লক্ষ্মীপুরে খুন হওয়া বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহিরের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন বলে আগেই আশঙ্কা করেছেন। সেখানে ১১ জনের নাম উল্লেখ করেন। তার কিছু হলে ওই ১১ জন দায়ী থাকবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভিডিওতে তিনি উল্লেখ করেন।
৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আবুল কালাম জহির বলেন, ‘আমি এলাকাতে যাবার পরে আমার মৃত্যুর মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য প্রথমে আমার চাচাতো ভাই খোরশেদ, দ্বিতীয়ত ছোট কাউসার (ছাত্রদলকর্মী কাউসার মানিক বাদল) ও তাদের তিন ভাই, তৃতীয়ত শাহ আলম ও তার দুই ছেলে বাবু, ইমন, হর্দার বাড়ির স্বপন, এসপি বাড়ির আলমগীর ও সেলিম- আমার দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে। এ বলি মামলা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুল কালামের বিরুদ্ধে থানায় মাদকের মামলা ছিল। এছাড়া এলাকায় আধিপত্য নিয়ে ছাত্রদল নেতা ছোট কাউসারের সাথে তার দ্বন্দ্ব চলছে। এ কারণে তিনি এলাকায় ছিলেন না। তবে এলাকায় আসার আগে ভিডিও বার্তাটি রেকর্ড করে তার স্বজনদের কাছে পাঠান। এরপর এলাকায় আসেন। ভিডিও বার্তা হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগের হতে পারে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এছাড়া ঘটনার দিনের ছাত্রদল নেতা কাউছারের ক্রিকেট খেলার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তার ফেসবুক আইডিতে। ভিডিওটি পোস্ট দিয়ে ফেসবুকে তিনি লেখেন ‘আউট’। ফেসবুকে তার দেয়া এই পোস্ট হত্যাকাণ্ডকে ইঙ্গিত করেই দেয়া বলে অভিযোগ তুলেছে নিহত কালামের পরিবার।
তবে ছোট কাউছারের সাথে ছয় মাস আগেই বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানান কাউছারের পরিবার। তাদের দাবি এটি ষড়যন্ত্র। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে তারা বলেন কাউছার প্রায়ই ক্রিকেট খেলার ভিডিও দেন। ঘটনার দিন আউট লিখে যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তা বিকেলের আর ঘটনা সন্ধ্যার পরের। হত্যার সাথে আউট লিখে পোস্টের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তারা হলেন, ইমন হোসেন, আলমগীর হোসেন, হুমায়ূন কবির সেলিম ও ফারুক। ভিডিও বার্তায় আবুল কালাম প্রথম তিনজনের নামও বলে গিয়েছেন।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার বাদি হয়ে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে ১৩ জনের নাম ও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। যাদের নাম ভিডিও বার্তায় উল্লেখ ছিল, তারাও মামলার আসামি হয়েছেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আবুল কালামের চাচাতো ভাই খোরশেদ আলমকে (৪৮)। তার সাথে টাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে বলে জানা যায়।
দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে আলোচিত ছাত্রদল নেতা কাউসার মানিক বাদল ওরফে ছোট কাউসার ও তার দু’ভাই মিজানুর রহমান মল্লিক (৩০) ও শামসুল আলম মল্লিক ওরফে উকিল শামসু (৩৮)।
অন্য আসামিরা হলেন, শাহ আলম (৫০), রাহাত হোসেন বাবু (২৫) ও তার ভাই ইমন হোসেন (২২), স্বপন (৩০), আলমগীর হোসেন (৪০), মো. হুমায়ুন কবির সেলিম (৫০), রিয়াজ ওরফে চিতা (৩৫), আজিম হোসেন হারুন (৩০) এবং আবদুল খালেক (২৮)।
এদিকে এ মামলায় কফিল উদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব আজিম হোসেন হারুনকে আসামি করায় প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা ছাত্রদল। তারা এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা বলছেন।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফয়েজুল আজিম নোমান বলেন, ভিডিওতে যে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারাও মামলার আসামি হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া খুনের সাথে কারা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, আমরা সকল আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে আধিপত্য বিস্তার পেলেও আমরা অধিকতর তদন্ত করছি। ৪জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা হত্যার কারণ জানতে পারবো।
উল্লেখ্য, শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে চন্দ্রগঞ্জের লতিফপুর গ্রামের মোস্তাফার দোকান নামক এলাকায় খুন হন বিএনপি নেতা আবুল কালাম। তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মৃতদেহের শরীরে চারটি গুলির চিহ্ন এবং মাথাসহ মুখমণ্ডলে গুরুতর চুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মনছুর আহমেদের ছেলে এবং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, জহিরের সাথে স্থানীয় ছাত্রদল কর্মী কাউসার মানিক বাদল ওরফে ছোট কাউসারের আধিপত্য বিস্তার ও অন্তকোন্দলকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় একটি খেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ঘটনার পর থেকেই অভিযোগ উঠে আসছে। কাউসারও হত্যাসহ কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি। অন্যদিকে আবুল কালামের বিরুদ্ধেও থানায় ছয়টি মাদকের মামলাসহ সাতটি মামলা ও একাধিক জিডি রয়েছে।

