শেবাচিম হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকের দৌরাত্ম্য

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১২: ১৮

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে শয্যা আছে হাজারখানেক। রোগী ভর্তি হন তার কয়েকগুণ। এর বাইরে হাজার হাজার রোগী বহির্বিভাগে সেবা নেন। তাদের অধিকাংশেরই প্রয়োজন হয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এই সেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের রয়েছে মাত্র ৯টি গাড়ি। আবার সেই যানগুলো চালানোর জন্য লোকবল আছে তিনজন। তাদের মধ্যে দুজন দুই কর্মকর্তার গাড়ি চালান। এভাবে কৌশলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রাখায় দৌরাত্ম্য বেড়েছে বেসরকারি চালকদের।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ আছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করার জন্য শেবাচিম হাসপাতালের পুরো সেবা কবজায় নিয়েছেন। এর জন্য তারা হাত করেছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট সেবা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে। তাকে নিয়মিত কমিশন দেওয়ার চুক্তিতে অচল করে রাখা হয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। একইভাবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকদেরও মাসোহারা দেওয়া হয়। এতে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন রোগীরা। চিকিৎসা খরচ জোগাতে না পারলেও গলাকাটা ভাড়া চুকাতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীকে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শেবাচিম হাসপাতালের কাগজে-কলমে ৯টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও বাস্তবে রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে তিনটি বিকল। অপর চারটির জন্য মাত্র একজন চালক থাকায় প্রকৃতপক্ষে এই সেবা কেউ পান না। নানা অজুহাতে বন্ধ করে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের যোগসাজশে নিরুপায় দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ সেবাপ্রার্থী।

সূত্রটি আরো জানায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় যাওয়া ও আসার ভাড়া তিনশ’ টাকা। কিন্তু বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালককে দিতে হচ্ছে এর অন্তত আড়াই গুণ। একইভাবে নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে মাইল প্রতি যাওয়া ও আসায় ভাড়া ২০ টাকা। আর বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে গুনতে হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এতে গরিব ও অসহায় মানুষের পক্ষে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অটোরিকশা, মহেন্দ্রা কিংবা অন্য ছোট পরিবহনে রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা, মাঝে মধ্যে রাস্তায়ই প্রাণ হারাচ্ছে অনেক রোগী।

বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা সাব্বির হাওলাদার বলেন, তিন দিন আগে এক নিকটাত্মীয় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করলেও পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে তারা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে তিন হাজার টাকা দিয়েছে। অথচ সরকারি সেবায় এই খরচ হাজার টাকার নিচে।

জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিন্ডিকেট করে শেবাচিম হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ন্ত্রণ করতেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান শাহিন। জুলাই বিপ্লবের পর এই কারবার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তার ভাই বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান ইমন ও তার ছেলে অন্তু। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সগুলো অকার্যকর রেখে তারা অর্ধশত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রতিদিন রোগীদের পকেট কাটছেন।

বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো রোগী বহনের জন্য সড়কে দেখতে চাই, পাশাপাশি এ সংকট তৈরির পেছনে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

শেবাচিম হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেখাশোনা করেন উপ-পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন। তিনি আমার দেশকে বলেন, শয্যার সঙ্গে মিল রেখে অ্যাম্বুলেন্স বাড়ানো ও চালকসহ জনবল নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেক আগেই জানানো হয়েছে। কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তবে তাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

বিষয়:

শেবাচিম
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত