জামিন অযোগ্য মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ৬ষ্ঠ আদালত তাকে এই জামিন দেন। তাকে আদালতে তোলার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ তার মুক্তির দাবি জানায়।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সরকারী কৌঁসুলি (পিপি) মফিজুল হক ভূইয়া এই জামিনকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আমার দেশকে বলেন, জামিন অযোগ্য ধারায় নিম্ন আদালত কীভাবে জামিন দিল, আমার বোধগম্য নয়। একই ধারায় সাধারণ মানুষ মাসের পর মাস হাজতে থাকে। কিন্তু এ মামলায় বিচারিক আদালতের এমন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ।বিস্ফোরক, হামলা-এ ধরনের মামলায় সাধারণত হাইকোর্ট ছাড়া জামিনের নজির প্রায় নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত আইনি প্রয়োগে বৈষম্যের একটি উদাহরণ।
মঙ্গলবার প্রদীপ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ওসি আবদুল করিম জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, সেই মামলায় তিনি তদন্তে প্রাপ্ত আসামি। তাকে আমরা গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছিলাম। জামিন অযোগ্য মামলায় কীভাবে জামিন-প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলার শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সংগঠক হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের একজন, তখন আহত হওয়া বর্তমানে এনসিপির যুবশক্তির নেতা হুজ্জাতুল ইসলাম সাঈদ আমার দেশকে বলেন, যে মানুষটি আমাদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল, বিস্ফোরক মামলাসহ এত অভিযোগ যার নামে, তিনি এক ঝটকায় জামিন পেয়ে গেলেন। আদালত কি শুধু প্রভাবশালী মানুষের জন্য? আমরা সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাব কোথায়?
রাকিব হাসান নামে আরেকজন আন্দোলনকারী বলেন, আমরা থানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও মামলা করতে পারিনি। অথচ যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তারা ঘণ্টা না পেরোতেই জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসে। এই বিচারব্যবস্থা আমাদের ভরসা কেড়ে নিচ্ছে।
প্রদীপ কুমারকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়। তারা অভিযোগ করে, জেএম সেন হলে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শেষে হলের গেট পার হতে না হতেই পুলিশ তাকে ‘জোর করে তুলে নেয়’। পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তারের কারণ জানায়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।
আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন, বিস্ফোরকসহ অজামিনযোগ্য ধারার মামলায় এত দ্রুত জামিন ‘অস্বাভাবিক’। আদালত কেন এ সিদ্ধান্ত নিলেন-এ নিয়ে আইনজীবী মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এক সিনিয়র আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে বলেন, একই মামলায় সাধারণ মানুষ মাসের পর মাস জামিনের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় শক্ত হলে আদালত দ্রুত সাড়া দেয়-এমন ধারণাই আবারও শক্ত হলো।

