ফেনী সরকারি কলেজে নারী হেনস্থাকারী শিক্ষকের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত বিপ্লব কুমার শুধু শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, তিনি শিক্ষিকাদেরকেও হেনস্থা করতেন। যতদিন বিপ্লব কুমারের বিচার হবেনা, ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া বিপ্লব কুমারকে রক্ষায় মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের উদ্দেশ্য করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আপনাদের কি মা-বোন ও কন্যা সন্তান নেই? তাদেরকে যদি এমন হেনস্তা করা হতো;তখনও কি এ লম্পট শিক্ষকের জন্য আপনারা সুপারিশ করতেন?
মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীদের ঘোষণা-বিপ্লব কুমারের উপযুক্ত বিচার না হলে; পরবর্তী যে কোনো পরিস্থিতির জন্য ফেনী জেলা প্রশাসক, কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নেতারা দায়ী থাকবেন।
এদিকে ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অভিযুক্ত বিপ্লব কুমার শীলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
গত শনিবার কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. এনামুল হক খন্দকার বিষয়টি আমার দেশকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রফেসর এনামুল হক খন্দকার বলেন, ‘শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছিল সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম।
তদন্ত কমিটি আমাদের যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। সে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২৩ নভেম্বর হিজাব পরায় বিপ্লব কুমার শীলের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের শিকার হন ফাতিমা আইমান রুহী নামে ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রী পরদিন কলেজ অধ্যক্ষের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। দুইদিনে তদন্ত কমিটির নিকট ডজনখানেক ছাত্রী ও দুই শিক্ষিকা অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এর মধ্যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের শিকার কলেজের ইংরেজি বিভাগের ওই ছাত্রী ফাতিমা আইমান রুহীকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এঘটনায় রুহীর পক্ষ থেকে ফেনী মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়।
জিডিতে উল্লেখ করে, ‘২৩ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় টিউশন শেষে হোস্টেলে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিপ্লব কুমার শীল স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে আমার পরিহিত হিজাব বোরকা, পর্দা এবং সৌন্দর্য্য নিয়ে আমাকে কুরুচিপূর্ণ এবং অসংলগ্ন মন্তব্য করেন।
বিশেষ করে আমার ধর্মীয় রীতি অনুসারে পর্দা বা হিজাব সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে নিরাপত্তাবোধকে আঘাত করেছে।
পরদিন ২৪ নভেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকি। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগে তদন্ত চলমান রয়েছে।’
জিডিতে আরও উল্লেখ করে বলা হয়, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করার পর ২৫ ও ২৬ নভেম্বর আমাকে আমার ব্যবহৃত যোগাযোগ অ্যাপস চিঠি মি এর মাধ্যমে আমার আইডিতে বেনামি আইডি থেকে হুমকি প্রদান করে আসতেছে।’
এমতাবস্থায় আমি আমার জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং আমার ধারণা উক্ত শিক্ষক ও তাহার লোকজন আমাকে হুমকি দিয়ে আসছে। অতএব উপরোক্ত আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনার যেন মর্জি হয়।’


হিজাব পরায় শিক্ষার্থীকে কটাক্ষের অভিযোগ
বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি