ভিটামিন ডি স্বল্পতায় ভুগছে অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫, ০৯: ০৮

ব্যাংক কর্মকর্তা নায়লা খানমের তিন বছর বয়সি ছেলে শান্ত। ছেলে বড় হচ্ছে। কিন্তু মা খেয়াল করলেন তার পা দুটি স্বাভাবিক না, সামান্য বাঁকা। দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানালেন, তার ছেলে ভিটামিন ডি স্বল্পতায় ভুগছে।

নায়লা খানম আমার দেশকে জানান, শান্তকে নিয়মিত ভিটামিন ডি খাওয়ার পরামর্শ দেন। ওর বয়স এখন সাড়ে চার বছর। পায়ের সমস্যা অনেকটাই ঠিক হয়ে গেছে। ওর শরীরে এখন ভিটামিন ডির ঘাটতিও নেই।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগীয় প্রধান রবি বিশ্বাস জানান, পা বাঁকা হয় রিকেট হলে। এ রোগ হয় ভিটামিন ডির ঘাটতি হলে। এই হাসপাতালে বহু শিশু আসে ভিটামিন ডির স্বল্পতা নিয়ে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে শুধু শিশুদের নয়, এ দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের ভিটামিন ডির ঘাটতি রয়েছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যা বলেও উল্লেখ করেন রবি বিশ্বাস।

তিনি আরো বলেন, শিশুদের রিকেট হলে হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়। বয়স্করা ‘অস্টিওম্যালাসিয়া’ রোগে আক্রান্ত হয়, এতে হাড়ে ব্যথা হয় ও মাংসপেশি দুর্বল হয়। দীর্ঘদিন ভিটামিন ডির অভাবে ভুগলে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘অস্টিওপোরোসিসে’ আক্রান্ত হয়। এতে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অস্টিওপোরোসিসে ভুগলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হতে সহায়তা করে ভিটামিন ডি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক ধরনের অণুপুষ্টি কণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এই অণুপুষ্টি কণা মানুষের সামান্য পরিমাণে দরকার হয়, কিন্তু প্রতিদিনই তা দরকার। মানুষের চাহিদার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে খাদ্য থেকে। বাকি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের উৎস সূর্যের আলো। এ বিষয়ে নানা প্রচলিত ধারণা আছে। একটি হচ্ছে, সূর্যের আলোতে যারা বেশি থাকে, তাদের ভিটামিন ডির ঘাটতি হয় না। কিন্তু গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়নি। দেখা গেছে, শহরের মানুষের মতো গ্রামের মানুষও এর ঘাটতিতে আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অর্ধেক শিশু ভিটামিন ডির ঘাটতিতে ভুগছে।

মাতুয়াইল মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহমুদা হোসেন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুর এই ঘাটতি আছে। গ্রামে এই হার ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বয়স অনুপাতে যেসব শিশুর ওজন বেশি, তাদের ভিটামিন ডির ঘাটতিও বেশি।

২০১৯ সালে প্রকাশিত কক্সবাজারের ১৪০ জন মৎস্যজীবীর ওপর অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ শতাংশের শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে। তারা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সূর্যের আলোতে থেকে মাছ ধরেন। তাদের বয়স ছিল ১৯ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। গবেষকরা তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ভিটামিন ডির পরিমাণ নির্ণয় করেছিলেন। বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজঅর্ডারের দুজন গবেষক এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের একজন গবেষক গবেষণাটি করেছিলেন। গবেষণাটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইএমসি জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্সে ছাপা হয়েছিল।

এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের অন্তত ১০০ কোটি মানুষেরই ভিটামিন-ডির ঘাটতি আছে এবং তারা এ সমস্যাকে গ্লোবাল হেলথ প্রবলেম বলে আখ্যায়িত করেছে। সংস্থাটি বলছে, আর এ সংকট মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সঠিক নিয়ম ও সময় দিয়ে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা।

ভিটামিন ডির অভাবজনিত সমস্যা শুধু দরিদ্র দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ, তা নয় বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যাও বটে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমনÑ ভারত, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবে নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়স এবং আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে গবেষণা চালানো হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, ভিটামিন ডির অভাব ভারতে শতকরা ৫৯, সৌদি আরবে শতকরা ৬০ এবং পাকিস্তানে ৭৩ ভাগ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতেও এ সমস্যা রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ ভিটামিন ডির অভাবজনিত ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও এদিকটি উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। একটি হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ শিশু ভিটামিন ডির অভাবে ভুগছে। গ্রামাঞ্চলের ১-৬ মাস বয়সি শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই ভিটামিন ডির অভাবে ভুগছে।

‘বাংলাদেশি জনগণের ভিটামিন ডির অভাব এবং আর্থসামাজিক অবস্থা’ নামক গবেষণায় দেখা যায়, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থার শতকরা ৫০ ভাগ মহিলার হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে, যেখানে উচ্চ আর্থসামাজিক অবস্থায় এই হার শতকরা ৩৮ ভাগ।

সূর্যের আলো ভিটামিন ডির প্রাকৃতিক উৎস সেটা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু ভিটামিন ডি পেতে দিনের ঠিক কোন সময়ের রোদ গায়ে লাগাতে হবে, সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। এ বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহসেনা আক্তার জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সময়ের রোদ ভিটামিন ডির খুব ভালো উৎস।

তিনি আরো বলেন, এর উৎস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং মানুষের আচার-ব্যবহার পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা বাড়ানো দরকার। ভিটামিন ডির উৎস মাছ, ডিম এবং কড লিভার অয়েল এর সহজলভ্যতা এবং সহজপ্রাপ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করা। সেই সঙ্গে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত