উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতায় গুরুত্ব

চসিকে ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ১৭: ১৮
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১৭: ১৯

উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

সোমবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আগামী অর্থবছরের এই বাজেট উপস্থাপন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। একইসাথে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১ হাজার ২২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল খাত অর্থাৎ উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতাকে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় টিকাদান ও স্বাস্থ্য খাতকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

বাজেট বক্তব্যে মেয়র জানান, পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের পলাতক মেয়রের রেখে যাওয়া অনেকটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাই আগের বছরের বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। তাই আগামী বাজেট জনমুখী করে গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও বাজেটের বাস্তবায়নকাল তিনি দায়িত্বে থাকবেন না। তারপরও একটি গণমুখী বাজেট তিনি উপহার দিয়েছেন, যাতে করে যেই দায়িত্বে আসুক, বাজেট বাস্তবায়নে যাতে নতুন জটিলতা তৈরি না হয়।

তিনি আরো জানান, ছয়শ’ কোটি টাকা দেনা নিয়ে ৮ মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে শুধু পুরোনো দেনা পরিশোধ করা হয়েছে দেড় শ’ কোটি টাকা। বাকি সময়ে যতটা সম্ভব উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেনা পরিশোধে মনোযোগী হবেন তিনি।

এই সময়ের মধ্যে উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কোভিড-১৯ সহায়তা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর, ভ্যাট এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল ও আনুতোষিক বিভিন্ন খাতে শতকোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও প্রতি মাসে ৪০০ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আনুতোষিক প্রদান অব্যাহত আছে। চসিকের নিজস্ব আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, কর ও ট্রেড লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হয়েছে। বর্তমানে চসিক এলাকায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩টি হোল্ডিং ও ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে।

১৯টি খাল থেকে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। ড্রেনেজ উন্নয়নে ১৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বর্ষায় আরও ২০০টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মশক নিধনে আধুনিক পদ্ধতি ও আমেরিকান প্রযুক্তির `লার্ভিসাইড' ব্যবহার করা হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। মেয়র বলেন, ‘চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির পরেও জিইসি, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়নি। যা আগামীর সফল পরিকল্পনার ইঙ্গিত।’

চসিকের অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ পাহাড়তলীতে ১০ একর জমিতে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ ও কুলগাঁওয়ে বাস-ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণকাজ। শিক্ষা খাতে চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পুনরায় চসিকের অধীনে আনা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মেয়রের চারটি অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা হলো: চলমান নিয়োগ সম্পন্ন করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন এবং চসিক কার্যক্রমে ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করা।

চাকরি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চসিক নিজস্ব জব পোর্টাল চালু করেছে। প্রথম ধাপে ২২টি পদের বিপরীতে ১২৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন। উপস্থিত ছিলেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত