শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মসূচি

রাবি ক্যাম্পাসের অচলাবস্থায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫: ১২

পোষ্য কোটা ইস্যু ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ এবং শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। কোনো বিভাগেই হচ্ছে না ক্লাস, চলছে না দাপ্তরিক কাজ। এমন অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী। এ কারণেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে তারা অযৌক্তিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এর ফলে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের দাবি, একটি গোষ্ঠী পোষ্য কোটার মতো মীমাংসিত ইস্যু সামনে এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ (রাকসু) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অচল করে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আবদুন নূর বলেন, ক্যাম্পাসে যে নীরবতা, মরুভূমির মতো অবস্থা দেখছিÑএমনটা আমরা দেখেছি করোনা মহামারির সময়। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি পোষ্য কোটা নামে এক অদৃশ্য ভাইরাসের আবির্ভাব হয়েছে। আমাদের শিক্ষার অধিকার হরণ করে তারা তাদের অযৌক্তিক অধিকার দাবির চেষ্টা করছে। তাদের বলতে চাই, রাষ্ট্র, প্রশাসন, গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কোটি কোটি টাকা আপনাদের লিচুতলায় বসে থাকার জন্য দেওয়া হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য দেওয়া হয়েছে। আপনারা অতিসত্বর শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুন, নইলে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-অধিকার আদায় করে নেবে।

একই বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন বলেন, আমাদের লাইব্রেরি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে অধিকার, তা হরণ করা হয়েছে। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই হচ্ছে না। এতে বাড়ছে সেশনজটের আশঙ্কা। প্রত্যেক শিক্ষার্থী এর ভুক্তভোগী।

ইয়াসমিন আরো বলেন, একটি অযৌক্তিক দাবির জন্য ক্যাম্পাসে যে অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে, তা আসলে মেনে নেওয়ার মতো নয়। ক্লাস-পরীক্ষাসহ লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে চলমান কমপ্লিট শাটডাউনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে রাবি শাখা ছাত্রশিবির। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে জিম্মি করা হচ্ছে। বহু আগেই নিষ্পত্তি হওয়া পোষ্য কোটা ইস্যু আবার সামনে এনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে একটি ছাত্রসংগঠন তাদের মাদার সংগঠনের সহায়তায় বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত এ ধরনের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা এবং দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত নির্বাচন বানচাল করা ছাড়া আর কিছু নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন বানচাল করা এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি গোষ্ঠী পোষ্য কোটার মতো মীমাংসিত একটি ইস্যু সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিয়েছে। কতিপয় শিক্ষক তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে সক্রিয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তাদের উসকানিমূলক বক্তব্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছেন।

রহমান জাহিদ আরো বলেন, কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ ধরনের শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চাইছেনÑযদি আবারও ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি ও রাকসু নির্বাচনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম চালু করতে চাও, তবে অবশ্যই তাদের ‘পোষ্য কোটা’ মেনে নিতে হবে। এছাড়া একটি ছাত্রসংগঠন তাদের মূল দলের সহায়তায় রাকসু নির্বাচন বানচাল করার ফন্দি আঁটছে। নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও অব্যাহত রেখেছে তারা।

এদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন রাবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তার। গতকাল অফিসার সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের অফিসার্স সমিতির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমাদের দাবিদাওয়ার কথা শুনে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়। আমরা চাই শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিতের ঘটনায় যেসব ছাত্র জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা প্রশাসনকে সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়ে আমাদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি। সাতদিনের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাব।

তবে শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে বলে জানান জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে। যারা শিক্ষকদের গায়ে হাত দিয়েছে, তাদের ফেলে দিয়েছে, মারার চেষ্টা করেছে; যতদিন না তাদে বিচার হবে, ততদিন আমাদের কর্মসূচি চলবে। সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসন আমাদের একটি মেসেজ দিয়েছে কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের এখনো কোনো বৈঠক হয়নি। হয়তো বৈঠক হতে পারে কিন্তু সেটা নিশ্চিত নয়।

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত