চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় দেশের ইতিহাসে প্রথম চার হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে ১.৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল স্টেইড সেতু। দেশের ইতিহাসে প্রথম এমন প্রকল্প যাতে নদীর মূল প্রবাহে একটি পিলারও থাকবে না।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে সেতু এলাকার ওপর আকাশপথে হেলিকপ্টার সার্ভে করেন কোরিয়ার প্রতিনিধি বিয়ন, পার্ক এবং সিন।
পরিদর্শন শেষে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে মতলব উত্তর উপজেলার কালিপুর বাজার মাঠে। সেখানে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে মতবিনিময় করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, এই সেতু শুধু মতলব নয় চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা পাল্টে যাবে। এই সেতু দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে। শিল্পাঞ্চল, পর্যটন ও কর্মসংস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এ সেতু হলে মতলব-গজারিয়া অঞ্চল রাজধানীর সঙ্গে দ্রুত যুক্ত হবে।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. শামিম আহাম্মেদ, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আজহারুল হক মুকুল, বিএনপি নেতা আনিছুর আউয়াল প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মনজুর আমিন স্বপন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছেংগারচর পৌর বিএনপির সভাপতি নান্নু মিয়া প্রধান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল পাটোয়ারী, উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান টিপু, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. শাহজালাল, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নুরুল হুদা ফয়েজী, সদস্য সচিব জয়নাল পাটোয়ারী পিনুসহ নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪,৭৮৩ কোটি টাকা, যার বড় অংশই অর্থায়ন করবে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের ইডিসিএফ। ঋণের সুদের হার মাত্র ০.০১ শতাংশ পরিশোধকাল ৪০ বছর এবং ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড যা বাংলাদেশে যেকোনো সেতু প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্যতম সাশ্রয়ী বিদেশি অর্থায়ন। ১.৮৫ কিলোমিটার মূল সেতুর পাশাপাশি ৭.৫১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ২.২ কিলোমিটার নদী শাসন একটি টোল প্লাজা ও দু’টি ওজন স্টেশন ২.১ কিমি ইন্টারচেঞ্জ (ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘ–১ অংশে) নির্মিত হবে। সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ২৫ মিটার যা ভবিষ্যৎ নৌপরিবহন ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর সেতুর স্থান পরিদর্শন করেন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ভিখারোদ্দৌলা ভুলু চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
সেতুটি নির্মিত হলে, রাজধানীর সাথে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ভোলার সাথে ঢাকার সরাসরি যাতায়াত সময় অর্ধেকে নেমে আসবে, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চাপ কমবে, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্য ও পর্যটনে বড় পরিবর্তন আসবে, জমির মূল্য বৃদ্ধি ও নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, জিডিপিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আসবে (০.২৩% পর্যন্ত)।

