আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

কক্সবাজারে ১৫ বছর পর ভূ-গর্ভস্থ পানি পাওয়া যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারে ১৫ বছর পর ভূ-গর্ভস্থ পানি পাওয়া যাবে না

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী রেজা বলছেন, আগামী ১০-১৫ বছর পর কক্সবাজারে ভূ-গর্ভস্থ পানি আর পাওয়া যাবে না। পকেটে ডলার থাকলেও আমরা খাদ্য কিনতে পারবো না।

বিজ্ঞাপন

শনিবার দুপুরে শহরের অরুণ্যদয় স্কুল মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা সম্মেলনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের ‘নাগরিক সমাজের বার্তা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় তিনি কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ‘সিটি ট্যাক্স’ দিতে হবে বলেও প্রস্তাব তুলেন। তিনি বলেন, ওই সিটি ট্যাক্স আবাসিক হোটেল গুলো আদায় করবে। আর এই টাকা দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে।

এমন সব মন্তব্য উঠে এসেছে কক্সবাজারে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলনে।

জাতিসংঘের ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও কক্সবাজারের সন্তান রেজাউল করিম চৌধুরী রেজা। ওই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা ও রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক কক্সবাজার জেলার জনগণের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে প্রস্তাবণা উপস্থাপনের জন্যই সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এই সভা ডাকা হয়।

সভায় জানানো হয়, রোহিঙ্গা শিবিরে এখন ১৩ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। এছাড়াও উখিয়া-টেকনাফে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশিদের বসবাস। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলে ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। শুধুমাত্র রোহিঙ্গা শিবিরেই প্রতিদিন ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। আগে ৭০-৮০ ফুট নিচে গেলে টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যেতো কিন্তু এখন ৩০০-৪০০ ফুটেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

তথ্যমতে, শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের ৩০০ একর চাষযোগ্য জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এই জমি দিয়ে ৩ হাজার পরিবারের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা যেতো। আর কক্সবাজারে প্রতিদিন ১০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজার পৌরসভা হয়তো ৯০-১০০ টন বর্জ্য অপসারণ করছে। বাকিটা যে কোন জায়গায়, কিংবা কৃষি জমিতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষ ১৮ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছেন, কিন্তু অবশিষ্ট ৮২ শতাংশ বর্জ্য তৈরি করছে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারে পর্যটকরা।

তিনি জানান, জাতিসংঘের রোহিঙ্গা সম্মেলনে ৩টি বিষয় তুলে ধরা হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে সৃষ্ট সমস্যা তিনটি হলো কক্সবাজারবাসির খাদ্য নিরাপত্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ।

রেজাউল করিমের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করলে হবে না। তা করতে হবে কুতুপালং বাজারে, কোটবাজারে ও কক্সবাজার শহরে। একই সাথে নষ্ট হওয়া চাষাবাদের জমি ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি ‘মৃতপ্রায় ইস্যু’টাকে (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন) জীবন্ত করার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও ড. খলিলুর রহমানকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য কক্সবাজারবাসিকে বিশ^বাসি ধন্যবাদ দিয়েছেন, মানবতার জন্য সেই ধন্যবাদে আমরা খুশি হয়েছি, কিন্তু আমরা ধন্যবাদ চাই না, আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের সমস্যা গুলো সমাধান করুন।

ওই সভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নষ্ট হওয়া জমি ও ভূ-গর্ভস্থ পানি সংকট নিয়ে তিনটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। ওই তিনটি ভিডিও সম্ভব হলে জাতিসংঘের রোহিঙ্গা সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। সুযোগ পাওয়া না গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

এই আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান, শিক্ষাবিদ অজিত দাশ, এনজিও হেলপ’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম ও কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন