সরকারি ফ্ল্যাটে দুদক কর্মকর্তার অবৈধ বসবাস

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৪৯

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনীর সরকারি ফ্ল্যাটে বরাদ্দ ছাড়াই বসবাস করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় চাকরি ও পদোন্নতি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডবলমুরিং থানার সিজিএস কলোনীর ‘রেনখিয়াং ডি-৯’ ভবনের ১৩-বি ফ্ল্যাটে থাকেন সুবেল আহমেদ। ফ্ল্যাটটি কাগজে-কলমে বরাদ্দ রয়েছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক দেওয়ানের নামে। বদলিজনিত কারণে তিনি সেখানে ওঠেননি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামে যোগ দেন দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদ। সুবেল আহমেদ দুদক আবাসন কমিটির উপ-পরিচালককে ‘জরুরি প্রয়োজন’ দেখিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠার নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ মৌখিক অনুমতি দিলেও আবাসন কমিটির কোনো বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদন হয়নি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে তার বরাদ্দ হওয়ার কথা উচ্চমানের ভবনে, কিন্তু তিনি উঠেছেন এমন একটি ভবনে যা নবম থেকে একাদশ গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত।

ভবনের এক বাসিন্দা বলেন, সুবেল আহমেদ এখানে উঠে জুনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর খবরদারি শুরু করেন। সামান্য বিষয়েও চড়াও হন। সবশেষ ওই ভবনে বসবাসরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট দিন মোহাম্মদ দিনার নামে একজনকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে সুবেল আহমদের বিরুদ্ধে।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সার্জেন্ট দ্বিন মোহাম্মদ দিনার আমার দেশকে বলেন, দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদ কেয়ারটেকারকে উনার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে আমাকে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি উনার কথামতো গাড়িটি সরিয়ে রাখি। তবে আমি উনার সঙ্গে আর যোগাযোগ করিনি। পরবর্তীতে একদিন উনি আমাকে প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে শাসিয়েছেন। বিষয়টি এতটুকুই ছিল। এরমধ্যে তিনি আমার স্ত্রীর গাড়ির নম্বর বিআরটিএ কার্যালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে তথ্য নিয়ে আমাকে বিআরটিএ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে উনার জুনিয়র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাকে একপ্রকার শাস্তি দেন।

সরকারি কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ বিধিমালা ১৯৮২ অনুযায়ী, বরাদ্দ পাওয়া কর্মকর্তা প্রতি মাসে নির্ধারিত ভাড়া প্রদান করবেন। কিন্তু সুবেল আহমেদের নামে কোনো ফ্ল্যাট বরাদ্দ না থাকায় তার মূল বেতন থেকে বাসাভাড়া বাবদ কোনো টাকা কর্তন হয়নি।

সরকারি হিসাবরক্ষণ বিভাগ জানায়, তিনি সরকারি ফ্ল্যাটে থেকেও কোনো ভাড়া প্রদান করেননি ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তিনি পরে চালানমূলে ভাড়া জমা দেওয়ার কথা জানান।

এ বিষয়ে সুবেল আহমেদ বলেন, জরুরি ভিত্তিতে উঠেছি। ভাড়া কর্তন হয়নি ঠিকই, তবে সব টাকা চালানমূলে জমা দেব।

আবাসন বিভাগের উপ-পরিচালক মুনতাসির জাহান বলেন, মৌখিকভাবে থাকতে বলেছি। অনুমোদন না হলে তাকে সময় অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হবে।

জানা গেছে, চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় সহকর্মীদের মানসিকভাবে হয়রানি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সরকারি পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও এসব বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে একটি সূত্র।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া লিখিত এক অভিযোগে বলা হয়, সুবেল আহমেদের নামে ও বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে। ঢাকার খিলগাঁওয়ে নিজ নামে বাড়ি ও ধানমন্ডিতে আত্মীয়ের নামে চার কোটি টাকার ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।

ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগে সম্পৃক্ততা ও দ্রুত পদোন্নতি

সুবেল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। অভিযোগ আছে, তিনি ছাত্রজীবনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সুপারিশে ২০১৭ সালে তিনি দুদকে যোগ দেন বলে অভিযোগ। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি পান তিনি।

কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ে থাকাকালে সহকর্মীদের হয়রানি এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে জমা পড়ে। ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, ঢাকা ও সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় তার নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে।

চট্টগ্রাম দুদকের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী কোনো কর্মকর্তা বরাদ্দ ছাড়া সরকারি ফ্ল্যাটে থাকতে পারেন না। অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। আপনার কাছে যদি প্রমাণ থাকে, তা দিলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত