রকীবুল হক
দেশের অন্যতম প্রবীণ আলেম মুফতি বশির উল্লাহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদরাসার মুফতি ও মুহাদ্দিস। এলাকায় বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার। স্থানীয় মসজিদে খুতবার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেন তিনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার ওপর নেমে আসে চরম জুলুম-নিপীড়ন।
বিনা অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা অভিযোগের ১৪টি মামলায় সাত মাস জেল খাটতে হয়েছে এই আলেমকে। প্রায় তিন মাস রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অকথ্য গালাগালসহ হয়রানিও করা হয়েছে তাকে। পুলিশের বাধাসহ নানা অত্যাচারে বিঘ্ন হয় যায় ওয়াজ মাহফিল ও মাদরাসার ক্লাস। মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয় তার পরিবারও।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ আমার দেশকে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলে আলেম-ওলামা নির্যাতনের অন্যতম সাক্ষী হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকা। আলোচিত সাত খুনের আসামি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখত। তার কথা যারা না মানত তারাই জিম্মি থাকত। আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছত্রছায়ায় তিনি এসব করতেন। র্যাব তাকে সহযোগিতা করত, পুলিশ কর্মকর্তারাও তার কাছে বসে থাকত।
তিনি জানান, ২০১৩ সালের ৫ মের আগে মাদানীনগর মাদরাসা এলাকায় এসে ভাঙচুর করে নুর হোসেন বাহিনী। আর ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরদিন তারা সেখানে তাণ্ডব চালায়। সেদিন পুলিশ ও তাদের বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন মারা যায়। শত শত ব্যক্তি আহত হয়। আলেম-ওলামা বা হেফাজতের পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া হয়। পুলিশ ও আওয়ামী বাহিনীর নির্যাতন চলে। তারা নির্যাতন করে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সাত খুনের মামলার আসামি হিসেবে নুর হোসেন এখন জেলে আছে। তবে তার ভাতিজা বাদল কমিশনার এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়।
সানারপাড় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন মুফতি বশিরউল্লাহ। তিনি বলেন, মাদানীনগর মাদরাসায় মুফতি-মুহাদ্দিস হিসেবে ফতোয়া বিভাগে বসি, ফতোয়া দিই। কোনো অন্যায় করার তো প্রশ্নই আসে না, মানুষকে ভালো পরামর্শ দিই, ওয়াজ-নসিহত করি। মক্কীনগর মাদরাসায়ও ক্লাস নিয়ে থাকি। ইসলামের পক্ষে কথা বলি, এটাই আমার অপরাধ।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মে মাদানীনগর এলাকায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমাদের লোকই মারা গেছে, অথচ আমাদের লোকদের নামেই মামলা হয়েছে। আমরা এলাকায়ই থাকতে পারতাম না পুলিশের হয়রানির কারণে। মসজিদ-মাদরাসায় আসা যেত না। পরিবারও মানবেতর জিন্দেগি পার করেছে। আমার নামে মামলা হতে হতে ১৪টিতে দাঁড়ায়। এসব মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো। ২০১৩ সালের মামলার পাশাপাশি ২০২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলনের সময়ও মামলা দেওয়া হয়। ২০২১ সালের আগে গ্রেপ্তার করে তারপর মামলা দিত। এমনই পরিস্থিতিতে ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন মুফতি বশিরউল্লাহ।
তিনি জানান, পবিত্র রমজান মাসে সানারপাড় এলাকায় প্রথম তারাবির নামাজ পড়ে বের হতেই মসজিদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তখনও রাতের খাবার খাননি তিনি। তাকে ধরতে আগে থেকেই ওই এলাকা ঘিরে রেখেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে ধরার পরই নারায়ণগঞ্জ ডিবি অফিসে নেওয়া হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসির (তদন্ত) গাড়িতে তুলে জিজ্ঞাসা করা হয়, সরকারের সঙ্গে আপনাদের দূরত্ব সৃষ্টি হলো কেন? সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গেলেন কেন?
তিনি বললেন, আমরা তো দূরত্ব সৃষ্টি করিনি। আর আন্দোলন তো সরকারবিরোধী নয়, সেটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিবিরোধী।
ডিবি অফিসে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে নোংরা পরিবেশে বসিয়ে রাখা হয়। মশার কামড়ে ঘুম হয়নি। সারা দিন দৌড়াদৌড়িতে ক্লান্ত শরীর। ওইদিন ছিল প্রথম সাহরি। সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হয়। পরদিন ফজরের নামাজের পর অন্ধকার থাকতেই পাঁচটি মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাকে। করোনার কারণে কোর্টে না উঠিয়েই অনলাইন আদালতে তাকে জেলে পাঠানো হয়। পরে মামলা আরও বাড়তে থাকে। এসব মামলায় দুদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রিমান্ডে নেওয়া হয়। এভাবে আটটি মামলা দেওয়া হয়। আর ২০১৩ সালের মামলা মিলে ১৪টি মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয় এই আলেমকে।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন সময়ে মতিঝিল, শাহবাগ ও রমনায় থাকায় বিভিন্ন মামলায় তাকে পর্যায়ক্রমে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রিমান্ড নেওয়া হয়। এভাবে রিমান্ডে রিমান্ডে কেটে গেছে তিন মাস। তাকে কখনও স্থির থাকতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, রিমান্ডের চেয়েও বড় কষ্টকর হচ্ছে, আমরা আলেম-ওলামা মানুষ। মানুষ আমাদের সঙ্গে মোসাহফা করে, হাতে চুমু দেয়। আর তারা আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে গরুর মতো টেনে টেনে নিয়ে যায়। আমার ছোট ছেলে এই দৃশ্য দেখে কাঁদছিল। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি যে, আমাদের চোর-ডাকাতের মতো টেনে নিয়ে যাবে। এটা ভোলার নয়। আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা কি কোনো সন্ত্রাস করি? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা শুধু নিয়মতান্ত্রিক হরতাল করেছি। কোনো ভাঙচুর বা কাউকে আঘাতও করিনি। প্রতিবাদ করার তো অধিকার আছে। ইসলাম ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক ডিবিপ্রধান এনামুল কবির খামাখা আলেম-ওলামাদের গালাগাল করতেন, অপমান-অপদস্ত করতেন। অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন আমাদের সঙ্গে। আমরা নীরবে সহ্য করে গেছি। বরং ডিবির অন্য কর্মকর্তারাও তাকে পাগল বলত। কিন্তু পাগল তো আর অফিসার হতে পারে না। ব্যবহারের কারণে সহকর্মীরাই তাকে পাগল বলত।
তিনি বলেন, ডিবি কর্মকর্তা আমাকে গালাগাল করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হেফাজতে ইসলাম এত টাকা পায় কোথায়, লোকজন কোথা থেকে পায়, কওমি মাদরাসা টাকা পায় কই, মাদানীনগর মাদরাসা চলে কীভাবে প্রভৃতি। হরতালে গাড়ি ভাঙচুর কারা করেছে?’ তিনি মাওলানা মামুনুল হক সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চান। মোদির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছি কি না, কী বক্তব্য রেখেছি, তাও জানতে চান।
আমরা বলেছি, মোদির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছি কি না, সে প্রশ্ন করেন কেন? তার বিরুদ্ধে তো ভারতের হিন্দুরাও কথা বলে। মমতাসহ অনেক নেতা কথা বলে, আমরাও বলেছি। সে বাবরি মসজিদ ভেঙেছে, মুসলমানদের হত্যা করেছে। মোদি বাংলাদেশের কে? তারা বলেন, বোঝেন না দেশটা কারা চালায়?
এভাবে বিনা অপরাধে সাত মাস দুই দিন জেল খেটেছেন এই প্রবীণ আলেম। প্রথমে নারায়ণগঞ্জে, পরে কেরাণীগঞ্জে এবং শেষে কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন তিনি। মামলা ছিল নারায়ণগঞ্জ, মতিঝিল, পল্টন ও রমনায়, যেখানে আমরা কোনোদিন যাইনি, সেখানেও মামলা ছিল। একই দিনে একই সময়ে একাধিক থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলা তো আদালতে টেকারই কথা নয়। তারপরও আমাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, জেল খেটেছি, আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এভাবে হয়রানি চলে। মামলাগুলো এখনও চলমান আছে, তবে বর্তমান সরকারের সময়ে এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। কোনো অপরাধ প্রমাণ না করতে পারলেও আদালতে জামিন পেতেন না মুফতি বশিরউল্লাহ। কারণ ওই সরকারের পক্ষ থেকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। আর দীর্ঘ সাত মাস জেলে থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করেন। সে সময় মাদানীনগর মাদরাসা থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয় পরিবারকে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চলে তার পরিবার। তার জামিন নিতেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, আলেম-ওলামাদের নিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাত শেখ হাসিনার সরকার। বহির্বিশ্বের সুনজর পেতেই তিনি এটা করতেন। আসলে শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা বা ধর্মবিদ্বেষী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্মই হলো ধর্মবিদ্বেষের মধ্য দিয়ে।
