আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ঝালকাঠিতে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনি উত্তাপ। ভোট ও দোয়া চেয়ে প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে লড়াইয়ের ক্ষেত্র। তবে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে এখনো প্রার্থী নিশ্চিত করেনি বিএনপি। প্রচার চালাচ্ছেন দলের একাধিক নেতা। আবার দলটির সমর্থনে মাঠে আছেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও। অপরদিকে জামায়াত সমর্থন দিয়েছে ড. ফয়জুল হককে। সবশেষে তারা দুজনেই হতে পারেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
বিএনপি ও লেবার পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই আসনটি সম্ভাব্য জোটের অংশ হিসেবে লেবার পার্টিকে দেওয়া হচ্ছে।
২০১৮ সালেও ডা. ইরান ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে তখন তিনি জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে হেরে যান। এবারে পিরোজপুর-২ আসনে ভোটার এবং নির্বাচনি এলাকার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় ডা. ইরান পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি জোটের কাছে মনোনয়ন দাবি করেন। সম্প্রতি তিনি ভাণ্ডারিয়া থেকে তার নিজের ভোট পরিবর্তন করে রাজাপুরে এনেছেন। তার বাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় হলেও তার বাড়িটি রাজাপুরের একদম সীমান্তবর্তী এলাকায়। ইতোমধ্যে ডা. ইরানের পক্ষে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ায় প্রচার চলছে।
এদিকে এ আসনে বিএনপি জোট থেকে ইরানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে ভোটযুদ্ধে তিনি জামায়াতের প্রার্থী ড. ফয়জুল হকের মুখোমুখি হবেন। ফয়জুল হক ইতোমধ্যেই জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ করছেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, প্রথমে তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকেই তিনি নির্বাচন করবেন। ইরানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে তার জয় নিশ্চিত বলে তিনি মনে করেন।
ফয়জুল হকের প্রার্থিতার বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের আমির হাফিজুর রহমান আমার দেশকে বলেন, এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন ফয়জুল হকই, এটা এখন চূড়ান্ত।
এদিকে জেলা জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, এই আসনে জোটের প্রার্থী আসার খবরে ফয়জুল হক নির্বাচনি তৎপরতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরা মনে করেন, লেবার পার্টির পক্ষে বিএনপির সব ভোট নাও পড়তে পারে।
রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে একজন আওড়াবুনিয়া গ্রামের ভোটার নাসির উদ্দিন আকাশ। তিনি আমার দেশকে বলেন, গ্রামে-গঞ্জে আনারস প্রতীকের তেমন পরিচিতি নেই।
সাতুরিয়া গ্রামের ভোটার রাব্বি তালুকদার বলেন, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এখানে জোটের প্রার্থী দিলে জিতে আসা কঠিন হবে। তবে এই বক্তব্যের ভিন্ন মতও রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা নিরঙ্কুশ সমর্থন দিলে ইরান শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন।
এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আজিজুল হক আমার দেশকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে ইরান সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তাই এ আসন তাকে দিলে নিশ্চিত পরাজয় হবে।
ইরানের পক্ষে যদিও রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় নির্বাচনি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আমার দেশকে বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির মধ্যে ব্যাপক গ্রুপিং রয়েছে। আমি আশা করি, আমাকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে থাকবেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আসনটি আমি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারব।
এদিকে বিএনপি এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না দিলেও এখনো আশা ছাড়েননি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এখনও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মাঠে তৎপর রয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, নিউ ইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম ও গোলাম আজম সৈকত নির্বাচনি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এসব সমাবেশে উপস্থিত একাধিক নেতাকর্মী আমার দেশকে জানান, আমরা এখনো আশা ছাড়িনি। আমাদের প্রত্যাশা, কেন্দ্র এখানে আমাদের দলীয় প্রার্থীকেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেবে।
রফিকুল ইসলাম জামাল আমার দেশকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, এই আসনে আমিই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এবং আমাকে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমি নির্বাচনের মাঠে আছি। তিনি আমাকে উঠে যেতে না বলা পর্যন্ত আমি নির্বাচনি কাজ চালিয়ে যাব।
হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা আমার দেশকে বলেন, আমি মনে করি দল আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করে আমাকেই মনোনয়ন দেবে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাকেই আমরা স্বাগত জানাব। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রার্থী হলেও আমরা তাকে মেনে নেব।
একেএম রেজাউল করিম বলেন, এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি এখনো আশাবাদী।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে রয়েছেন জামাল অন্যদিকে হাবিবুর রহমানসহ সাতজন। তাদের অনেকেই ইরানের প্রতি কিছুটা নমনীয় বলে জানা গেছে।


ঢাকায় আসছেন বিশ্বের শীর্ষ ক্রেতারা
যুবদল নেতার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক, কারণ দর্শানোর নোটিশ