নোবিপ্রবিতে এক বছরেও হয়নি ছাত্রলীগের বিচার

নাহিদুল ইসলাম, নোবিপ্রবি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৭

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের অগ্রগতি নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩২টি অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগের মধ্যে মাত্র দুটির তদন্ত শেষ হয়েছে। গড়িমসি ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই বিচার বিলম্বিত হচ্ছে বল জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদধারী নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে মারধর, হুমকি, জোরপূর্বক অবস্থান দখল এবং একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে। এতসব অভিযোগ জমা পড়লেও মাত্র দুটি অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। বাকি ৩০টি অভিযোগের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের পর পুরনো প্রশাসনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন শিক্ষার্থীরা ন্যায়বিচারের আশায় অভিযোগ জমা দিতে শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। কিন্তু প্রায় এক বছর পরও সেই কমিটির কাজের অগ্রগতি খুবই সীমিত।

তদন্তসম্পন্ন দুটি ঘটনার একটি হলো আব্দুস সালাম হলে ১১তম ও ১৩তম ব্যাচের পাঁচ শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, যেখানে শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জাহিদ হাসান শুভসহ ২২ জন অভিযুক্ত। অন্যটি আইন অনুষদের এক শিক্ষার্থীর করা অভিযোগ, যেখানে অভিযুক্ত হন ওই অনুষদের ছাত্রলীগের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই দুটি রিপোর্ট তিন মাস আগে জমা পড়লেও প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার এমআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান ফাহিম বলেন, এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে অভিযোগ জমা দিয়েছি। এর মধ্যে আমাদের চারবার ডাকা হলেও অভিযুক্তদের একবারও ডাকা হয়নি। বারবার নতুন নতুন কমিটি গঠনের ফলে উল্টো আমাদেরকেই হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে একটি বিপ্লবের ফসল, তারা তা বিশ্বাস করে না। ২০২৪-এ অভিযোগ দেওয়ার পরই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সু্যোগ ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই জায়গায় নিজেদের সাহসের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। 

আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি থেকে হুটহাট ফোন দিয়ে বলা হয়, আশরাফুল আপনি কোথায় আছেন? আপনার একটা অভিযোগ ছিল। আপনি এখন আসতে পারবেন? আপনার থেকে সরাসরি ঘটনা জানতে চাই। আমি বলতাম, স্যার, আমি ঢাকায় শিফট করে ফেলছি। ভার্চুয়ালি কিছু করা যায় কি-না দেখেন। ওনারা বলেন, আচ্ছা দেখতেছি। এই হচ্ছে, বিচারের নমুনা।

এ বিষয়ে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পরপরই দুটি অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এর আগে এই কমিটির দায়িত্বে অন্য শিক্ষকরা ছিলেন। তবে এক্ষেত্রে যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের অসহযোগিতা এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের অভাবে কিংবা সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে অনীহার কারণে অনেক অভিযোগের তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এটি একটি প্রশাসনিক দুর্বলতা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করার পর থেকেই কয়েক ধাপে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরে বিভিন্ন সময়ে প্রক্টর অফিসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে করা ৩২টি অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে, যা ২৯ এপ্রিল ২০২৫ সালে কমিটির কাছে পাঠানো হয়, যেখানে দুটি অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যারা অভিযোগ করে তারা পরে নিজেদের মধ্যে সমাধান করে ফেলে। যার কারণে সব অভিযোগের বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। 

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়ে দুটি রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। রিজেন্ট বোর্ডের পরামর্শক্রমে আইনি মতামতের জন্য রিপোর্টগুলো পাঠানো হয়েছে। অধিকাংশ অভিযোগের বিচার না হওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যারা অভিযোগ করেছে তারা আর রেসপন্স করে না। কিংবা সাক্ষী যারা তারাও সাক্ষ্য দিতে আসে না। এতে করে সবগুলো অভিযোগের তদন্ত শেষ করা আর সম্ভব হয় না। 

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত