নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
গ্রাহকদের বিপুল মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগ তুলছে ‘অতিথি ডটকম’ নামের একটি কোম্পানি। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রস্তাবিত রিসোর্টের নামে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ শুরু না হলেও বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন অবিশ্বাস্য হারে মুনাফা। আবার গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে মিলছে নগদ অর্থসহ নানা পুরস্কার। এ ছাড়া অ্যাপস বিক্রির মাধ্যমেও তোলা হচ্ছে অর্থ। এমন পরিস্থিতিতে মুনাফা হিসেবে কিছু অর্থ ফেরত পেলেও বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় রয়েছেন কবে ডেসটিনির মতো অতিথি ডটকমও উধাও হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ, সেনা, বিমানবাহিনী ও দুদক কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা মিলে গড়ে তুলেছেন অতিথি ডটকম নামের কোম্পানিটি। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকার গুলশানের পুলিশ প্লাজায় অফিস নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন তারা। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বরিশাল, খুলনা ও হবিগঞ্জে খোলা হয়েছে শাখা অফিস। কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটিকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করলেও এর কার্যক্রম মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির মতো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডেসটিনির পিএসডি গ্রাহক লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল। এছাড়া কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি আব্দুল জলিল মণ্ডল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল হান্নান, সাবেক দুদক পরিচালক তালেবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব আলী আহম্মেদ মাহমুদ, পুলিশ সুপার নুরুন্নবী মৃধা, খাদ্য বিভাগের ডিসি ড. সিরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহেদুর রহমান, চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন নজরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী এসএম শাহীন প্রমুখ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এসব সাবেক আমলা ও প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন পলাতক হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ ও ঘনিষ্ঠ। এ সুযোগে তারা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আর তাদের অবৈধ টাকা দিয়েই গড়ে তুলেছেন অতিথি ডটকম নামের এই এমএলএম কোম্পানিটি।
কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, সারা দেশে ১০ লক্ষাধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে এই কোম্পানির। ইতোমধ্যে তিন লক্ষাধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা হতে একজনকে সর্বনিম্ন তিন লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রস্তাবিত অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্কের একটি শেয়ার বাবদ এই টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ ছাড়া ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাপস বিক্রি করা হয় গ্রাহকের কাছে।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে অতিথি ডটকমের অ্যাপ ডাউনলোড করে দেখা যায়, এতে ঢুকতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এজন্য প্রত্যেক উদ্যোক্তার কাছ থেকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের কথা বলে নেওয়া হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। এসব গ্রাহককে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ট্রেনিংয়ে শেখানো হচ্ছে নতুন এজেন্ট কীভাবে তৈরি করতে হবে। এভাবে যে যত বেশি এজেন্ট নিয়োগ করাতে পারবেন, তিনি তত বেশি বোনাস ও পুরস্কার পাবেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অতিথি ডটকমে গ্রাহক বৃদ্ধি করতে পারলে রয়েছে নগদ অর্থসহ নানা পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে—উদ্যোক্তারা নতুন গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে পাবেন আট হাজার টাকা বোনাস। উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারলে মিলবে একটি রাইসকুকার। তিনজন গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে পাওয়া যাবে ওয়াশিং মেশিন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চলছে কোম্পানিটির কার্যক্রম।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্ক প্রকল্পে শেয়ার রয়েছে ৪৩ হাজার। এর মধ্যে ২০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজার শেয়ার ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সে হিসাবে ১৫ হাজার শেয়ারের দাম ৪৬৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা অবিশ্বাস্য হারে মুনাফাও পাচ্ছেন। আবার অ্যাপস বিক্রি করেও বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার ঘনশ্যামপুর এলাকায় নির্মাণ করা হবে এই রিসোর্ট। সেখানে অতিথি ডটকমের নামে ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এখানে কোনো বাউন্ডারি ওয়াল বা সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। খালি জমি পড়ে আছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিথি ডটকম তাদের এলাকায় জমি কিনেছে রিসোর্ট বানাবে বলে। তবে কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি বা মালিক কেউ কখনো এখানে আসেননি।
অতিথি ডটকমের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বরিশালের একাধিক গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, লাভের আশায় তারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে হতে যাওয়া রিসোর্টের শেয়ার কিনেছেন।
এক বিনিয়োগকারী জানান, এই কোম্পানিতে তার বিনিয়োগ দুই লাখ টাকার। তিনি এখন মাসে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন। তবে কতদিন পাবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিনিয়োগকারী জানান, তিনি বিনিয়োগ করেছেন ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা। গত পাঁচ মাসে তিনি আড়াই লাখ টাকা মুনাফা পেয়েছেন। কীভাবে এ মুনাফা হয় জানতে চাইলে এর ব্যাখ্যা তার কাছে নেই বলে জানান এই বিনিয়োগকারী।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে বরিশাল অফিসে গেলে সেখানে থাকা কর্মকর্তারা জানান, তাদের ব্যবসা অবৈধ নয়। তারা বিভিন্ন অ্যাপস ও রিসোর্টের শেয়ার বিক্রি করেন। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, হোটেল, গাড়ি ও পরিবহন তাদের মাধ্যমে বুকিং দেওয়া যায়।
সার্বিক বিষয়ে অতিথি ডটকমের বরিশাল অফিসের সিনিয়র এজিএম (ডেভেলপমেন্ট) লায়ন অনিক তালুকদার আমার দেশকে বলেন, অতিথি ডটকম কোনো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি নয়। এটি একটি গ্রুপ অব কোম্পানি। বিদেশেও আমাদের কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে।
কোম্পানির বরিশাল অফিসের সিনিয়র এজিএম (সেলস) শফিকুল ইসলাম বলেন, এটি ডেসটিনির মতো কিছু নয়। এখানে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে রিসোর্টের শেয়ার কিনতে পারেন উদ্যোক্তারা। আমাদের কোম্পানিতে দুই ধরনের সদস্য রয়েছেন। এক শ্রেণির সদস্য হলেন ইউজার; অপর শ্রেণির সদস্য হলেন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তারা কাজ করে লাভ নিচ্ছেন।
লাখ লাখ উদ্যোক্তাকে কীভাবে লভ্যাংশ দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির লাভের একটি অংশ তাদের দেওয়া হচ্ছে।
অতিথি ডটকমের এমএলএম ব্যবসা প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের নম্বরে ফোন করা হয়। মাহমুদ নামে একজন কল রিসিভ করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানের এমডির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এমডি স্যার এভাবে ফোনে কথা বলেন না। যদি কথা বলতে হয়, আপনি অফিসে আসুন, সামনাসামনি কথা বলুন, চা খেয়ে যান।
তার পরিচয় জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আপনার নম্বর আমি এমডিকে দিয়ে দেব। প্রয়োজনে তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।
এরপর ওই ব্যক্তি কল কেটে দেন। তবে এমডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই প্রতিবেদকের কাছে কোনো কল আসেনি।
ঢাকা-মাওয়া রোডের পাশে থিম পার্কের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে অতিথি ডটকমের সিনিয়র জিএম বিশ্বজিৎ গুহ আমার দেশকে বলেন, সেরা মানের অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্কের জন্য ১৭ একর জমি কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানকার জেলা প্রশাসকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
অতিথি ডটকমের এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনো এমএলএম টাইপের কোম্পানি নয়, গ্রুপ অব কোম্পানি। আমরা জমি ক্রয়-বিক্রয় করছি। তাই এটিকে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিও বলতে পারেন।
কোম্পানির জিএম মিজানুর রহমান বলেন, রিসোর্টের নামে ঢাকা-মাওয়া রোডে পাঁচ একর তিন শতক জমি কেনা হয়েছে। এ প্রকল্পের বিপরীতে ইতোমধ্যে ১৩ হাজারের বেশি শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজশাহীতে একটি আবাসিক হোটেল কেনা হয়েছে। ওই হোটেলের বিপরীতে এক হাজার থেকে ১৫০০ শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাপসের শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। তবে এখনো বিক্রির অনুমতি পাওয়া যায়নি, তাই বিক্রি শুরু করা হয়নি।
কোম্পানির ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনো এমএলএম কোম্পানি নয়। আবাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, সরকার যেখানে এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে বরিশালে এমএলএম কোম্পানির আদলে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিষয়টি জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব কীভাবে তারা এমন ব্যবসা করছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সার আমার দেশকে বলেন, বরিশাল নগরীতে কোনো প্রতিষ্ঠান এমএলএম ব্যবসা করে থাকলে বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। অস্বাভাবিক ও অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড করে থাকলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গ্রাহকদের বিপুল মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগ তুলছে ‘অতিথি ডটকম’ নামের একটি কোম্পানি। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রস্তাবিত রিসোর্টের নামে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ শুরু না হলেও বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন অবিশ্বাস্য হারে মুনাফা। আবার গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে মিলছে নগদ অর্থসহ নানা পুরস্কার। এ ছাড়া অ্যাপস বিক্রির মাধ্যমেও তোলা হচ্ছে অর্থ। এমন পরিস্থিতিতে মুনাফা হিসেবে কিছু অর্থ ফেরত পেলেও বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় রয়েছেন কবে ডেসটিনির মতো অতিথি ডটকমও উধাও হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ, সেনা, বিমানবাহিনী ও দুদক কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা মিলে গড়ে তুলেছেন অতিথি ডটকম নামের কোম্পানিটি। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকার গুলশানের পুলিশ প্লাজায় অফিস নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন তারা। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বরিশাল, খুলনা ও হবিগঞ্জে খোলা হয়েছে শাখা অফিস। কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটিকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করলেও এর কার্যক্রম মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির মতো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডেসটিনির পিএসডি গ্রাহক লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল। এছাড়া কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি আব্দুল জলিল মণ্ডল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল হান্নান, সাবেক দুদক পরিচালক তালেবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব আলী আহম্মেদ মাহমুদ, পুলিশ সুপার নুরুন্নবী মৃধা, খাদ্য বিভাগের ডিসি ড. সিরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহেদুর রহমান, চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন নজরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী এসএম শাহীন প্রমুখ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এসব সাবেক আমলা ও প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন পলাতক হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ ও ঘনিষ্ঠ। এ সুযোগে তারা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আর তাদের অবৈধ টাকা দিয়েই গড়ে তুলেছেন অতিথি ডটকম নামের এই এমএলএম কোম্পানিটি।
কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, সারা দেশে ১০ লক্ষাধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে এই কোম্পানির। ইতোমধ্যে তিন লক্ষাধিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা হতে একজনকে সর্বনিম্ন তিন লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রস্তাবিত অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্কের একটি শেয়ার বাবদ এই টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ ছাড়া ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাপস বিক্রি করা হয় গ্রাহকের কাছে।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে অতিথি ডটকমের অ্যাপ ডাউনলোড করে দেখা যায়, এতে ঢুকতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এজন্য প্রত্যেক উদ্যোক্তার কাছ থেকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের কথা বলে নেওয়া হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। এসব গ্রাহককে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ট্রেনিংয়ে শেখানো হচ্ছে নতুন এজেন্ট কীভাবে তৈরি করতে হবে। এভাবে যে যত বেশি এজেন্ট নিয়োগ করাতে পারবেন, তিনি তত বেশি বোনাস ও পুরস্কার পাবেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অতিথি ডটকমে গ্রাহক বৃদ্ধি করতে পারলে রয়েছে নগদ অর্থসহ নানা পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে—উদ্যোক্তারা নতুন গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে পাবেন আট হাজার টাকা বোনাস। উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারলে মিলবে একটি রাইসকুকার। তিনজন গ্রাহক সৃষ্টি করতে পারলে পাওয়া যাবে ওয়াশিং মেশিন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চলছে কোম্পানিটির কার্যক্রম।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্ক প্রকল্পে শেয়ার রয়েছে ৪৩ হাজার। এর মধ্যে ২০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজার শেয়ার ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সে হিসাবে ১৫ হাজার শেয়ারের দাম ৪৬৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা অবিশ্বাস্য হারে মুনাফাও পাচ্ছেন। আবার অ্যাপস বিক্রি করেও বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার ঘনশ্যামপুর এলাকায় নির্মাণ করা হবে এই রিসোর্ট। সেখানে অতিথি ডটকমের নামে ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এখানে কোনো বাউন্ডারি ওয়াল বা সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। খালি জমি পড়ে আছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিথি ডটকম তাদের এলাকায় জমি কিনেছে রিসোর্ট বানাবে বলে। তবে কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি বা মালিক কেউ কখনো এখানে আসেননি।
অতিথি ডটকমের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বরিশালের একাধিক গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, লাভের আশায় তারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে হতে যাওয়া রিসোর্টের শেয়ার কিনেছেন।
এক বিনিয়োগকারী জানান, এই কোম্পানিতে তার বিনিয়োগ দুই লাখ টাকার। তিনি এখন মাসে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন। তবে কতদিন পাবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিনিয়োগকারী জানান, তিনি বিনিয়োগ করেছেন ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা। গত পাঁচ মাসে তিনি আড়াই লাখ টাকা মুনাফা পেয়েছেন। কীভাবে এ মুনাফা হয় জানতে চাইলে এর ব্যাখ্যা তার কাছে নেই বলে জানান এই বিনিয়োগকারী।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে বরিশাল অফিসে গেলে সেখানে থাকা কর্মকর্তারা জানান, তাদের ব্যবসা অবৈধ নয়। তারা বিভিন্ন অ্যাপস ও রিসোর্টের শেয়ার বিক্রি করেন। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, হোটেল, গাড়ি ও পরিবহন তাদের মাধ্যমে বুকিং দেওয়া যায়।
সার্বিক বিষয়ে অতিথি ডটকমের বরিশাল অফিসের সিনিয়র এজিএম (ডেভেলপমেন্ট) লায়ন অনিক তালুকদার আমার দেশকে বলেন, অতিথি ডটকম কোনো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি নয়। এটি একটি গ্রুপ অব কোম্পানি। বিদেশেও আমাদের কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে।
কোম্পানির বরিশাল অফিসের সিনিয়র এজিএম (সেলস) শফিকুল ইসলাম বলেন, এটি ডেসটিনির মতো কিছু নয়। এখানে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে রিসোর্টের শেয়ার কিনতে পারেন উদ্যোক্তারা। আমাদের কোম্পানিতে দুই ধরনের সদস্য রয়েছেন। এক শ্রেণির সদস্য হলেন ইউজার; অপর শ্রেণির সদস্য হলেন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তারা কাজ করে লাভ নিচ্ছেন।
লাখ লাখ উদ্যোক্তাকে কীভাবে লভ্যাংশ দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির লাভের একটি অংশ তাদের দেওয়া হচ্ছে।
অতিথি ডটকমের এমএলএম ব্যবসা প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের নম্বরে ফোন করা হয়। মাহমুদ নামে একজন কল রিসিভ করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানের এমডির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এমডি স্যার এভাবে ফোনে কথা বলেন না। যদি কথা বলতে হয়, আপনি অফিসে আসুন, সামনাসামনি কথা বলুন, চা খেয়ে যান।
তার পরিচয় জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আপনার নম্বর আমি এমডিকে দিয়ে দেব। প্রয়োজনে তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।
এরপর ওই ব্যক্তি কল কেটে দেন। তবে এমডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই প্রতিবেদকের কাছে কোনো কল আসেনি।
ঢাকা-মাওয়া রোডের পাশে থিম পার্কের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে অতিথি ডটকমের সিনিয়র জিএম বিশ্বজিৎ গুহ আমার দেশকে বলেন, সেরা মানের অতিথি রিসোর্ট অ্যান্ড থিম পার্কের জন্য ১৭ একর জমি কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানকার জেলা প্রশাসকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
অতিথি ডটকমের এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনো এমএলএম টাইপের কোম্পানি নয়, গ্রুপ অব কোম্পানি। আমরা জমি ক্রয়-বিক্রয় করছি। তাই এটিকে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিও বলতে পারেন।
কোম্পানির জিএম মিজানুর রহমান বলেন, রিসোর্টের নামে ঢাকা-মাওয়া রোডে পাঁচ একর তিন শতক জমি কেনা হয়েছে। এ প্রকল্পের বিপরীতে ইতোমধ্যে ১৩ হাজারের বেশি শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজশাহীতে একটি আবাসিক হোটেল কেনা হয়েছে। ওই হোটেলের বিপরীতে এক হাজার থেকে ১৫০০ শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাপসের শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। তবে এখনো বিক্রির অনুমতি পাওয়া যায়নি, তাই বিক্রি শুরু করা হয়নি।
কোম্পানির ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনো এমএলএম কোম্পানি নয়। আবাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, সরকার যেখানে এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে বরিশালে এমএলএম কোম্পানির আদলে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিষয়টি জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব কীভাবে তারা এমন ব্যবসা করছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সার আমার দেশকে বলেন, বরিশাল নগরীতে কোনো প্রতিষ্ঠান এমএলএম ব্যবসা করে থাকলে বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। অস্বাভাবিক ও অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড করে থাকলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় পলাতক দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
৩৫ মিনিট আগেপরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে শামসুদ্দিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ যোদ্ধা।
৪২ মিনিট আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভেতরে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক সাবেক নেতা। ঘটনার পর তাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক মো. রায়হান হাটহাজারি কলেজ শিবিরের সাবেক সভাপতি।
১ ঘণ্টা আগেসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে আসে তা জানার পরই সাথে সাথে কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের মানুষ ইলিশ খাবে সাগরে যেন কেউ চুরি করে মাছ ধরতে না পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে