আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস ও স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনিরের বিরুদ্ধে বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্সের দায়ের করা মামলার ঘটনায় জেলা ও নগরজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকরা আমার দেশ'র দুই সাংবাদিকের ছবি যুক্ত করে নানাভাবে নিন্দা জানাতে থাকেন৷ তারা অবিলম্বে কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্সের এমডি মামলাবাজ ও নদীখেকো আবদুর রশিদের দায়ের করা বানোয়াট, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন৷ অন্যথায় সাংবাদিকরা আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এর আগে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাবাজ খ্যাত, বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্সের এমডি আবদুর রশিদের পক্ষে মামলার বাদী হন তারই প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নজরুল ইসলাম৷ মামলায় আমার দেশ পত্রিকায় গত ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত "চসিকের উদ্যোগে ১৫ ভবন ভাঙার পরিকল্পনা, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা" সংবাদের জন্য শতকোটি টাকার মানহানির হয়েছে বলে দাবি করেন আবদুর রশিদ।
এদিকে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে৷ শুধু নগর নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক নুর নবী রবিন লিখেছেন, আমার দেশ পত্রিকার দুই সাহসী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ রায়হান লিখেছেন, অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ অন্যথায় সাংবাদিকরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে৷ সাংবাদিক মাসুম খান লিখেছেন, এসব মামলা দিয়ে সত্যকে কখনও আড়াল করা যাবে না, সত্যের জয় হবেই, হবে।
নগরের সাংবাদিকদের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরাও নিন্দার ঝড় তুলেছেন ফেসবুক ও ইউটিউবে। মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ভূমিদস্যু ঠিকাদারের দায়ের করা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। আমার দেশ'র দুই সাংবাদিক সাংবাদিকতা ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এবং তারা মানবাধিকার কর্মীও।
সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সুলাইমান মেহেদী হাসান লিখেছেন, মামলা করে সাংবাদিকদের দমানো যাবে না, আমার দেশ যেমন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার জন্য লড়াই করছে, তেমনি এই পত্রিকার সাংবাদিকরাও ব্যতিক্রম নয়। আবদুর রশিদরা মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকরা এসব পরোয়া করেন না। এছাড়াও জেলার সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া লোহাগাডা, চন্দনাইশ উপজেলা কর্মরত সাংবাদিকরা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানান।
এছাড়াও জুলাই যোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-প্রেশার মানুষ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।
এদিকে আমার দেশ'র দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য আমার দেশ পত্রিকার দুই সাংবাদিক যথাক্রমে সোহাগ কুমার বিশ্বাস ও এম কে মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা, বানোয়াট মামলা তুলে নিতে হবে৷ অন্যথায় সাংবাদিকরা আন্দোলনে যাবে৷
উল্লেখ্য, আবদুর রশিদ (৭০) এর আগে প্রথম আলো, যুগান্তর, যায়যায়দিন, নয়াদিগন্ত, মাছরাঙা টেলিভিশন, দৈনিক আজাদীসহ দেশের ১৭ টি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমার দেশের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তার ১৮ তম মামলা। এসব কারণে তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক অঙ্গনে মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। তিনি এসব মামলার তালিকা পিডিএফ করে রাখেন। যখনই কেউ তার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম সম্পর্কে বক্তব্য নিতে চায় তার হোয়াটসঅ্যাপে তালিকাটি পাঠিয়ে ভয় দেখান৷ গত শুক্রবার তিনি একই কায়দায় আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচির হোয়াটসঅ্যাপে তালিকাটি পাঠান৷ এরপর আমার দেশের তিন সাংবাদিককে অনলাইনে দেওয়া আইনি নোটিশ চট্টগ্রামের সব সাংবাদিককে পাঠান৷

