কনটেইনার ধারণক্ষমতা বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৩০

ঊর্ধ্বমুখী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চাপ সামলাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অল্প সময়েই সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ হয়েছে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো। বিভিন্ন পরিত্যক্ত ও দেশি-বিদেশি কোম্পানির দখলে থাকা জমি উদ্ধার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ইয়ার্ডে রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার জমা থাকলেও অপারেশনাল কাজ চলছে স্বাভাবিকভাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ক’দিন আগেও বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ছিল ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতায় বর্তমান অবকাঠামোর কিছু সংস্কার করে এখন ৫৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রাখার সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। আরো কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৬২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, এটুকুতে সন্তুষ্টির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। আমদানি-রপ্তানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়াতে হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে মোট ছয়টি কনটেইনার ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি)-তে ১৯ হাজার ৮০৮ টিইইউএস, চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি)-তে ৮ হাজার ৩৭৬ টিইইউএস, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-তে ১৩ হাজার ৮৭৬ টিইইউএস, নর্থ কনটেইনার ইয়ার্ড (এনসিওয়াই)-তে ২ হাজার ৪৫৮ টিইইউএস, সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড (এসসিওয়াই)-তে ৩ হাজার টিইইউএস এবং নিউমুরিং ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতা রয়েছে।

এর বাইরে অকশন ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কনটেইনারের নিলামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দরের ভেতরে আইনি জটিলতায় আটকে থাকা কয়েকশ গাড়ি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে ভাড়ার নামে দখলে থাকা এক্স-ওয়াই শেডের একাংশ উদ্ধার করে কনটেইনার রাখার স্থান তৈরি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব অব্যবহৃত জায়গা কাজে লাগানোর ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার টিইইউএস ধারণক্ষমতা বেড়েছে।

সম্প্রতি কাস্টমসের আন্দোলন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াসহ নানা কারণে বহিঃনোঙরে জাহাজের জট বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের জলসীমায় ১০০ থেকে ১০৫টি জাহাজ অবস্থান করে, কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা ১২০ থেকে ১২৫-এ পৌঁছে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একসঙ্গে ১০টি জাহাজকে বার্থিং দিলেও, পরবর্তী সময়ে গাদাগাদি করে ১৩টি পর্যন্ত জাহাজ বার্থিং দিতে শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ইয়ার্ডে কনটেইনারের মজুত বেড়ে যায়। সাধারণত ৩২ থেকে ৩৫ হাজার কনটেইনার মজুত থাকে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা ৪৭ থেকে ৪৮ হাজারে ওঠানামা করছে। এতে কনটেইনার জটের আশঙ্কা তৈরি হয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ঊর্ধ্বমুখী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের তুলনায় ৫৩ থেকে ৬০ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতা একেবারেই অপ্রতুল। এটি বহুগুণে বাড়াতে হবে। তবে সংকট সমাধানে যেভাবে বিভিন্ন পকেটে থাকা অব্যবহৃত জায়গাগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে আরো সুফল পাওয়া যেত। তবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন বন্দর চিন্তা ছাড়া বিকল্প নেই। যত দ্রুত সম্ভব বে টার্মিনাল চালু করতে হবে বলেও জানান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত