৫০ হাজার মানুষের দুর্দশার কারণ ডলু খাল

সেলিম উদ্দিন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৫৫
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ০৩

বান্দরবানের টংকাবর্তী ইউনিয়ন থেকে উৎপত্তি হয়ে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডলু খাল এখন ৫০ হাজার মানুষের দুঃখের কারণ।

৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের ভাঙন প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ নেয়। একটানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডলু, হাতিয়া ও হাঙর খালের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়, ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এবং খালপাড়ের বাসিন্দারা বসতঘর বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন।

বিজ্ঞাপন

আধুনগরের সরদানী পাড়ায় ডলু খালের পাশে অবস্থিত গারাঙ্গিয়া রশিদিয়া সড়কে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই সড়কটি আধুনগর বাজার থেকে মছদিয়া হয়ে গারাঙ্গিয়ার আলুরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। অন্যদিকে, আধুনগর ইউনিয়নের হাতিয়ার খালে দক্ষিণ আধুনগর হিন্দুপাড়া ও সিকদার পাড়ায় নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, এ বছর টানা বর্ষণে হাতিয়ার খালে তিনটি নতুন ভাঙন দেখা দিয়েছে। ডলু খালের ভাঙন সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বসতঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। বারবার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, ধলিবিলা এলাকায় হাঙর খালের ভাঙন আরো বড় হয়েছে। এছাড়া, ফরিয়াদিরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে হাঙর খালের ভাঙনে প্রতি বছর লোকালয়ে পানি ঢুকে মুন্সির পাড়া, সিকদার পাড়া, দরগা মুড়া এবং নিজতালুক এলাকা প্লাবিত হয়।

উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ছুটার পাড়া এলাকায় ডলু খালের পাড় ঘেঁষে থাকা রাস্তাটির ভাঙন গত তিন বছরেও সংস্কার করা হয়নি। শুধু সড়ক নয়, ৫০ হাজার মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক রয়েছে।

লোহাগাড়া সদরের সুখছড়ি এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস কোম্পানি জানান, তার এলাকার সড়কটি ভারি বর্ষণে ভেঙে গিয়েছিল। উপজেলা প্রশাসন সড়কটির ভাঙন অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তীব্র স্রোতে সড়কটি আবারও ভেঙে গেছে এবং চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বালু উত্তোলন ও জনগণের অভিযোগ

আমিরাবাদের আব্দুল করিম বলেন, ডলু খালের বালু বিখ্যাত হওয়ায় বালুখেকোরা প্রতিনিয়ত শ্যালো মেশিন দিয়ে দুই শতাধিক জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে। এর ফলে খাল গভীর হয়ে পাড় ভেঙে যায়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যারা ক্ষমতায় আসে তারাই বালু তোলে। বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে তিনি বাধ্য হয়ে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ধীমান কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের একটি দল ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছে। জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি।

স্থানীয় জনগণ ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ এবং নদী শাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ডলু খালের ভাঙন একটি গুরুতর সমস্যা, যা স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। ভাঙনের কারণে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং বাড়িঘর ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত