চট্টগ্রামে আওয়ামী সন্ত্রাস
জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। প্রাইভেটকারে করে অস্ত্র এনে অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েছিল। ব্যবহৃত এসব অস্ত্রের মধ্যে ছিল স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, শটগান ও অত্যাধুনিক পিস্তল। কিন্তু ওই সব অস্ত্রের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকেও ৫ আগস্টের পর উদ্ধার করা যায়নি কোনো অস্ত্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভয় পাচ্ছে পুলিশ। সে কারণে তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য বের করতে পারছে না তারা। ফলে অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে না। ১৪ সন্ত্রাসী ১০টি শটগান-পিস্তল ব্যবহার করে দুজনকে প্রকাশ্যে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এমনকি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ প্রকাশ্যে শটগান উঁচিয়ে ব্যবহার করলেও সেটিও উদ্ধার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পরও অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বিস্মিত বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়েছিল অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর ও ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়েছিল। তাদের গুলিতে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচজন এবং পরে আরেকজনসহ মোট ছয়জন নিহত হন। ওই সব ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গুলিবিদ্ধ।
এক বস্তা অস্ত্রের একটিও উদ্ধার হয়নি
ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, শটগান ও পিস্তল। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর কয়েকটি একটি প্রাইভেটকারে করে সরবরাহ করা হয়। চট্ট মেট্রো-গ-১৪-৩২২১ নম্বরের প্রাইভেটকারটির মালিক যুবলীগের সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ঘনিষ্ঠ জাফর উল্লাহ। ঘটনার দিন ওই গাড়িতে করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা ও সিআরবির ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামি হেলাল বাবর মিছিলে নেতৃত্ব দেন। পরে ওই গাড়ি থেকে নামানো হয় কালো কাপড় মোড়ানো এক বস্তা অস্ত্র। সূত্র জানিয়েছে, ওই সময় বাবর ৫০টি অস্ত্র নিয়ে আসেন।
ওই সংঘর্ষে পাঁচ যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে জাফর উল্লাহও আছেন। তাদের হাতে ছিল দুটি এলজি, দুটি পিস্তল ও একটি শটগান। সংঘর্ষের সময় প্রাইভেটকারটি ষোলোশহর এলাকায় অবস্থান করছিল। যুবলীগের নেতাকর্মীরা তখন গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ওই ব্যাগগুলো কাঁধে নেন কয়েকজন। তারপর গাড়িটি চলে যায়।
সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের মধ্যে পাঁচজনের ছবি চিহ্নিত করেছে ‘আমার দেশ’। এর মধ্যে চারজনের দলীয় পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেনÑ যুবলীগের ফিরোজ, জাফর, মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেলোয়ার। এরা যুবলীগের সাবেক নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির অনুসারী।
পুলিশের তালিকায় ২০ অস্ত্রধারী, উদ্ধার নেই অস্ত্র
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্র ব্যবহারকারী ২০ সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। র্যাব-পুলিশ ইতোমধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করলেও কারো কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই ২০ জনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরও দেখা গেছে।
তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা থাকলেও অনেককেই এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। তাদের গুলিতে ১৬ জুলাই মুরাদপুর, ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এবং ৪ আগস্ট নিউ মার্কেট, তিনপুলের মাথা, স্টেশন রোড, কদমতলী, টাইগারপাস, আসকারদীঘির পার এবং বহদ্দারহাট এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়।
ছাত্রলীগের গুলি ও হামলায় শহীদ হন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তারুয়া, ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমদ, আসবাব তৈরির মিস্ত্রি ওমর ফারুক, দোকান কর্মচারী মাহিন সাইমন, আশেকানা আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী, মাদরাসা শিক্ষার্থী সাইফুল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউসার মাহমুদসহ অনেকে। আহত হন আড়াই শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।
প্রকাশ্যে ব্যবহার হওয়া অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি
৫ আগস্টের পর নগরীতে তৎপরতা বাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। তার বাহিনীর তৎপরতায় অতিষ্ঠ নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, খুলশী, বায়েজিদ বোস্তামী, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা। প্রথমে বায়েজিদ বোস্তামীতে জোড়া খুন, পরে চান্দগাঁওয়ে তাহসিনকে হত্যা এবং সবশেষ কারাগারে থাকা অবস্থায় তার পরিকল্পনায় বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এসব খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের হদিসও মেলেনি। এ ছাড়া সাজ্জাদ ও তার বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো অনেকে। সেসব অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।
সর্বশেষ বাকলিয়ায় ডাবল মার্ডারে অংশ নেওয়া ১৪ জন সন্ত্রাসী শটগান ও পিস্তলসহ ১০টি অস্ত্র ব্যবহার করেন। ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছে পুলিশ
দেশে বহুদিন ধরে সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত পুলিশ। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য বের করে অভিযানে গিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করত তারা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিচ্ছে না পুলিশ। কেবল সাদামাটা জিজ্ঞাসাবাদেই দায় সারছে তারা। এতে সন্ত্রাসীরা কোনো তথ্যই দিচ্ছে না।
কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অনেক সন্ত্রাসীর পরিবার সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করছে। এসব ভয়ে সন্ত্রাসীদের তেমন জোর-জবরদস্তিও করতে পারছে না। মূলত সে কারণেও তথ্য বের হচ্ছে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য আদায়ের জন্য যে রিমান্ডে নির্যাতন করতে হবে, তা ঠিক নয়। নির্যাতন ছাড়াও তথ্য বের করে আনা সম্ভব। আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তা করা যেতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি শুধু সংবিধানের বিরুদ্ধেই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ, বিশেষ করে জাতিসংঘের ‘কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার’-এর পরিপন্থী। পুলিশ বাহিনীকে মানসিক চাপ প্রয়োগ, মনস্তাত্ত্বিক জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করতে হবে।
পলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমরা যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেছি, জানিÑ অনেক সময় পুলিশ নির্যাতনকে সহজ সমাধান মনে করে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এ পদ্ধতি পরিবর্তনের। প্রযুক্তির সহায়তায় (যেমন ফরেনসিক অডিট, মোবাইল ডাটা বিশ্লেষণ, সাইবার ট্রেসিং) তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
‘অধিকার’-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। সংগঠনটি বলেছে, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমেই রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ করে বিকল্প অনুসন্ধান কৌশল চালু করতে হবে।’
নাসির উদ্দিন এলান কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। মনো-সামাজিক ও আচরণগত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল শেখাতে হবে। রিমান্ডের সময় ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করতে হবে। নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য স্বাধীন ‘রিমান্ড পর্যবেক্ষণ ইউনিট’ গঠন করতে হবে এবং সন্দেহভাজনদের আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম অবশ্য দাবি করেন, পুলিশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য বের করতে না পারার অভিযোগ সঠিক নয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। প্রাইভেটকারে করে অস্ত্র এনে অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েছিল। ব্যবহৃত এসব অস্ত্রের মধ্যে ছিল স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, শটগান ও অত্যাধুনিক পিস্তল। কিন্তু ওই সব অস্ত্রের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকেও ৫ আগস্টের পর উদ্ধার করা যায়নি কোনো অস্ত্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভয় পাচ্ছে পুলিশ। সে কারণে তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য বের করতে পারছে না তারা। ফলে অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে না। ১৪ সন্ত্রাসী ১০টি শটগান-পিস্তল ব্যবহার করে দুজনকে প্রকাশ্যে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এমনকি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ প্রকাশ্যে শটগান উঁচিয়ে ব্যবহার করলেও সেটিও উদ্ধার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পরও অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বিস্মিত বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়েছিল অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর ও ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়েছিল। তাদের গুলিতে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচজন এবং পরে আরেকজনসহ মোট ছয়জন নিহত হন। ওই সব ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গুলিবিদ্ধ।
এক বস্তা অস্ত্রের একটিও উদ্ধার হয়নি
ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, শটগান ও পিস্তল। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর কয়েকটি একটি প্রাইভেটকারে করে সরবরাহ করা হয়। চট্ট মেট্রো-গ-১৪-৩২২১ নম্বরের প্রাইভেটকারটির মালিক যুবলীগের সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ঘনিষ্ঠ জাফর উল্লাহ। ঘটনার দিন ওই গাড়িতে করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা ও সিআরবির ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামি হেলাল বাবর মিছিলে নেতৃত্ব দেন। পরে ওই গাড়ি থেকে নামানো হয় কালো কাপড় মোড়ানো এক বস্তা অস্ত্র। সূত্র জানিয়েছে, ওই সময় বাবর ৫০টি অস্ত্র নিয়ে আসেন।
ওই সংঘর্ষে পাঁচ যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে জাফর উল্লাহও আছেন। তাদের হাতে ছিল দুটি এলজি, দুটি পিস্তল ও একটি শটগান। সংঘর্ষের সময় প্রাইভেটকারটি ষোলোশহর এলাকায় অবস্থান করছিল। যুবলীগের নেতাকর্মীরা তখন গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ওই ব্যাগগুলো কাঁধে নেন কয়েকজন। তারপর গাড়িটি চলে যায়।
সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের মধ্যে পাঁচজনের ছবি চিহ্নিত করেছে ‘আমার দেশ’। এর মধ্যে চারজনের দলীয় পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেনÑ যুবলীগের ফিরোজ, জাফর, মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেলোয়ার। এরা যুবলীগের সাবেক নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির অনুসারী।
পুলিশের তালিকায় ২০ অস্ত্রধারী, উদ্ধার নেই অস্ত্র
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্র ব্যবহারকারী ২০ সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। র্যাব-পুলিশ ইতোমধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করলেও কারো কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই ২০ জনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরও দেখা গেছে।
তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা থাকলেও অনেককেই এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। তাদের গুলিতে ১৬ জুলাই মুরাদপুর, ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এবং ৪ আগস্ট নিউ মার্কেট, তিনপুলের মাথা, স্টেশন রোড, কদমতলী, টাইগারপাস, আসকারদীঘির পার এবং বহদ্দারহাট এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়।
ছাত্রলীগের গুলি ও হামলায় শহীদ হন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তারুয়া, ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমদ, আসবাব তৈরির মিস্ত্রি ওমর ফারুক, দোকান কর্মচারী মাহিন সাইমন, আশেকানা আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী, মাদরাসা শিক্ষার্থী সাইফুল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউসার মাহমুদসহ অনেকে। আহত হন আড়াই শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।
প্রকাশ্যে ব্যবহার হওয়া অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি
৫ আগস্টের পর নগরীতে তৎপরতা বাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। তার বাহিনীর তৎপরতায় অতিষ্ঠ নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, খুলশী, বায়েজিদ বোস্তামী, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা। প্রথমে বায়েজিদ বোস্তামীতে জোড়া খুন, পরে চান্দগাঁওয়ে তাহসিনকে হত্যা এবং সবশেষ কারাগারে থাকা অবস্থায় তার পরিকল্পনায় বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এসব খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের হদিসও মেলেনি। এ ছাড়া সাজ্জাদ ও তার বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো অনেকে। সেসব অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।
সর্বশেষ বাকলিয়ায় ডাবল মার্ডারে অংশ নেওয়া ১৪ জন সন্ত্রাসী শটগান ও পিস্তলসহ ১০টি অস্ত্র ব্যবহার করেন। ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছে পুলিশ
দেশে বহুদিন ধরে সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত পুলিশ। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য বের করে অভিযানে গিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করত তারা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসীদের ইন্টারোগেশনে নিচ্ছে না পুলিশ। কেবল সাদামাটা জিজ্ঞাসাবাদেই দায় সারছে তারা। এতে সন্ত্রাসীরা কোনো তথ্যই দিচ্ছে না।
কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অনেক সন্ত্রাসীর পরিবার সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করছে। এসব ভয়ে সন্ত্রাসীদের তেমন জোর-জবরদস্তিও করতে পারছে না। মূলত সে কারণেও তথ্য বের হচ্ছে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য আদায়ের জন্য যে রিমান্ডে নির্যাতন করতে হবে, তা ঠিক নয়। নির্যাতন ছাড়াও তথ্য বের করে আনা সম্ভব। আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তা করা যেতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি শুধু সংবিধানের বিরুদ্ধেই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ, বিশেষ করে জাতিসংঘের ‘কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার’-এর পরিপন্থী। পুলিশ বাহিনীকে মানসিক চাপ প্রয়োগ, মনস্তাত্ত্বিক জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করতে হবে।
পলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমরা যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেছি, জানিÑ অনেক সময় পুলিশ নির্যাতনকে সহজ সমাধান মনে করে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এ পদ্ধতি পরিবর্তনের। প্রযুক্তির সহায়তায় (যেমন ফরেনসিক অডিট, মোবাইল ডাটা বিশ্লেষণ, সাইবার ট্রেসিং) তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
‘অধিকার’-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। সংগঠনটি বলেছে, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমেই রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ করে বিকল্প অনুসন্ধান কৌশল চালু করতে হবে।’
নাসির উদ্দিন এলান কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। মনো-সামাজিক ও আচরণগত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল শেখাতে হবে। রিমান্ডের সময় ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করতে হবে। নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য স্বাধীন ‘রিমান্ড পর্যবেক্ষণ ইউনিট’ গঠন করতে হবে এবং সন্দেহভাজনদের আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম অবশ্য দাবি করেন, পুলিশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য বের করতে না পারার অভিযোগ সঠিক নয়।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমার দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের কাছে দায়বদ্ধ নয়। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমার দেশ-এর একেকজন প্রতিনিধি একে ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। আমার দেশ-এর একমাত্র দায়বদ্ধতা এ দেশের জনগণ, পত্রিকার পাঠক, নিজের বিবেক এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে।
১ ঘণ্টা আগেবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হয়রানি করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে বগুড়ার আদালতে মামলা করা হয়েছে। তারা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেকক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু অংশে মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকায় পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
২ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়িয়ে হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
২ ঘণ্টা আগে