মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা
মাহমুদুর রহমান
ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় প্রথম গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বন্দি ছিলেন মেজর (অব.) জায়েদী আহসান হাবিব। তাকে বন্দি রাখা হয়েছিল ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায়। তার কাছেই জায়েদী শুনেছিলেন, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসকে বিডিআর ডিজি করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তার লোকজনকে ঊর্ধ্বতন পদে বসানোর পরিকল্পনাও করা হয়। বন্দিদশায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন জায়েদী। তিনি জীবিত ফেরত আসা সৌভাগ্যবানদের একজন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পুরো দিন এবং ২৬ ফেব্রুয়ারির অর্ধেক দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার কথা জায়েদী জানিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে।
আমার দেশ-এর পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারের শেষ পর্বের চৌম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো
আমার দেশ : আপনার রুমে কোথা থেকে এলো লুনা নামের ওই তরুণী?
মেজর জায়েদী : লুনা রুমে ঢুকেই তার বাবার সঙ্গে কথা বলছিল। পরে সে জানাল, সে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিল পিলখানা হয়ে। এর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। তখন সে পালিয়ে এ বাসায় আশ্রয় নেয়। এরপর আমরা টিভি রুমের দিকে গেলাম। টিভিতে দেখতে পেলাম, নানক (জাহাঙ্গীর কবির নানক) ও গিনি (মাহাবুব আরা বেগম গিনি) ম্যাডাম আসছেন। আমি ভেবেছি, যে আলোচনা আমি করিয়ে দিয়েছি, হয়তো তা কাজে দিয়েছে।
আমার দেশ : এর মধ্যে গোফরান আর আসেনি?
মেজর জায়েদী : না, তিনি আর আসেননি। সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টার দিকে একজন সার্জেন্ট বা হাবিলদারের মেয়ে টিভিতে অফিসাররা তার বাবাকে কীভাবে অত্যাচার করেছে, সে বিষয়ে বক্তব্য দিল। এরপর পুরো পিলখানার সৈনিকরা চিৎকার করে উঠল। তারা মাইকিং শুরু করল যেসব বাসায় অফিসাররা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়ার জন্য। এ সময় সিপাহি বরুণ আমাকে বলল, আপনি বের হয়ে যান। ওই অবস্থায় লুনা আমাকে যেতে দিতে রাজি হয়নি। আমরা রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। এ অবস্থায় একটা সৈনিক এলো। হাতে এসএমজি। পায়চারী করছিল এদিক-সেদিক। আলাপচারিতার মধ্যে একসময় সে গুলি লোড করল। এ সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে তাকে বললাম আমাকে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য। এ সময় লুনা বেহুঁশ হয়ে যায়। তাকে আমি ধমক দিয়ে বলি, কোনো নারীর সামনে কী মারতে হয়। তখন সে গুলি আনলোড করে বলল, আমি আপনাকে মারতে আসিনি, শুধু দেখতে এসেছিলাম। এরপর সে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর চলে গেলো লুনাও।
আমার দেশ : তারপর কি হলো?
মেজর জায়েদী : আমার ছোট ভাই আর্মি অফিসার। তাকে বললাম, আমার ব্যাটালিয়নের সিওর সঙ্গে কথা বলিয়ে দাও। সে ম্যানেজ করল। আমার সিও আমাকে কল করলেন। আমি তাকে বললাম, লাতু খান বা ওয়াহিদুজ্জামান যে কারো নম্বর দিন। পরে তাদের সঙ্গে কথা হলো। তাদের বললাম গোফরান সাহেবকে কল করো। হঠাৎ দেখি গোফরান চলে এলেন বাসায়। তিনি বললেন, আপনি এ কী করলেন? এখন আপনার লোকেশন তো সবাই জেনে গেছে। রাত ১টার দিকে গোফরান সাহেব আবার এলেন। তিনি বললেন, আপনি এদিকে আর আসবেন না। আমার এখানে কিছু লোক আসবে। আমি বাসার শেষের রুমের কোণে চলে গেলাম। এ সময় কিছু লোক এলো সিভিল ও বিডিআরের ড্রেস পরা। তারা একটি কনফারেন্স করল। এরপর চলে গেলো। গোফরান সাহেব আবার ৩টার দিকে এসে ঘুম দিলেন। এর আগে তিনি একটি কথা বলেছিলেন, আমরা এমন একটা কিছু করছি যা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। এই কনফারেন্সের আগে আরও একটি কনফারেন্স হয়েছিল। সেটি হয়েছিল কোনো জেসিও বা কারো বাসায়। সে বিষয়ে গোফরান আমাকে বলেন, এর নেতৃত্ব দিয়েছিল তাপস (শেখ ফজলে নূর তাপস)। এর মূল বিষয় ছিল, বিডিআর থেকে আর্মিরা চলে যাবে। ডিজি (মহাপরিচালক) হবে তাপস নিজে। এমপির পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিডিআরের ডিজির দায়িত্ব পালন করবে সে। অন্য যে সিনিয়র পদগুলো রয়েছে, সেগুলোতে যতদিন পর্যন্ত বিডিআর থেকে উপযুক্ত অফিসার না আসবে, ততদিন তাপসের দলবল বাহিনিটি চালাবে। এই সিদ্ধান্তে গোফরান সন্তুষ্ট ছিলেন। পরদিন সকালে এক লোকের চিৎকারে ঘুম ভাঙল গোফরানের। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপর গোফরান সাহেব প্রস্তুত হয়ে বাইরে চলে গেলেন। ফিরলেন সাড়ে ১২টার দিকে। বললেন, আপনি ড্রেস পরে নিন। তারপর আমাকে একটি পায়জামা ও শার্ট দিল। আরও বললেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে আপনাকে আমরা অন্য জায়গায় পাঠাব। এরপর গাড়িতে করে আমাকে ৪ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে নামিয়ে দিল। আমি এ সময় সিভিলিয়ানের মতো বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম; কিন্তু পারলাম না। আমাকে একটি লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো। নেওয়া হলো কোয়ার্টার গার্ডের সামনে। সেখানে একদিকে আর্মি অফিসার, অন্যদিকে ভাবিরা এবং আরেকদিকে সিভিল ড্রেস পরা কিছু লোক। হঠাৎ চারজনকে ডাকল। আমরা ভেবে নিলাম এভাবে হয়তো ধাপে ধাপে সবাইকে মারা হবে। এরপর এমপি রেজা এলেন। উনি এসে তালিকা চাইলেন। তালিকা দেওয়া হলো। আমার নাম ছিল প্রথম ১০ জনের মধ্যে। অনেকক্ষণ পর এমপি রেজা এসে আমাদের ১০ জনকে চার নম্বর গেটের সামনে নিয়ে গেলেন। এ সময় আমি লাইন থেকে বের হয়ে সিভিলের সঙ্গে মিশে যাই। ওই সময় আমার এক ব্যাটম্যান মিজান (সে বাংলাভিশনে ড্রাইভারের চাকরি করত), তখন আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরল। এরপর আমি এবিসি রেডিওতে পুরো ঘটনা বললাম। এরপর মিজান আমাকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
আমার দেশ : আপনি মামলায় সাক্ষী দিয়েছিলেন, তাই না?
মেজর জায়েদী : জ্বি। আমি বিডিআর কোর্টেও দিয়েছি, আলিয়া মাদরাসার কোর্টেও দিয়েছি।
আমার দেশ : দুটি কমিটি হয়েছিল। আপনি কী দুই জায়গায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : দুই জায়গাতেই আমি লিখিত জবানবন্দি দিয়েছিলাম।
আমার দেশ : ওই স্ট্যাটমেন্টের ভেতরে তারেক সিদ্দিক ও মেজর মইনের বিষয় এবং শেখ হাসিনা যে কথা বলতে চাইলেন বা বললেন জেনারেল শাকিলের সঙ্গে, এগুলো কি ছিল?
মেজর জায়েদী : এগুলো সবই ছিল।
আমার দেশ : আপনি যে সাক্ষ্য দিলেন, সেখানে কি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : না। আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমার দেশ : গোফরানের সঙ্গে তাপসের যে মিটিং হয়েছিল, সে বিষয়েও আপনাকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি?
মেজর জায়েদী : এ বিষয়টি আমি জবানবন্দিতে দিইনি।
আমার দেশ : কেন দেননি? ভয় পেয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : ভয় তো স্বাভাবিক থাকবেই। কাদের সাহেব আমাকে যে কথাটা বলেছিলেন, তারও সামান্য অংশ আমি উল্লেখ করেছিলাম। একটা পিকআপে করে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাইরে থেকে এসেছে- এটা আমি উল্লেখ করিনি।
আমার দেশ : এ ঘটনার পর শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে গেলেন। সেখানে অফিসাররা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। এ কারণে অনেকের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। ওই অনুষ্ঠানে আপনি ছিলেন?
মেজর জায়েদী : আমি ওই সময় সিএমএইচে ছিলাম। সিএমএইচ থেকে আমাকে বলা হয়েছে, ওখানে যাওয়া যাবে না।
আমার দেশ : এরপর আর্মিতে ফিরে এসেছেন, না পিস মিশনে চলে গেলেন?
মেজর জায়েদী : আমি বিডিআরে জয়েন করেছিলাম। এরপর গেলাম পিস মিশনে। অবসরে যাই ২০২২ সালে।
আমার দেশ : এর মধ্যে কোনো প্রমোশন হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : মেজর ছিলাম ২০০৩ থেকে। অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো প্রমোশন হয়নি।
আমার দেশ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মেজর জায়েদী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
শ্রুতিলিখন : হাসান আদিল
ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় প্রথম গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বন্দি ছিলেন মেজর (অব.) জায়েদী আহসান হাবিব। তাকে বন্দি রাখা হয়েছিল ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায়। তার কাছেই জায়েদী শুনেছিলেন, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসকে বিডিআর ডিজি করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তার লোকজনকে ঊর্ধ্বতন পদে বসানোর পরিকল্পনাও করা হয়। বন্দিদশায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন জায়েদী। তিনি জীবিত ফেরত আসা সৌভাগ্যবানদের একজন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পুরো দিন এবং ২৬ ফেব্রুয়ারির অর্ধেক দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার কথা জায়েদী জানিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে।
আমার দেশ-এর পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারের শেষ পর্বের চৌম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো
আমার দেশ : আপনার রুমে কোথা থেকে এলো লুনা নামের ওই তরুণী?
মেজর জায়েদী : লুনা রুমে ঢুকেই তার বাবার সঙ্গে কথা বলছিল। পরে সে জানাল, সে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিল পিলখানা হয়ে। এর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। তখন সে পালিয়ে এ বাসায় আশ্রয় নেয়। এরপর আমরা টিভি রুমের দিকে গেলাম। টিভিতে দেখতে পেলাম, নানক (জাহাঙ্গীর কবির নানক) ও গিনি (মাহাবুব আরা বেগম গিনি) ম্যাডাম আসছেন। আমি ভেবেছি, যে আলোচনা আমি করিয়ে দিয়েছি, হয়তো তা কাজে দিয়েছে।
আমার দেশ : এর মধ্যে গোফরান আর আসেনি?
মেজর জায়েদী : না, তিনি আর আসেননি। সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টার দিকে একজন সার্জেন্ট বা হাবিলদারের মেয়ে টিভিতে অফিসাররা তার বাবাকে কীভাবে অত্যাচার করেছে, সে বিষয়ে বক্তব্য দিল। এরপর পুরো পিলখানার সৈনিকরা চিৎকার করে উঠল। তারা মাইকিং শুরু করল যেসব বাসায় অফিসাররা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়ার জন্য। এ সময় সিপাহি বরুণ আমাকে বলল, আপনি বের হয়ে যান। ওই অবস্থায় লুনা আমাকে যেতে দিতে রাজি হয়নি। আমরা রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। এ অবস্থায় একটা সৈনিক এলো। হাতে এসএমজি। পায়চারী করছিল এদিক-সেদিক। আলাপচারিতার মধ্যে একসময় সে গুলি লোড করল। এ সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে তাকে বললাম আমাকে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য। এ সময় লুনা বেহুঁশ হয়ে যায়। তাকে আমি ধমক দিয়ে বলি, কোনো নারীর সামনে কী মারতে হয়। তখন সে গুলি আনলোড করে বলল, আমি আপনাকে মারতে আসিনি, শুধু দেখতে এসেছিলাম। এরপর সে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর চলে গেলো লুনাও।
আমার দেশ : তারপর কি হলো?
মেজর জায়েদী : আমার ছোট ভাই আর্মি অফিসার। তাকে বললাম, আমার ব্যাটালিয়নের সিওর সঙ্গে কথা বলিয়ে দাও। সে ম্যানেজ করল। আমার সিও আমাকে কল করলেন। আমি তাকে বললাম, লাতু খান বা ওয়াহিদুজ্জামান যে কারো নম্বর দিন। পরে তাদের সঙ্গে কথা হলো। তাদের বললাম গোফরান সাহেবকে কল করো। হঠাৎ দেখি গোফরান চলে এলেন বাসায়। তিনি বললেন, আপনি এ কী করলেন? এখন আপনার লোকেশন তো সবাই জেনে গেছে। রাত ১টার দিকে গোফরান সাহেব আবার এলেন। তিনি বললেন, আপনি এদিকে আর আসবেন না। আমার এখানে কিছু লোক আসবে। আমি বাসার শেষের রুমের কোণে চলে গেলাম। এ সময় কিছু লোক এলো সিভিল ও বিডিআরের ড্রেস পরা। তারা একটি কনফারেন্স করল। এরপর চলে গেলো। গোফরান সাহেব আবার ৩টার দিকে এসে ঘুম দিলেন। এর আগে তিনি একটি কথা বলেছিলেন, আমরা এমন একটা কিছু করছি যা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। এই কনফারেন্সের আগে আরও একটি কনফারেন্স হয়েছিল। সেটি হয়েছিল কোনো জেসিও বা কারো বাসায়। সে বিষয়ে গোফরান আমাকে বলেন, এর নেতৃত্ব দিয়েছিল তাপস (শেখ ফজলে নূর তাপস)। এর মূল বিষয় ছিল, বিডিআর থেকে আর্মিরা চলে যাবে। ডিজি (মহাপরিচালক) হবে তাপস নিজে। এমপির পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিডিআরের ডিজির দায়িত্ব পালন করবে সে। অন্য যে সিনিয়র পদগুলো রয়েছে, সেগুলোতে যতদিন পর্যন্ত বিডিআর থেকে উপযুক্ত অফিসার না আসবে, ততদিন তাপসের দলবল বাহিনিটি চালাবে। এই সিদ্ধান্তে গোফরান সন্তুষ্ট ছিলেন। পরদিন সকালে এক লোকের চিৎকারে ঘুম ভাঙল গোফরানের। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপর গোফরান সাহেব প্রস্তুত হয়ে বাইরে চলে গেলেন। ফিরলেন সাড়ে ১২টার দিকে। বললেন, আপনি ড্রেস পরে নিন। তারপর আমাকে একটি পায়জামা ও শার্ট দিল। আরও বললেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে আপনাকে আমরা অন্য জায়গায় পাঠাব। এরপর গাড়িতে করে আমাকে ৪ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে নামিয়ে দিল। আমি এ সময় সিভিলিয়ানের মতো বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম; কিন্তু পারলাম না। আমাকে একটি লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো। নেওয়া হলো কোয়ার্টার গার্ডের সামনে। সেখানে একদিকে আর্মি অফিসার, অন্যদিকে ভাবিরা এবং আরেকদিকে সিভিল ড্রেস পরা কিছু লোক। হঠাৎ চারজনকে ডাকল। আমরা ভেবে নিলাম এভাবে হয়তো ধাপে ধাপে সবাইকে মারা হবে। এরপর এমপি রেজা এলেন। উনি এসে তালিকা চাইলেন। তালিকা দেওয়া হলো। আমার নাম ছিল প্রথম ১০ জনের মধ্যে। অনেকক্ষণ পর এমপি রেজা এসে আমাদের ১০ জনকে চার নম্বর গেটের সামনে নিয়ে গেলেন। এ সময় আমি লাইন থেকে বের হয়ে সিভিলের সঙ্গে মিশে যাই। ওই সময় আমার এক ব্যাটম্যান মিজান (সে বাংলাভিশনে ড্রাইভারের চাকরি করত), তখন আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরল। এরপর আমি এবিসি রেডিওতে পুরো ঘটনা বললাম। এরপর মিজান আমাকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
আমার দেশ : আপনি মামলায় সাক্ষী দিয়েছিলেন, তাই না?
মেজর জায়েদী : জ্বি। আমি বিডিআর কোর্টেও দিয়েছি, আলিয়া মাদরাসার কোর্টেও দিয়েছি।
আমার দেশ : দুটি কমিটি হয়েছিল। আপনি কী দুই জায়গায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : দুই জায়গাতেই আমি লিখিত জবানবন্দি দিয়েছিলাম।
আমার দেশ : ওই স্ট্যাটমেন্টের ভেতরে তারেক সিদ্দিক ও মেজর মইনের বিষয় এবং শেখ হাসিনা যে কথা বলতে চাইলেন বা বললেন জেনারেল শাকিলের সঙ্গে, এগুলো কি ছিল?
মেজর জায়েদী : এগুলো সবই ছিল।
আমার দেশ : আপনি যে সাক্ষ্য দিলেন, সেখানে কি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : না। আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমার দেশ : গোফরানের সঙ্গে তাপসের যে মিটিং হয়েছিল, সে বিষয়েও আপনাকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি?
মেজর জায়েদী : এ বিষয়টি আমি জবানবন্দিতে দিইনি।
আমার দেশ : কেন দেননি? ভয় পেয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : ভয় তো স্বাভাবিক থাকবেই। কাদের সাহেব আমাকে যে কথাটা বলেছিলেন, তারও সামান্য অংশ আমি উল্লেখ করেছিলাম। একটা পিকআপে করে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাইরে থেকে এসেছে- এটা আমি উল্লেখ করিনি।
আমার দেশ : এ ঘটনার পর শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে গেলেন। সেখানে অফিসাররা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। এ কারণে অনেকের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। ওই অনুষ্ঠানে আপনি ছিলেন?
মেজর জায়েদী : আমি ওই সময় সিএমএইচে ছিলাম। সিএমএইচ থেকে আমাকে বলা হয়েছে, ওখানে যাওয়া যাবে না।
আমার দেশ : এরপর আর্মিতে ফিরে এসেছেন, না পিস মিশনে চলে গেলেন?
মেজর জায়েদী : আমি বিডিআরে জয়েন করেছিলাম। এরপর গেলাম পিস মিশনে। অবসরে যাই ২০২২ সালে।
আমার দেশ : এর মধ্যে কোনো প্রমোশন হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : মেজর ছিলাম ২০০৩ থেকে। অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো প্রমোশন হয়নি।
আমার দেশ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মেজর জায়েদী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
শ্রুতিলিখন : হাসান আদিল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৭ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে