আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

নীরবে জামিন পাচ্ছেন ‘ছোট সজ্জাদ’, স্থগিতাদেশ চায়নি রাষ্ট্র

চট্টগ্রাম ব্যুরো

নীরবে জামিন পাচ্ছেন ‘ছোট সজ্জাদ’, স্থগিতাদেশ চায়নি রাষ্ট্র

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত সজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘ছোট সজ্জাদ’ একাধিক হত্যা মামলায় নীরবে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু এসব জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোনো আপত্তি জানায়নি বা স্থগিতাদেশ চায়নি। এ তথ্য উঠে এসেছে সরকারের অভ্যন্তরীণ নথিতে।

বিজ্ঞাপন

পর্যালোচিত নথি অনুযায়ী, সে সময় ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিন আদেশগুলো চ্যালেঞ্জ না করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। নথিতে প্রতিটি মামলার পাশে ‘নো অবজেকশন’ বা ‘না’ চিহ্ন দেওয়া রয়েছে, তবে কোনো ব্যতিক্রমী আইনি ব্যাখ্যা বা যুক্তি উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে আজ বুধবার সকালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ আমার দেশকে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মামলা-সংক্রান্ত ফাইল আসে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ফাইলে মামলার পটভূমি, আসামির পরিচয় বা তার অপরাধ–ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত থাকে না।

রউফ বলেন, সে কারণেই সংশ্লিষ্ট হত্যা মামলাগুলোর জামিন আবেদনের ক্ষেত্রে ‘নো অবজেকশন’ দেওয়া হয়েছিল। তার দাবি, ওই সময় তিনি জানতেন না যে সংশ্লিষ্ট আসামি সাজ্জাদ হোসেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী বা একাধিক হত্যা মামলার অভিযুক্ত।পরে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ এবং বিস্তারিত তথ্য সামনে আসার পর তিনি নিজ উদ্যোগেই রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে জামিন আদেশগুলো স্থগিত করান বলে জানান রউফ।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তো তখন জানতামই না সাজ্জাদ কে। পরে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।

হাইকোর্ট রেকর্ড অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছোট সজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না সাতটি হত্যা মামলায় জামিন পান। এর মধ্যে চারটি মামলা চান্দগাঁও থানায় এবং তিনটি পাঁচলাইশ মডেল থানায় দায়ের করা। মামলাগুলোর বেশির ভাগই ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সহিংস ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বলছে, ছোট সজ্জাদ বায়েজিদ, অক্সিজেন ও চান্দগাঁও এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র অপরাধে জড়িত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বড় সাজ্জাদ’-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন এবং তার হয়ে চাঁদাবাজি ও গার্মেন্টস বর্জ্য বাণিজ্যের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৯টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১০টি হত্যা মামলা। তার স্ত্রী তামান্নার বিরুদ্ধেও আটটি মামলা রয়েছে, কয়েকটিতে হত্যা অভিযোগ আছে। বর্তমানে ছোট সজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।

হাইকোর্টে জামিন আদেশ দেওয়া হলেও সেগুলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে স্বাক্ষরিত হয়ে চট্টগ্রামের আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় ৮ ডিসেম্বর-প্রায় আড়াই মাস পর। এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় কৌঁসুলি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সাধারণ মানুষ কেউই এসব আদেশের কথা জানতেন না।

নথি অনুযায়ী, শুরুতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে অভ্যন্তরীণ নোট পাঠান। সাধারণত গুরুতর বা আলোচিত হত্যা মামলায় এ ধরনের নোট পাঠানো মানে মামলাটি বিশেষভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মামলাগুলো ‘আর কোনো ব্যবস্থা নয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর
Loading...