এমবি
দেশের অন্যতম প্রবীণ আলেম মুফতি বশির উল্লাহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদরাসার মুফতি ও মুহাদ্দিস। এলাকায় বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার। স্থানীয় মসজিদে খুতবার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেন তিনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার ওপর নেমে আসে চরম জুলুম-নিপীড়ন।
বিনা অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা অভিযোগের ১৪টি মামলায় সাত মাস জেল খাটতে হয়েছে এই আলেমকে। প্রায় তিন মাস রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অকথ্য গালাগালসহ হয়রানিও করা হয়েছে তাকে। পুলিশের বাধাসহ নানা অত্যাচারে বিঘ্ন হয় যায় ওয়াজ মাহফিল ও মাদরাসার ক্লাস। মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয় তার পরিবারও।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ আমার দেশকে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলে আলেম-ওলামা নির্যাতনের অন্যতম সাক্ষী হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকা। আলোচিত সাত খুনের আসামি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখত। তার কথা যারা না মানত তারাই জিম্মি থাকত। আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছত্রছায়ায় তিনি এসব করতেন। র্যাব তাকে সহযোগিতা করত, পুলিশ কর্মকর্তারাও তার কাছে বসে থাকত।
তিনি জানান, ২০১৩ সালের ৫ মের আগে মাদানীনগর মাদরাসা এলাকায় এসে ভাঙচুর করে নুর হোসেন বাহিনী। আর ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরদিন তারা সেখানে তাণ্ডব চালায়। সেদিন পুলিশ ও তাদের বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন মারা যায়। শত শত ব্যক্তি আহত হয়। আলেম-ওলামা বা হেফাজতের পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া হয়। পুলিশ ও আওয়ামী বাহিনীর নির্যাতন চলে। তারা নির্যাতন করে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সাত খুনের মামলার আসামি হিসেবে নুর হোসেন এখন জেলে আছে। তবে তার ভাতিজা বাদল কমিশনার এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়।
সানারপাড় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন মুফতি বশিরউল্লাহ। তিনি বলেন, মাদানীনগর মাদরাসায় মুফতি-মুহাদ্দিস হিসেবে ফতোয়া বিভাগে বসি, ফতোয়া দিই। কোনো অন্যায় করার তো প্রশ্নই আসে না, মানুষকে ভালো পরামর্শ দিই, ওয়াজ-নসিহত করি। মক্কীনগর মাদরাসায়ও ক্লাস নিয়ে থাকি। ইসলামের পক্ষে কথা বলি, এটাই আমার অপরাধ।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মে মাদানীনগর এলাকায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমাদের লোকই মারা গেছে, অথচ আমাদের লোকদের নামেই মামলা হয়েছে। আমরা এলাকায়ই থাকতে পারতাম না পুলিশের হয়রানির কারণে। মসজিদ-মাদরাসায় আসা যেত না। পরিবারও মানবেতর জিন্দেগি পার করেছে। আমার নামে মামলা হতে হতে ১৪টিতে দাঁড়ায়। এসব মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো। ২০১৩ সালের মামলার পাশাপাশি ২০২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলনের সময়ও মামলা দেওয়া হয়। ২০২১ সালের আগে গ্রেপ্তার করে তারপর মামলা দিত। এমনই পরিস্থিতিতে ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন মুফতি বশিরউল্লাহ।
তিনি জানান, পবিত্র রমজান মাসে সানারপাড় এলাকায় প্রথম তারাবির নামাজ পড়ে বের হতেই মসজিদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তখনও রাতের খাবার খাননি তিনি। তাকে ধরতে আগে থেকেই ওই এলাকা ঘিরে রেখেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে ধরার পরই নারায়ণগঞ্জ ডিবি অফিসে নেওয়া হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসির (তদন্ত) গাড়িতে তুলে জিজ্ঞাসা করা হয়, সরকারের সঙ্গে আপনাদের দূরত্ব সৃষ্টি হলো কেন? সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গেলেন কেন?
তিনি বললেন, আমরা তো দূরত্ব সৃষ্টি করিনি। আর আন্দোলন তো সরকারবিরোধী নয়, সেটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিবিরোধী।
ডিবি অফিসে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে নোংরা পরিবেশে বসিয়ে রাখা হয়। মশার কামড়ে ঘুম হয়নি। সারা দিন দৌড়াদৌড়িতে ক্লান্ত শরীর। ওইদিন ছিল প্রথম সাহরি। সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হয়। পরদিন ফজরের নামাজের পর অন্ধকার থাকতেই পাঁচটি মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাকে। করোনার কারণে কোর্টে না উঠিয়েই অনলাইন আদালতে তাকে জেলে পাঠানো হয়। পরে মামলা আরও বাড়তে থাকে। এসব মামলায় দুদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রিমান্ডে নেওয়া হয়। এভাবে আটটি মামলা দেওয়া হয়। আর ২০১৩ সালের মামলা মিলে ১৪টি মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয় এই আলেমকে।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন সময়ে মতিঝিল, শাহবাগ ও রমনায় থাকায় বিভিন্ন মামলায় তাকে পর্যায়ক্রমে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রিমান্ড নেওয়া হয়। এভাবে রিমান্ডে রিমান্ডে কেটে গেছে তিন মাস। তাকে কখনও স্থির থাকতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, রিমান্ডের চেয়েও বড় কষ্টকর হচ্ছে, আমরা আলেম-ওলামা মানুষ। মানুষ আমাদের সঙ্গে মোসাহফা করে, হাতে চুমু দেয়। আর তারা আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে গরুর মতো টেনে টেনে নিয়ে যায়। আমার ছোট ছেলে এই দৃশ্য দেখে কাঁদছিল। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি যে, আমাদের চোর-ডাকাতের মতো টেনে নিয়ে যাবে। এটা ভোলার নয়। আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা কি কোনো সন্ত্রাস করি? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা শুধু নিয়মতান্ত্রিক হরতাল করেছি। কোনো ভাঙচুর বা কাউকে আঘাতও করিনি। প্রতিবাদ করার তো অধিকার আছে। ইসলাম ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক ডিবিপ্রধান এনামুল কবির খামাখা আলেম-ওলামাদের গালাগাল করতেন, অপমান-অপদস্ত করতেন। অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন আমাদের সঙ্গে। আমরা নীরবে সহ্য করে গেছি। বরং ডিবির অন্য কর্মকর্তারাও তাকে পাগল বলত। কিন্তু পাগল তো আর অফিসার হতে পারে না। ব্যবহারের কারণে সহকর্মীরাই তাকে পাগল বলত।
তিনি বলেন, ডিবি কর্মকর্তা আমাকে গালাগাল করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হেফাজতে ইসলাম এত টাকা পায় কোথায়, লোকজন কোথা থেকে পায়, কওমি মাদরাসা টাকা পায় কই, মাদানীনগর মাদরাসা চলে কীভাবে প্রভৃতি। হরতালে গাড়ি ভাঙচুর কারা করেছে?’ তিনি মাওলানা মামুনুল হক সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চান। মোদির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছি কি না, কী বক্তব্য রেখেছি, তাও জানতে চান।
আমরা বলেছি, মোদির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছি কি না, সে প্রশ্ন করেন কেন? তার বিরুদ্ধে তো ভারতের হিন্দুরাও কথা বলে। মমতাসহ অনেক নেতা কথা বলে, আমরাও বলেছি। সে বাবরি মসজিদ ভেঙেছে, মুসলমানদের হত্যা করেছে। মোদি বাংলাদেশের কে? তারা বলেন, বোঝেন না দেশটা কারা চালায়?
এভাবে বিনা অপরাধে সাত মাস দুই দিন জেল খেটেছেন এই প্রবীণ আলেম। প্রথমে নারায়ণগঞ্জে, পরে কেরাণীগঞ্জে এবং শেষে কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন তিনি। মামলা ছিল নারায়ণগঞ্জ, মতিঝিল, পল্টন ও রমনায়, যেখানে আমরা কোনোদিন যাইনি, সেখানেও মামলা ছিল। একই দিনে একই সময়ে একাধিক থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলা তো আদালতে টেকারই কথা নয়। তারপরও আমাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, জেল খেটেছি, আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এভাবে হয়রানি চলে। মামলাগুলো এখনও চলমান আছে, তবে বর্তমান সরকারের সময়ে এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। কোনো অপরাধ প্রমাণ না করতে পারলেও আদালতে জামিন পেতেন না মুফতি বশিরউল্লাহ। কারণ ওই সরকারের পক্ষ থেকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। আর দীর্ঘ সাত মাস জেলে থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করেন। সে সময় মাদানীনগর মাদরাসা থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয় পরিবারকে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চলে তার পরিবার। তার জামিন নিতেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে।
মুফতি বশিরউল্লাহ বলেন, আলেম-ওলামাদের নিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাত শেখ হাসিনার সরকার। বহির্বিশ্বের সুনজর পেতেই তিনি এটা করতেন। আসলে শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা বা ধর্মবিদ্বেষী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্মই হলো ধর্মবিদ্বেষের মধ্য দিয়ে।
এমবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
২১ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে