ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

উপজেলা প্রতিনিধি, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৫: ১২
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৩২

এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময় জেলেরা পুরোপুরি ব্যাস্ত সময় পার করেন ইলিশ শিকারে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। নিঝুমদ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমূখী, কাজিরবাজার বাংলাবাজার ও চেয়ারম্যান ঘাটসহ দ্বীপের বড় ২০টি ঘাটের ছোটো বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা নদীতে বিচরণ করছে। কিন্তু হতাশার কারণ হলো জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। প্রতিদিনই শূন্য হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ফেরিয়ে গেলেও এখনো লাভের মুখ দেখেনি তারা। অন্যদিকে নদীতে যেতে প্রতিদিনই যে ব্যায় হচ্ছে তাতে আর্থিক দেনার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে পরিবারের দৈনন্দিন ব্যায় মিঠাতে হিমশিম খাচ্ছে। ঘাটগুলোতে হাঁকডাক নেই, দেখা দিয়েছে নিরবতা ও হতাশা।

সরেজমিনে উপজেলার সূর্যমূখী ঘাটে দেখা যায় এসব চিত্র। ঘাটের উত্তর পাশে সূর্যমুখী মাছঘাটের আড়ৎদার মোল্লা ট্রডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলে নদী সমূহে সাদা বালু (সিলভার জাতীয়) যা ইলিশ মাছ খাদ্য হিসেবে খায়। প্রতি বছর উজানের পানি প্রবাহের কারণে নদীগুলো ভরাট হয়ে আসছে। যার ফলে ইলিশ মাছ বিচরণে ও খদ্য সংকট হওয়ায় গভীর সমুদ্রে চলে যায় ফলে এখন নদীতে মাছ কমে যায়।

একই ঘাটের খাজা মাঝি বলেন, দীর্ঘ বিশ বছর এ ঘাটে নিজের সাবার, নৌকা জাল ছিলো। গত কয়েক বছর সাগরে মাছ না থাকায় লোকসান দিয়ে এখন নিঃশ্ব। বর্তমানে অন্যের জালতুনি ও কাজ করে খেয়ে না খেয়ে নিজ কোনো রকমে চলে।

সূযমূখী মাছ ঘাটের শ্রমিক সর্দার নুর ইসলাম জানান, তার অধীনে এই ঘাটে ৮৫ জন শ্রমিক কাজ করে। খালে কোনেরা নৌকা বা ট্রলার এলে তারা টুরকিতে করে সেই মাছ ডাকের বাক্সে এনে দেয়। প্রতিদিন যে টাকা পায় তা ভাগ করে নেই ৮৫ জন। এ বছর প্রথম থেকে মাছ নেই নদীতে। প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে ৩০-৪০ টাকা করে পায় শ্রমিকরা। এতে নিজেদের চা নাস্তা হয় না। সংসার চালাতে হয় দেনা করে।

সূর্যমূখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজুর রহমান নান্টু বলেন, ৯৩ সাল থেকে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। এই বছরের মতো এতো কঠিন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। মৌসুমের প্রথম থেকে মাছ নেই। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছে। ঘাটে পড়ে থাকা অসংখ্য জেলে নৌকার জেলেরা পালিয়ে গেছে। ঘাটে সবার মুখে হতাশা। এক ধরনের নিরব হাহাকার চলেছে জেলে পল্লী ও মাছ ঘাটে।

তিনি আরো বলেন, শুধু সূর্যমূখী ঘাটে নয় একই অবস্থা হাতিয়ার বিশটি ঘাটে। মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই অনেকটা দেওলিয়া হয়ে পড়েছে।

হাতিয়ায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৭ লাখ ৫০ হাজার লোকের বসবাস। এখানে জেলে পেশার সাথে জড়িত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি ভাবে নিবন্ধিত জেলে সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৯৫ জন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান বলেন, ভরা মৌসুমের এই সময় ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে জাটকা নিধন, মা ইলিশ ধরা ছাড়াও ডুবোচর, জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় কলকারখানার বর্জ্য নদীতে আসাতে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এজন্য এসব নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি আশা করছেন মৌসুমের সামনের সময় গুলোতে আশানুরোপ ইলিশ পাওয়া যাবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত