ড্রেনেজ, অবকাঠামো, স্যানিটেশনসহ সার্বিক উন্নয়নবঞ্চিত ও জরাজীর্ণ সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুরহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটের মধ্যে হাঁটুপানি জমে যায়। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ গোহাতে হচ্ছে । অন্যদিকে দীর্ঘদিনে হাটের সংস্কার না করায় প্রভাবশালীরা হাটের জায়গা দখলের উৎসবে মেতে উঠেছে। প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন ও মানববন্ধন করেও মিলছে না সমস্যার সমাধান।
জানা গেছে, প্রতি বছর যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে বেলকুচি-চৌহালী ও এনায়েতপুরের তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা দিশাহারা হয়ে পড়তেন। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এবং তাঁতের গৌরব ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মনজুর কাদের ২০০৬ সালে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ একর জমির ওপর দেশের বৃহত্তম এনায়েতপুর কাপড়ের হাট নির্মাণ করেন। হাটটি প্রথম পর্যায়ে সরকারিভাবে ১৮ লাখ টাকা ইজারা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার কোটিতে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। হাটটি নির্মাণের ফলে বদলে গেছে এ জনপদের দৃশ্য। এখানে প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটবার।
এছাড়া রোববার ও বুধবার দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট বসে । এই হাটবারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ভারতের ক্রেতারাও এই হাটে আসত। প্রতি হাটে চার থেকে পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর সমাগম ঘটে এবং কোটি টাকার অধিক পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। এ হাট থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় করলেও সেই তুলনায় দীর্ঘ দেড় যুগেও হাটের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি । বিশেষ করে ২০১০ সালে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এনায়েতপুর থানার সামনে হাটের প্রাণকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণসহ প্রভাবশালী নেতারা নামে বেনামে অবৈধভাবে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এতে দখল হয়ে গেছে হাটের ভূমির প্রায় ২১.৩৮ একর জমি । এসব জটিলতায় আটকে থাকে হাটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর এনায়েতপুর হাটের জায়গা উদ্ধার ও হাটটি সংস্কারের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর তিনবার আবেদন করেও মিলছে না কোনো সমাধান।
সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুরের হাটের অবকাঠামোগুলো দিনের পর দিন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবাসিক হোটেল না থাকায় দূর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই হাটের মধ্যে হাঁটুপানি জমে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । শুধু তাই নয়, দোকানগুলোর টিনের চালা নষ্ট হয়ে মালপত্র ভিজে যায়। বৃহৎ হাটে নেই কোনো শেড, ড্রেন ব্যবস্থা আর পাবলিক টয়লেট।
নিরাপত্তা ও হাটের উন্নয়নে শেড, ড্রেন নির্মাণসহ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি এখানে কাপড় কিনতে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো এবং এখানকার তৈরি শাড়ি-লুঙ্গির দাম ভালো থাকায় চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য কাপড় কিনতে এসে সমস্যায় পড়তে হয়।

