায় থেকে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। কদিন আগে মাদকের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছিল। তার মাদক বিক্রি ও চাঁদার কালেকশন অফিস গোলাপবাগ মাঠের পশ্চিম দিকে গ্যালারি লাইনে।
যাত্রাবাড়ীতে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন পাভেল। তার ভাই ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের নেতা। ভাইয়ের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে নিজের ও বাবার অবৈধ কারবার। তাদের বাবা ‘ফেন্সি দেলোয়ার’ পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যবসা করছেন।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার বিভিন্ন অলিগলিতে মাদক সরবরাহ করছেন জাহাঙ্গীর আলম। আগে তিনি আওয়ামী লীগের মাসুম মোল্লার ক্যাডার ছিলেন। বর্তমানে ফাহিমের ক্যাডার। এ এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফাহিমের বিরুদ্ধে।
থানার অস্ত্র লুট করে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ডাকাতি করার অভিযোগ রয়েছে যাত্রাবাড়ীর ৫০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা ইমন সরদার ও ইমরানের বিরুদ্ধে। তাদের দুই ভাইয়ের ভিডিও এখনো ইউটিউবে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার আসামি তারা। বর্তমানে ইয়াবা কারবার চালু রেখেছেন এই দুই যুবলীগ নেতা।
কদমতলী থানা
কদমতলী থানা ও তার আশপাশে যারা মাদক বিক্রি করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ৫২ নম্বর মাদরাসা রোডে ডিলার দুলাল, মুরাদপুর উত্তরপাড়ায় মুকুল ও রাগা রুবেল, মেডিকেল রোডে নবুর ছেলে সানি, নোয়াখালী পট্টিতে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন দেলোয়ারের ছেলে শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার আসামি)। তার বাবা বিএনপি নেতা। সেই পরিচয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শুভ। এর আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন শুভ। এ ছাড়া মেডিকেল রোডে তাদের সহযোগী কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন অভি, কৈতর মাসুম, সায়েম মামুন, গালকাটা রাজন; মুরাদপুর বাঙ্গালপাড়ায় দেলু, মাথামোটা রনি ও বদনা রনি।
উত্তর মুরাদপুরে রয়েছেন ওহিদ, আমিন, ডেউয়া সুমন, কাউয়া রাজসন, রকিবুল ইসলাম ও সাইফুল। নোয়াখালী শিশু কবরস্থানে কাঙ্গালি আয়রন রতন এবং স্থানীয় পুলিশের সোর্সরা মাদক কারবার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াসিন, দুলাল, কালু, মজিবুর ও ক্যাবলা শাহজাহান।
শ্যামপুর থানা
৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক কারবার পরিচালনা করছেন তিন সহোদর শাহজাহান পিঙ্গল ভাণ্ডারি, রাসেল ভাণ্ডারি ও পলাশ ভাণ্ডারি। তারা কুখ্যাত ‘গাঞ্জা কামালের’ সহযোগী। গাঞ্জা কামাল ওরফে পিস্তল কামাল শীর্ষ সন্ত্রাসী সানাউল্লাহর সহযোগী, বর্তমানে পুরো ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক কারবারসহ সব অপরাধের মূল হোতা সানাউল্লাহ।
পোস্তগোলায় মামুন, ব্যাংক কলোনি আইজি গেটের ট্রাকস্ট্যান্ডের পেছনে ইয়াবার কারবার চালাচ্ছেন ‘পেশাদার খুনি’ মাইনু মশিউর রহমান কচি, ছাত্রলীগের শাকিল রানা ওরফে পিচ্চি রানা এবং ওই এলাকায় তার প্রায় অর্ধশত সহযোগী। এ ছাড়া পুরো শ্যামপুর ও পোস্তগোলা এলাকায় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ঝরনার ছেলে মামুন ও তার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন মান্নান, হাসান গাজী, সাইদুল, বিপু, ইকবাল মনোয়ার ও রফিক মল্লিক।
শ্যামপুরে একমাত্র ফ্যান্সি সম্রাট পুলিশের নাকের ডগায় আজিজিয়া হোটেলের পেছনে ফেন্সিডিলের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। হোটেলে প্রতিদিন পুলিশ আসে, নাস্তা খায় আর তাদের সামনেই চলে বেচাকেনা। জুরাইনের মাসুম, পোকার বাজারের পোকার ভাগ্নে ইমরান, আবেদ আলীর নাতি ইশান, কুদরতি খুদার ছেলে ওহিদ ও তার ছেলের সহযোগীরা ইয়াবার কারবারি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের টেগুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ সওদাগর মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। মোশাররফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদের বন্ধু ও সহযোগী। শাহীন বর্তমানে পলাতক থাকলেও মোশাররফ কেরানীগঞ্জে দাপটের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতার প্রকাশ্যে সাপোর্টের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোশাররফকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুরো দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের আখড়া বানিয়ে রেখেছেন এই মোশাররফ। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের তালিকায় তার নামে স্থানীয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অনেক রড, বালু ও ইট চুরির অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবার জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবেও তার নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায়। মোশাররফের সহযোগীরা হলেন বক্কর সওদাগর, ভাগ্নে শান্ত সওদাগর ওরফে মানু।
পল্লবী থানা
এই থানা এলাকায় ৫০টিরও বেশি হটস্পট রয়েছে, যেখানে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন জাকির হোসেন ওরফে সিস্টেম বাবু। তার রয়েছে প্রায় ৩০ জনের বেশি সহযোগী।
মিরপুর থানা
পুরো মিরপুর থানা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় যুবদলের বহিষ্কৃত পলাতক তিন ভাই। তারা হলেন- মফিজুর রহমান, মাইনু জামিল ও মশিউর রহমান। বর্তমানে ভারত ও নেপালে পলাতক থাকলেও তাদের প্রায় ৩০০ সহযোগী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ব্লকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। তিন ভাই আওয়ামী লীগের সময়ে সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের আশ্রয়ে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তারাও দেশ থেকে পালিয়ে যান।
মিরপুর-১২ নম্বরের পল্লবী অ্যাভিনিউ ফাইভে মজিবুর রহমান ওরফে ডিশ মজিবুরের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী রয়েছেন আরো ১০-১২ জন। আগে তারা স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার আশ্রয়ে থাকলেও বর্তমানে আক্তার সিন্ডিকেটের প্রধান আক্তারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। মিল্লাত ক্যাম্পে রয়েছেন সুমন ওরফে আল্লামা সুমন।
ওয়াপদা বিল্ডিংয়ে মাউরা রিয়াজ বিহারি ক্যাম্পে দিন-রাত পালা করে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
১১ নম্বর সেক্টরে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ে হেরোইন সম্রাট পৃথিবীর নেতৃত্বে পুরো ঢাকা শহরে মাদক সরবরাহ করা হয়। হেরোইনের ডিলার হিসেবে কাজ করছেন মোশতাক। এই মোশতাকের সঙ্গে রয়েছেন যুবদলের বহিষ্কৃত ওই তিন সহোদর। মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বড় মসজিদ এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় থানা যুবলীগ সভাপতি বাপ্পী চৌধুরী ও তার সৎভাই সজল। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মিলন।
বাউনিয়া বাঁধ ও ৫৪ নম্বর প্লট
বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশে পলাতক আব্বাসের প্রায় ২৫০ জনের একটি কিশোর গ্যাং মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া ৫৪ নম্বর প্লট আদর্শনগরে স্থানীয় যুবদল নেতা কালাচান ও তার সহযোগী শুটার রুবেল, মিরপুরের তিন সহোদরের জামিল গ্রুপের সোর্সরা এখানকার কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন রফিকুল ও রানা। ১২ নম্বরের শেষদিকে রয়েছেন সিরামিক রানা, শুটার জাকির, মিলন, হাবিব ও মামুনের সিন্ডিকেট। ১২ নম্বর ‘সি’ ব্লকে সুজন, রহমান, জীবনের সঙ্গে প্রায় ৩০ জনের সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।
১২ নম্বর জি ব্লক সাগুফতা
এখানকার অবৈধ মাদকের সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন দবির, আরিফরা। তাদের দলনেতা তিন সহোদরের একজন মশিউর। তারা শুধু মাদকই নয়; বরং ডাকাতি ও ছিনতাইচক্রের সঙ্গেও জড়িত। কালাচানও এই গ্রুপে রয়েছেন।
ভাষানটেক ও মিরপুর-৭
শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্বাসের সিন্ডিকেট ভাসানটেকে সক্রিয়। ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর শিকদার, নুর সালামরা এখানে মাদকসহ আধিপত্য বিস্তার করছেন। মিরপুর-৭ নম্বরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কিশোর গ্যাং দিয়ে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিশোর গ্যাং ছাড়াও রয়েছেন জহুরি বাবু, রওশন ও আরমান।
বিদেশে অর্থ পাচার করছেন শীর্ষ মাদক কারবারিরা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর সবচেয়ে বেশি শীর্ষ পর্যায়ের মাদক কারবারি রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন বয়সে তরুণ। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছেন মোট ৭২ জন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্প্রতি জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে অর্থও পাচার করছেন। তবে তালিকায় থাকা অন্তত ১০ শীর্ষ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।
তালিকার মধ্যে বর্তমানে আরো যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে মো. হানিফ ও দোলোয়ার হোসেন। কক্সবাজারের টেকনাফের নুরুল হক ভুট্টো, সিদ্দিক আহমেদ, শফিক আলম ওরফে শফিক, ফজর আলী, নুরুল কবির, চট্টগ্রামের শফি, ঢাকার আদাবরের নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর পূর্ব থানার পারুল, খুলনার শাহজাহান হাওলাদার ও পাবনার শাহীন আলম।
মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের তিন গডফাদারের প্রায় আট কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ও বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, অন্যদের সম্পত্তি ক্রোক করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
ডিএনসি সূত্র জানায়, আগে ইয়াবা চোরাচালানের মূল রুট ছিল মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফ। বর্তমানে এই রুটে বিজিবির টহল বাড়ায় চোরাকারবারিরা রুট পরিবর্তন করেছে। সাগরপথে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা। একইসঙ্গে যশোরের বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ও হেরোইন। এ ছাড়া আকাশপথেও মাদক আসার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে মাদকসহ ধরা পড়েছে একাধিক দেশি-বিদেশি নাগরিক। ডিএনসি বলছে, দেশে বর্তমানে হেরোইন, মরফিন, আইস পিলসহ ২৪ ধরনের মাদক বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ১১ ধরনের মাদক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে র্যাবের কঠোর অবস্থান রয়েছে। রাঘব বোয়ালদের ধরার ব্যাপারে আমাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ জন্য নতুন করে কোনো আইন তৈরিরও প্রয়োজন নেই। প্রচলিত আইনই যথেষ্ট।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন আমার দেশকে বলেন, মাদকব্যবসা একটি আন্তর্জাতিক ও জটিল নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে, তাই চ্যালেঞ্জ থাকে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আসামি জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়ায়। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলায় পুলিশ কাজ করছে।
রাজধানীর অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদক কারবারের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমডি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘মাদক কারবারে জড়িত যে-ই হোক, এমনকি কোনো দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তিকেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হলেও রাজধানীসহ সারা দেশে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাদক সাম্রাজ্য এখনো অক্ষত রয়েছে। কোথাও কোথাও শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও পুরো সাম্রাজ্য এখনো তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানাসহ চারপাশের অনেক এলাকায় মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছে। যেখান থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নেশাদ্রব্য সরবরাহ করা হয়।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার ও ভারত থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য দেশে আসছে স্থল ও নদীপথে। একদিকে নাফ ও গোমতী নদী; অন্যদিকে সুন্দরবন হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথকে মাদকের নিরাপদ নৌ-রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা আমার দেশকে বলেছেন, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছেন তারা। সে ক্ষেত্রে কোনো দলীয় পরিচয় দেওয়া ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। মাদক কারবারি যে-ই হোক, তাদের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, জনসমক্ষে বিক্রি করছেন মাদকদ্রব্য। গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে পাঁচটিরও বেশি সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
সূত্র জানায়, রাজধানীজুড়ে অন্তত ৬৫১ মাদক কারবারি সক্রিয় রয়েছেন। একেকজনের সঙ্গে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য মাদক বেচাকেনায় কাজ করছেন। কারবারিরা রাজধানীর ২৪৭ স্থানকে মাদক বিক্রির ‘হট স্পট’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আর মাদক কারবারে যাদের নাম উঠে এসেছে, তারা আওয়ামী লীগ শাসনামলে দাপটের সঙ্গে এই কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। বর্তমানেও তারাই বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নির্বিঘ্নে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পরিচয় পাল্টে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাব ও পুলিশের কাছে রাঘব বোয়ালদের তালিকা থাকলেও গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এর কারণ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা, পুলিশের মনোবল না থাকা, কারবারের সঙ্গে পুলিশ সোর্সের সম্পৃক্ততা এবং দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাতবদলসহ রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্রের সম্পৃক্ততা।
রাজধানীর মাদক সাম্রাজ্যে কারা কোথায় জড়িত
প্রায় দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ ও গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ডিলার ও রাঘব বোয়ালরা। তাদের অনেকের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় থাকলেও গ্রেপ্তার করা হয় না। বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, রাজধানীতে মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় হটস্পট হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে বসেই রাজধানীতে মাদকের কারবার ভাগ হয়; সিদ্ধান্ত হয় কোন স্পট কারা নিয়ন্ত্রণ করবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় যারা মাদকব্যবসা গত ১৫ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন যাত্রাবাড়ীতে সুমন, সবুজবাগে মো. ইব্রাহিম, মো. শিপন হোসেন; শাহজাহানপুরে মো. মশিউর রহমান; তেজগাঁও থানার রেলস্টেশনে মো. বশির হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম; শেরেবাংলা নগর থানায় স্বপন মিয়া, মো. সোহেল রানা; তেজগাঁও পশ্চিম নাখালপাড়ায় মো. আজীজুর রহমান, মো. রাজু ও মো. রফিকুল ইসলাম। মামুন চৌধুরী ওরফে মুন হাজারীবাগে, হুমায়ুন কবীর ওরফে গাজী কবীর ভাটারা এলাকায়, জয়নাল বাউনিয়া বটতলা এলাকায়, মো. রবিউল ইসলাম উত্তরা পশ্চিম, মো. মন্টু মিয়া কারওয়ান বাজার এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। যদিও এদের কোনো দলীয় পরিচয় সংস্থাগুলো প্রকাশ করতে চায়নি।
তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ‘মাদকের আখড়া’খ্যাত জায়গাগুলোর নাম ও নিয়ন্ত্রণকারীদের তালিকা।
যাত্রাবাড়ী থানা
যাত্রাবাড়ীতে মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন থানার অস্ত্র লুটের হোতা, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের বাস্তুহারা লীগের যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি মশিউর রহমান শাহিন, ওরফে ফর্মা শাহীন। কদিন আগে ধর্ষণচেষ্টা ও ডাকাতির মামলায় জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। থানার অস্ত্র লুটের হোতা ও চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত মাসুম ওরফে তিন ফুট মাসুম প্রকাশ্যে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আশরাফুল করিম মিন্টু যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি যুবদলের বিভিন্ন নেতার ছত্রছায়ায় থেকে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। কদিন আগে মাদকের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছিল। তার মাদক বিক্রি ও চাঁদার কালেকশন অফিস গোলাপবাগ মাঠের পশ্চিম দিকে গ্যালারি লাইনে।
যাত্রাবাড়ীতে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন পাভেল। তার ভাই ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের নেতা। ভাইয়ের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে নিজের ও বাবার অবৈধ কারবার। তাদের বাবা ‘ফেন্সি দেলোয়ার’ পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যবসা করছেন।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার বিভিন্ন অলিগলিতে মাদক সরবরাহ করছেন জাহাঙ্গীর আলম। আগে তিনি আওয়ামী লীগের মাসুম মোল্লার ক্যাডার ছিলেন। বর্তমানে ফাহিমের ক্যাডার। এ এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফাহিমের বিরুদ্ধে।
থানার অস্ত্র লুট করে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ডাকাতি করার অভিযোগ রয়েছে যাত্রাবাড়ীর ৫০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা ইমন সরদার ও ইমরানের বিরুদ্ধে। তাদের দুই ভাইয়ের ভিডিও এখনো ইউটিউবে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার আসামি তারা। বর্তমানে ইয়াবা কারবার চালু রেখেছেন এই দুই যুবলীগ নেতা।
কদমতলী থানা
কদমতলী থানা ও তার আশপাশে যারা মাদক বিক্রি করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ৫২ নম্বর মাদরাসা রোডে ডিলার দুলাল, মুরাদপুর উত্তরপাড়ায় মুকুল ও রাগা রুবেল, মেডিকেল রোডে নবুর ছেলে সানি, নোয়াখালী পট্টিতে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন দেলোয়ারের ছেলে শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার আসামি)। তার বাবা বিএনপি নেতা। সেই পরিচয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শুভ। এর আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন শুভ। এ ছাড়া মেডিকেল রোডে তাদের সহযোগী কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন অভি, কৈতর মাসুম, সায়েম মামুন, গালকাটা রাজন; মুরাদপুর বাঙ্গালপাড়ায় দেলু, মাথামোটা রনি ও বদনা রনি।
উত্তর মুরাদপুরে রয়েছেন ওহিদ, আমিন, ডেউয়া সুমন, কাউয়া রাজসন, রকিবুল ইসলাম ও সাইফুল। নোয়াখালী শিশু কবরস্থানে কাঙ্গালি আয়রন রতন এবং স্থানীয় পুলিশের সোর্সরা মাদক কারবার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াসিন, দুলাল, কালু, মজিবুর ও ক্যাবলা শাহজাহান।
শ্যামপুর থানা
৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক কারবার পরিচালনা করছেন তিন সহোদর শাহজাহান পিঙ্গল ভাণ্ডারি, রাসেল ভাণ্ডারি ও পলাশ ভাণ্ডারি। তারা কুখ্যাত ‘গাঞ্জা কামালের’ সহযোগী। গাঞ্জা কামাল ওরফে পিস্তল কামাল শীর্ষ সন্ত্রাসী সানাউল্লাহর সহযোগী, বর্তমানে পুরো ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক কারবারসহ সব অপরাধের মূল হোতা সানাউল্লাহ।
পোস্তগোলায় মামুন, ব্যাংক কলোনি আইজি গেটের ট্রাকস্ট্যান্ডের পেছনে ইয়াবার কারবার চালাচ্ছেন ‘পেশাদার খুনি’ মাইনু মশিউর রহমান কচি, ছাত্রলীগের শাকিল রানা ওরফে পিচ্চি রানা এবং ওই এলাকায় তার প্রায় অর্ধশত সহযোগী। এ ছাড়া পুরো শ্যামপুর ও পোস্তগোলা এলাকায় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ঝরনার ছেলে মামুন ও তার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন মান্নান, হাসান গাজী, সাইদুল, বিপু, ইকবাল মনোয়ার ও রফিক মল্লিক।
শ্যামপুরে একমাত্র ফ্যান্সি সম্রাট পুলিশের নাকের ডগায় আজিজিয়া হোটেলের পেছনে ফেন্সিডিলের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। হোটেলে প্রতিদিন পুলিশ আসে, নাস্তা খায় আর তাদের সামনেই চলে বেচাকেনা। জুরাইনের মাসুম, পোকার বাজারের পোকার ভাগ্নে ইমরান, আবেদ আলীর নাতি ইশান, কুদরতি খুদার ছেলে ওহিদ ও তার ছেলের সহযোগীরা ইয়াবার কারবারি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের টেগুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ সওদাগর মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। মোশাররফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদের বন্ধু ও সহযোগী। শাহীন বর্তমানে পলাতক থাকলেও মোশাররফ কেরানীগঞ্জে দাপটের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতার প্রকাশ্যে সাপোর্টের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোশাররফকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুরো দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের আখড়া বানিয়ে রেখেছেন এই মোশাররফ। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের তালিকায় তার নামে স্থানীয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অনেক রড, বালু ও ইট চুরির অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবার জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবেও তার নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায়। মোশাররফের সহযোগীরা হলেন বক্কর সওদাগর, ভাগ্নে শান্ত সওদাগর ওরফে মানু।
পল্লবী থানা
এই থানা এলাকায় ৫০টিরও বেশি হটস্পট রয়েছে, যেখানে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন জাকির হোসেন ওরফে সিস্টেম বাবু। তার রয়েছে প্রায় ৩০ জনের বেশি সহযোগী।
মিরপুর থানা
পুরো মিরপুর থানা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় যুবদলের বহিষ্কৃত পলাতক তিন ভাই। তারা হলেন- মফিজুর রহমান, মাইনু জামিল ও মশিউর রহমান। বর্তমানে ভারত ও নেপালে পলাতক থাকলেও তাদের প্রায় ৩০০ সহযোগী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ব্লকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। তিন ভাই আওয়ামী লীগের সময়ে সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের আশ্রয়ে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তারাও দেশ থেকে পালিয়ে যান।
মিরপুর-১২ নম্বরের পল্লবী অ্যাভিনিউ ফাইভে মজিবুর রহমান ওরফে ডিশ মজিবুরের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী রয়েছেন আরো ১০-১২ জন। আগে তারা স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার আশ্রয়ে থাকলেও বর্তমানে আক্তার সিন্ডিকেটের প্রধান আক্তারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। মিল্লাত ক্যাম্পে রয়েছেন সুমন ওরফে আল্লামা সুমন।
ওয়াপদা বিল্ডিংয়ে মাউরা রিয়াজ বিহারি ক্যাম্পে দিন-রাত পালা করে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
১১ নম্বর সেক্টরে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ে হেরোইন সম্রাট পৃথিবীর নেতৃত্বে পুরো ঢাকা শহরে মাদক সরবরাহ করা হয়। হেরোইনের ডিলার হিসেবে কাজ করছেন মোশতাক। এই মোশতাকের সঙ্গে রয়েছেন যুবদলের বহিষ্কৃত ওই তিন সহোদর। মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বড় মসজিদ এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় থানা যুবলীগ সভাপতি বাপ্পী চৌধুরী ও তার সৎভাই সজল। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মিলন।
বাউনিয়া বাঁধ ও ৫৪ নম্বর প্লট
বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশে পলাতক আব্বাসের প্রায় ২৫০ জনের একটি কিশোর গ্যাং মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া ৫৪ নম্বর প্লট আদর্শনগরে স্থানীয় যুবদল নেতা কালাচান ও তার সহযোগী শুটার রুবেল, মিরপুরের তিন সহোদরের জামিল গ্রুপের সোর্সরা এখানকার কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন রফিকুল ও রানা। ১২ নম্বরের শেষদিকে রয়েছেন সিরামিক রানা, শুটার জাকির, মিলন, হাবিব ও মামুনের সিন্ডিকেট। ১২ নম্বর ‘সি’ ব্লকে সুজন, রহমান, জীবনের সঙ্গে প্রায় ৩০ জনের সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।
১২ নম্বর জি ব্লক সাগুফতা
এখানকার অবৈধ মাদকের সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন দবির, আরিফরা। তাদের দলনেতা তিন সহোদরের একজন মশিউর। তারা শুধু মাদকই নয়; বরং ডাকাতি ও ছিনতাইচক্রের সঙ্গেও জড়িত। কালাচানও এই গ্রুপে রয়েছেন।
ভাষানটেক ও মিরপুর-৭
শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্বাসের সিন্ডিকেট ভাসানটেকে সক্রিয়। ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর শিকদার, নুর সালামরা এখানে মাদকসহ আধিপত্য বিস্তার করছেন। মিরপুর-৭ নম্বরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কিশোর গ্যাং দিয়ে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিশোর গ্যাং ছাড়াও রয়েছেন জহুরি বাবু, রওশন ও আরমান।
বিদেশে অর্থ পাচার করছেন শীর্ষ মাদক কারবারিরা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর সবচেয়ে বেশি শীর্ষ পর্যায়ের মাদক কারবারি রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন বয়সে তরুণ। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছেন মোট ৭২ জন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্প্রতি জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে অর্থও পাচার করছেন। তবে তালিকায় থাকা অন্তত ১০ শীর্ষ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।
তালিকার মধ্যে বর্তমানে আরো যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে মো. হানিফ ও দোলোয়ার হোসেন। কক্সবাজারের টেকনাফের নুরুল হক ভুট্টো, সিদ্দিক আহমেদ, শফিক আলম ওরফে শফিক, ফজর আলী, নুরুল কবির, চট্টগ্রামের শফি, ঢাকার আদাবরের নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর পূর্ব থানার পারুল, খুলনার শাহজাহান হাওলাদার ও পাবনার শাহীন আলম।
মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের তিন গডফাদারের প্রায় আট কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ও বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, অন্যদের সম্পত্তি ক্রোক করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
ডিএনসি সূত্র জানায়, আগে ইয়াবা চোরাচালানের মূল রুট ছিল মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফ। বর্তমানে এই রুটে বিজিবির টহল বাড়ায় চোরাকারবারিরা রুট পরিবর্তন করেছে। সাগরপথে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা। একইসঙ্গে যশোরের বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ও হেরোইন। এ ছাড়া আকাশপথেও মাদক আসার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে মাদকসহ ধরা পড়েছে একাধিক দেশি-বিদেশি নাগরিক। ডিএনসি বলছে, দেশে বর্তমানে হেরোইন, মরফিন, আইস পিলসহ ২৪ ধরনের মাদক বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ১১ ধরনের মাদক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে র্যাবের কঠোর অবস্থান রয়েছে। রাঘব বোয়ালদের ধরার ব্যাপারে আমাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ জন্য নতুন করে কোনো আইন তৈরিরও প্রয়োজন নেই। প্রচলিত আইনই যথেষ্ট।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন আমার দেশকে বলেন, মাদকব্যবসা একটি আন্তর্জাতিক ও জটিল নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে, তাই চ্যালেঞ্জ থাকে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আসামি জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়ায়। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলায় পুলিশ কাজ করছে।
রাজধানীর অলিগলিতে প্রকাশ্যে মাদক কারবারের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমডি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘মাদক কারবারে জড়িত যে-ই হোক, এমনকি কোনো দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তিকেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৪ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে