বাঁকখালীর ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৪
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৩

কক্সবাজার শহরের ঐতিহাসিক বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী বহুল আলোচিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বৃহৎ পরিসরে অভিযান শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। প্রথম দিনেই আভিযানিক দল আলোচিত আবদুল খালেক ওরফে খালেক চেয়ারম্যানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে অভিযান শুরু করেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাঁকখালীর কস্তুরাঘাট এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সেখানে অভিযানকে কেন্দ্র করে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কক্সবাজার নদীবন্দর (কস্তুরাঘাট) শাখার সহকারি পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। আজ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপাতত ৫ দিন ধরে এই অভিযান চলবে।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত সময় বাড়ানো হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন
তিনি।
সুত্র মতে, কক্সবাজারের প্রধান দুই নদীর একটি হলো বাঁকখালী। এই নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামি চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগষ্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

ওই নির্দেশনার এক সপ্তাহের মধ্যেই কক্সবাজার সফরে এসে বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত জরুরি সভায় যোগ দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। ওই বৈঠকের পরই উচ্ছেদ অভিযানের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামি চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস বলছে, কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট ছিল একসময়ের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ঘাট দিয়ে কক্সবাজার শহর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করতো জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখন সবই স্মৃতি হয়ে গেছে। এই জায়গাতে অন্তত ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস ও নদী ভরাট করে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক পাকা-সেমিপাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এভাবে নুনিয়াছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁকখালী নদী দখল করে নির্মিত হয়েছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা। জানা যায়, বাকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ। সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী।

এদের মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী ও এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কাশেমের নামও।
জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটারের বাকখালী নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছড়া দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়াছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথঅভিযান চালিয়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশকর্মীরা বলেন, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর টানা ৪৫ দিনে প্যারাবনের উচ্ছেদ করা জায়গায় ফের ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়ে। তবে এই পর্যন্ত কেউ দখলকারিদের বাধা দেয়নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত