এম কে মনির, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে প্রায় ৫০০ বছরের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন জলাশয় সাগরদিঘি ভরাট করে ফেলেছে দেশের বিতর্কিক শিল্পগ্রুপ এস আলম। ইতোমধ্যে দিঘির ১৪ শতক জমি ভরাট করেছে কোম্পানিটি। এতে ওই এলাকার ইতিহাস-সংস্কৃতিতে যেমন বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তেমনি কৃষি, পরিবেশ ও প্রাণপ্রকৃতি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানে বসবাসরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষরা।
শুধু তা-ই নয়, জলাশয় ভরাট করা আইনত নিষিদ্ধ হলেও কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা, মেয়র ও কাউন্সিলরদের দিয়ে কম দামে দিঘির জমি কিনে নেওয়া হয়। প্রশাসন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব মহলের মুখে কুলুপ এঁটে লোকালয়েই কেমিক্যাল কারখানা গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে নেয় এস আলমের সৃষ্ট শিল্পগ্রুপ ইনফিনিয়া। জমি বিক্রি করতে না চাইলেও জোরপূবর্ক ভরাট ও সাইনবোর্ড স্থাপন করে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে অনেককে। তবে সহজে জমি হাতিয়ে নিতে প্রচার করা হয় এস আলমের নামে দাতব্য হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। এতে শত শত মানুষ উপকৃত হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পন্থিছিলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এক বিরাট জায়গা টিনের বেড়ায় ঘেরা রয়েছে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কী আছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাবড়া। যেখানে একটি বিশাল দিঘি ছিল, সেখানে এখন বালুর মাঠ। তবে বালু ভেদ করে ওঠা উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, কলমি শাক, গাছপালাই সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রাচীন দিঘির অস্তিত্বের। তাছাড়া চারপাশে এখনো দিঘির কিছু অংশ রয়ে গেছে। সেখানটা বিস্তর কচুরিপানায় ঢাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আড়াই থেকে তিন বছর আগে দিঘিটি ভরাটের কাজ শুরু করে এস আলম গ্রুপ। এ কাজে ভাড়া করা হয় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ সন্ত্রাসী বদিউল আলম জসিমকে। তার নেতৃত্বে কেদারখীলসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষিজমি কেটে রাতারাতি ভরাট হয়। চোখের সামনে বিরাট দিঘি ভরাট হতে দেখে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় লোকজন। এক পর্যায়ে তারা বাধা দিলে যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে এবং রাত-দিন পাহারা দিতে থাকে।
এভাবে ১৫ দিনে পুরো দিঘি ভরাটের কাজ সারেন জসিম। বাইরে থেকে মনিটরিং করেন এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা। এভাবে প্রকাশ্যে দিঘি ভরাট করা হলেও স্থানীয় পৌরসভা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর কেউই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫ বছর। ছোটবেলা থেকে এই দিঘিতে গোসল করে হেসেখেলে বড় হয়েছি। আমাদের প্রজন্মও তা-ই করেছে। এখন দেখছি দিঘিটি বালুর মাঠ। সবই হয়েছে জসিমের নেতৃত্বে। স্থানীয় সাবেক কমিশনার জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন দালাল জমিগুলো এস আলমকে তুলে দেয়।’ আমান জানান, এখানে বারো মাস কচু চাষ হতো। এই কচু চাষ এখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ছিলে। এখন তারা ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, এই এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতি সবই এই সাগরদিঘিকে ঘিরে। অন্তত ৫০০ বছরের সাক্ষী এই দিঘি।
স্থানীয় কচুচাষি সৌরভ বড়ুয়া বলেন, এখনো এ অঞ্চলে কচু (পাইন্যা কচু) বিক্রি করতে হলে বিক্রেতারা বলেন, সাগরদিঘির কচু। না হলে বিক্রি তেমন হয় না। এত বিখ্যাত ও স্বাদে অনন্য এই কচু ব্যাপক জনপ্রিয়। এক কচু গাছ থেকে পাঁচ তরকারি হতো বলে এখানে কোনো অভাব ছিল না। সেই ঐহিত্য-সংস্কৃতি এস আলম গ্রুপ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা স্থানীয় কমিউনিটির কোনো মূল্য দেয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে কেনু মিয়া সওদাগর নামে এক জমিদার ছিলেন। তার বাড়ি মিরসরাইয়ের আবু তোরাব বাজারে। তিনি অত্যন্ত ধনী ছিলেন। ব্রিটিশদের হয়ে তিনি খাজনাও তুলতেন। একবার তিনি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে পন্থিছিলার এক লোক চাল নিয়ে তার বাড়িতে যান। তিনি বলেন, আমাকে তো কেউ দেখতে এলো না। আমি তোমার ওপর খুব খুশি হলাম। এরপর ওই জমিদার খুশি হয়ে সেই লোককে সাগরদিঘি দান করে দেন। পরে এটি বিক্রির মাধ্যমে বহু লোক মালিক হন। তার মধ্যে নবীন বড়ুয়া ও বুদ্ধ কিংকর ছিলেন অন্যতম।
আরো জানা যায়, এই দিঘিতে একসময় হাজার হাজার অতিথি পাখি শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে এসে বিচরণ করত। বিদেশি ও দেশি সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে পাখির ছবি তুলতেন আর স্থানীয় সেই দৃশ্য উপভোগ করতেন। ১০০ একরের বেশি এই দিঘিতে মাঘ মাসে কচু চাষ হতো, আর তোলা হতো বৈশাখ, চৈত্র, আষাঢ় মাসজুড়ে। কচু বিক্রি করেই এখানকার মানুষের সংসার চলত।
সীতাকুণ্ডের প্রায় এলাকায় এস আলম গ্রুপ কারখানা বা হাসপাতাল করার কথা বলে জমি নিলেও স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার নজির নেই। ২০২২ সালের দিকে প্রতি দুই শতক মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কেনে এস আলম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোর করে ভরাট করে ফেলে। প্রকাশ্য দিবালোকে দিঘি ভরাট করলেও সে সময়ের দুই ইউএনও কেএম রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন এবং এসি ল্যান্ড মো. আশরাফুল আলম কোনো ব্যবস্থাই নেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো অভিযান চোখে পড়েনি।
স্থানীয় শিমুল বড়ুয়া জানান, দিঘির চার ভাগের তিন ভাগ এস আলম কিনে নিয়েছে। এই দিঘি ভরাটের ফলে বৌদ্ধ সম্প্রচায়, পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীর যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর এটি রাতারাতি ভরাট করেছে। বাড়বকুণ্ডের হানিফ, সাবেক কমিশনার জয়নাল আবেদীনও এ কাজে জড়িত। এখানে পার্শ্ববর্তী জমি বিক্রির কারণে অনেকে মানসিক চাপ থেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরাও বিক্রি করে দিয়েছি। আবার আমাদের এলাকায় ১০ শতক জমি কিনে এস আলম ১০০ শতকের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে।
একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করে জানান, কাউন্সিলর জসিম প্রথমে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় জোর করে জমি কেনেন। যে বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করতেন, তাকে হুমকি দিতেন। বলতেন, বিক্রি না করলে পরে পস্তাতে হবে। তখন এক টাকাও পাবে না। কাগজপত্র নিয়ে দ্রুত পৌরসভায় এসো। তিনি এস আলমকে মোটা দামে জমি দিয়ে ও ভরাট করে কয়েক কোটি টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড মৌজার এই দিঘিটির আরএস হয় ১৯২৯ সালে। পিএস, বিএস জরিপে এটি দিঘি, জলাশয় হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ জমিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলেছে।
এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান ও রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, দিঘি ভরাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি অধস্তন কর্মকর্তাকে জানাব।
এসব বিষয়ে জানতে এস আলমের ভাগিনা মুহতাসিম বিল্লাহ আদিল ও কর্মকর্তা সুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে প্রায় ৫০০ বছরের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন জলাশয় সাগরদিঘি ভরাট করে ফেলেছে দেশের বিতর্কিক শিল্পগ্রুপ এস আলম। ইতোমধ্যে দিঘির ১৪ শতক জমি ভরাট করেছে কোম্পানিটি। এতে ওই এলাকার ইতিহাস-সংস্কৃতিতে যেমন বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তেমনি কৃষি, পরিবেশ ও প্রাণপ্রকৃতি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানে বসবাসরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষরা।
শুধু তা-ই নয়, জলাশয় ভরাট করা আইনত নিষিদ্ধ হলেও কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা, মেয়র ও কাউন্সিলরদের দিয়ে কম দামে দিঘির জমি কিনে নেওয়া হয়। প্রশাসন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব মহলের মুখে কুলুপ এঁটে লোকালয়েই কেমিক্যাল কারখানা গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে নেয় এস আলমের সৃষ্ট শিল্পগ্রুপ ইনফিনিয়া। জমি বিক্রি করতে না চাইলেও জোরপূবর্ক ভরাট ও সাইনবোর্ড স্থাপন করে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে অনেককে। তবে সহজে জমি হাতিয়ে নিতে প্রচার করা হয় এস আলমের নামে দাতব্য হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। এতে শত শত মানুষ উপকৃত হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পন্থিছিলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এক বিরাট জায়গা টিনের বেড়ায় ঘেরা রয়েছে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কী আছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাবড়া। যেখানে একটি বিশাল দিঘি ছিল, সেখানে এখন বালুর মাঠ। তবে বালু ভেদ করে ওঠা উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, কলমি শাক, গাছপালাই সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রাচীন দিঘির অস্তিত্বের। তাছাড়া চারপাশে এখনো দিঘির কিছু অংশ রয়ে গেছে। সেখানটা বিস্তর কচুরিপানায় ঢাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আড়াই থেকে তিন বছর আগে দিঘিটি ভরাটের কাজ শুরু করে এস আলম গ্রুপ। এ কাজে ভাড়া করা হয় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ সন্ত্রাসী বদিউল আলম জসিমকে। তার নেতৃত্বে কেদারখীলসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষিজমি কেটে রাতারাতি ভরাট হয়। চোখের সামনে বিরাট দিঘি ভরাট হতে দেখে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় লোকজন। এক পর্যায়ে তারা বাধা দিলে যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে এবং রাত-দিন পাহারা দিতে থাকে।
এভাবে ১৫ দিনে পুরো দিঘি ভরাটের কাজ সারেন জসিম। বাইরে থেকে মনিটরিং করেন এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা। এভাবে প্রকাশ্যে দিঘি ভরাট করা হলেও স্থানীয় পৌরসভা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর কেউই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫ বছর। ছোটবেলা থেকে এই দিঘিতে গোসল করে হেসেখেলে বড় হয়েছি। আমাদের প্রজন্মও তা-ই করেছে। এখন দেখছি দিঘিটি বালুর মাঠ। সবই হয়েছে জসিমের নেতৃত্বে। স্থানীয় সাবেক কমিশনার জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন দালাল জমিগুলো এস আলমকে তুলে দেয়।’ আমান জানান, এখানে বারো মাস কচু চাষ হতো। এই কচু চাষ এখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ছিলে। এখন তারা ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, এই এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতি সবই এই সাগরদিঘিকে ঘিরে। অন্তত ৫০০ বছরের সাক্ষী এই দিঘি।
স্থানীয় কচুচাষি সৌরভ বড়ুয়া বলেন, এখনো এ অঞ্চলে কচু (পাইন্যা কচু) বিক্রি করতে হলে বিক্রেতারা বলেন, সাগরদিঘির কচু। না হলে বিক্রি তেমন হয় না। এত বিখ্যাত ও স্বাদে অনন্য এই কচু ব্যাপক জনপ্রিয়। এক কচু গাছ থেকে পাঁচ তরকারি হতো বলে এখানে কোনো অভাব ছিল না। সেই ঐহিত্য-সংস্কৃতি এস আলম গ্রুপ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা স্থানীয় কমিউনিটির কোনো মূল্য দেয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে কেনু মিয়া সওদাগর নামে এক জমিদার ছিলেন। তার বাড়ি মিরসরাইয়ের আবু তোরাব বাজারে। তিনি অত্যন্ত ধনী ছিলেন। ব্রিটিশদের হয়ে তিনি খাজনাও তুলতেন। একবার তিনি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে পন্থিছিলার এক লোক চাল নিয়ে তার বাড়িতে যান। তিনি বলেন, আমাকে তো কেউ দেখতে এলো না। আমি তোমার ওপর খুব খুশি হলাম। এরপর ওই জমিদার খুশি হয়ে সেই লোককে সাগরদিঘি দান করে দেন। পরে এটি বিক্রির মাধ্যমে বহু লোক মালিক হন। তার মধ্যে নবীন বড়ুয়া ও বুদ্ধ কিংকর ছিলেন অন্যতম।
আরো জানা যায়, এই দিঘিতে একসময় হাজার হাজার অতিথি পাখি শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে এসে বিচরণ করত। বিদেশি ও দেশি সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে পাখির ছবি তুলতেন আর স্থানীয় সেই দৃশ্য উপভোগ করতেন। ১০০ একরের বেশি এই দিঘিতে মাঘ মাসে কচু চাষ হতো, আর তোলা হতো বৈশাখ, চৈত্র, আষাঢ় মাসজুড়ে। কচু বিক্রি করেই এখানকার মানুষের সংসার চলত।
সীতাকুণ্ডের প্রায় এলাকায় এস আলম গ্রুপ কারখানা বা হাসপাতাল করার কথা বলে জমি নিলেও স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার নজির নেই। ২০২২ সালের দিকে প্রতি দুই শতক মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় কেনে এস আলম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোর করে ভরাট করে ফেলে। প্রকাশ্য দিবালোকে দিঘি ভরাট করলেও সে সময়ের দুই ইউএনও কেএম রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন এবং এসি ল্যান্ড মো. আশরাফুল আলম কোনো ব্যবস্থাই নেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো অভিযান চোখে পড়েনি।
স্থানীয় শিমুল বড়ুয়া জানান, দিঘির চার ভাগের তিন ভাগ এস আলম কিনে নিয়েছে। এই দিঘি ভরাটের ফলে বৌদ্ধ সম্প্রচায়, পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীর যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর এটি রাতারাতি ভরাট করেছে। বাড়বকুণ্ডের হানিফ, সাবেক কমিশনার জয়নাল আবেদীনও এ কাজে জড়িত। এখানে পার্শ্ববর্তী জমি বিক্রির কারণে অনেকে মানসিক চাপ থেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরাও বিক্রি করে দিয়েছি। আবার আমাদের এলাকায় ১০ শতক জমি কিনে এস আলম ১০০ শতকের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে।
একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করে জানান, কাউন্সিলর জসিম প্রথমে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় জোর করে জমি কেনেন। যে বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করতেন, তাকে হুমকি দিতেন। বলতেন, বিক্রি না করলে পরে পস্তাতে হবে। তখন এক টাকাও পাবে না। কাগজপত্র নিয়ে দ্রুত পৌরসভায় এসো। তিনি এস আলমকে মোটা দামে জমি দিয়ে ও ভরাট করে কয়েক কোটি টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন।
একটি সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড মৌজার এই দিঘিটির আরএস হয় ১৯২৯ সালে। পিএস, বিএস জরিপে এটি দিঘি, জলাশয় হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ জমিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলেছে।
এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান ও রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, দিঘি ভরাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি অধস্তন কর্মকর্তাকে জানাব।
এসব বিষয়ে জানতে এস আলমের ভাগিনা মুহতাসিম বিল্লাহ আদিল ও কর্মকর্তা সুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বগুড়ার শেরপুরের পল্লীতে মুক্তা খাতুনের (১৯) নামের এক গৃহবধুর লাশ রেখে স্বামীসহ পরিবারের সবাই বাড়ি থেকে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টায় উপজেলার সীমাবাড়ি ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। মুক্তা লাঙ্গল মোড়া গ্রামের বুলু মিয়ার মেয়ে ও ইয়াসিন আলীর স্ত্রী।
৫ মিনিট আগেরাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ৬ হাজার ইয়াবা বড়িসহ তিন নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় বিক্রির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তারা।
৮ মিনিট আগেটঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাবস্থায় হারুন অর রশিদকে গত ১৮ অক্টোবর (শনিবার) গভর্নিং বডির মাসিক সভা ডাকার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি রহস্যজনক কারণে সভা ডাকেননি। এছাড়াও ১৯ অক্টোবর (রোববার) ফের স্কুলে মিটিং ডাকার জন্য বলা হলে মিটিং ডাকবেন বলে জানান
১৫ মিনিট আগেইলিশ মাছ বিতরণের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন ফরিদপুর- ৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা রায়হান জামিল। আগামী ৩০ অক্টোবর ১ টাকা কেজিতে ভাঙ্গা উপজেলার ১০০ অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে তিনি মাংস বিতরণের এ ঘোষণা দিয়েছেন।
২৯ মিনিট আগে