শাটল ট্রেনে সবার জন্য আসন নিশ্চিত চান শিক্ষার্থীরা

জমির উদ্দিন চট্টগ্রাম ও আতিকুর রহমান চবি
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৮
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেন শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনরেখার মতো একটি পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শহর থেকে ক্যাম্পাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করেন এই ট্রেনে। আসন স্বল্পতা, অতিরিক্ত ভিড়, গরম ও ধুলাবালিতে ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের ভোগান্তি। এছাড়া ট্রেনগুলো দীর্ঘদিনের পুরোনো, জীর্ণ ও ভগ্নদশায় রয়েছে। তাই একে আধুনিকায়ন করা এখন সময়ের দাবি মনে করেন তারা। তাদের প্রত্যাশা, যারা চাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হবেন, তারা শাটলকে পূর্ণাঙ্গ ট্রেনে রূপান্তরিত করবেন। যাতে সবার জন্য আসন নিশ্চিত ও ভ্রমণ নিরাপদ হয়। যারা সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন, তাদের তারা ভোট দেবে।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ে বলছে, এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রয়োজন হবে নতুন বগি সংযোজন। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাবে একটি আধুনিক বগির দাম প্রায় পাঁচ-ছয় কোটি টাকা। আধুনিক মানের একটি শাটল ট্রেনে অন্তত ১৫টি বগি প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন শাটল ট্রেন চালু করা সম্ভব। তবে রেলওয়ের বিদ্যমান লোকোমোটিভ ব্যবহার করলে খরচ কিছুটা কমে আসতে পারে, শুধু নতুন বগি যোগ করলেই হবে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ব্যয় রাষ্ট্রের শিক্ষা বাজেটের ভেতরে সামঞ্জস্য করা সম্ভব। কারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক যাতায়াত নিশ্চিত করা একটি মৌলিক দায়িত্ব। পাশাপাশি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত আরো আরামদায়ক, সময়সাশ্রয়ী এবং মর্যাদাপূর্ণ হবে। ভিড় ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবেন একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুবক্তগীন বলেন, সরকার চাইলে নতুন ট্রেন সংযোজন করা সম্ভব। সরকার উদ্যোগ নিলে ট্রেন দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের যাতায়াত, শিক্ষাগত সুবিধা এবং নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, চাকসু ভোট কেবল রাজনৈতিক লড়াই নয়; এটি তাদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষার মান উন্নয়নের একটি প্ল্যাটফর্ম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তানজিলা বেগম বলেন, শাটল ট্রেনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও অস্বস্তিকর। গরম, ধুলাবালি ও অতিরিক্ত ভিড় আমাদের পড়াশোনার পরিবেশকে ব্যাহত করে। সবার জন্য আসন নিশ্চিত করা হলে স্বস্তি ফিরে আসবে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা এমন নেতৃত্ব চাই যারা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করবে। পাশাপাশি আমাদের আবাসন সংকট নিরসন, যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতিকরণ, চবি মেডিকেল আধুনিকায়ন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি যেহেতু পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে রয়েছি। ৫ আগস্টের আগের এবং পরের পরিস্থিতি দেখেছি। আমি চাই না ৫ আগস্টের আগের সে পরিস্থিতি ক্যাম্পাসে আবার ফিরে আসুক। আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে এবং তাদের কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখবে।

ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা শারমিন লিজা বলেন, আমরা এমন কাউকে চাকসু চাই, যারা আমাদের আবাসন সংকট ও যাতায়াত সমস্যা—এ দুটি সঠিকভাবে সমাধান করতে সক্ষম।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্ধাতার আমলের কিছু সিস্টেম চালু আছে, এগুলো ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন। প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কাজ এবং ব্যাংকে টাকা জমা ইত্যাদি বিষয় দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। আমরা এসবের অবসান চাই। যারা এসব সমস্যা সমাধান কাজ করতে পারবে, তাদের আমরা ভোট দেব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত