চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের জট

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ১৯: ১১

ঈদের আজহার লম্বা ছুটির কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। সময়মত পণ্য ডেলিভারি না নেয়াসহ আমদানিকারকদের অনাগ্রহে পণ্য খালাস কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদের চাপাচাপি করেও কোনো সুফল পাচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের আগে বাজেটকে কেন্দ্র করে পণ্য খালাসের গতি অনেকটাই কম ছিলো। ঈদের ছুটিতে তা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। তবে দিন যত যাচ্ছে পণ্য খালাস ও ডেলিভারির গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী জাহাজের জট তৈরি হয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকে পরের দুইদিন পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার ডেলিভারির পরিমাণ শতকের ঘরে নেমে এলেও মঙ্গল ও বুধবার তা বেড়ে দৈনিক ২ হাজার টিইইউএসের কাছাকাছি ডেলিভারি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিনের এই সংখ্যা থাকে পাঁচ হাজারের বেশি। ফলে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের ধারণা আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ের আগে পণ্য ডেলিভারি স্বাভাবিক হবে না। বর্তমানে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৪০ হাজার ৬৬১ টিইইউএস কন্টেইনার জমে আছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। ইয়ার্ডের জায়গা ফুরিয়ে আসায় খালাস কার্যক্রমের গতিও কমে গেছে। ফলে বহিনোঙ্গো জাহাজের টার্ণ এরাউন্ড টাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্রতি জাহাজে দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ডলার করে ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে আমদানীকারকদের।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, বন্দরের কার্যক্রম শুধু বন্দর ও কাস্টমসের ওপর নির্ভরশীল নয়। ব্যাংক, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সসহ অন্তত ১২ থেকে ১৪ টি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত কার্যক্রমের প্রয়োজন পড়ে। ঈদের ছুটিতে বন্দর ও কাস্মস খোলা থাকলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ না করায় আমদানীকারকদের ইচ্ছা থাকলেও কোন পণ্য খালাস করতে পারে না। ফলে প্রতিটি উৎসব পার্বনের ছুটিতে জট তৈরি হয় বন্দরে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হলে সবগুলো সেবা প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। এছাড়া উদ্ভুত জট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সমন্ময় করে দ্রুত পণ্য ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবে জাতীয় অর্থনীতি।

চট্টগ্রাম সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম জানান, সরকারি ছুটিতেও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম এবং ডেলিভারি সিস্টেম পুরোদমে সচল রয়েছে। তবে সব দপ্তরের চিত্র এক নয়। এজন্য স্টেকহোল্ডাররা আমদানি পণ্য ছাড় করতে গিয়ে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার মেরিণ) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ জানান, ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার ঈদুল আজহায় ৫ শতাংশ বেশি পণ্য এসেছে। তার ওপর এবার ঈদের ছুটিও বেশি। সবকিছু মিলিয়ে বন্দরের ওপর চাপ বাড়ছে কিন্তু জটের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পণ্য খালাসের হারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বুধবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হেতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে বলেও জানান তিনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত