চট্টগ্রামের বাকলিয়া এক্সেস রোডে কলেজছাত্র ও ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী তার মা ফরিদা বেগম অভিযোগ করেছেন, মামলা তুলে নিতে তাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা। ভয়ভীতি ও চাপে পড়ে তিনি আদালতে গিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
রোববার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন ফরিদা বেগম। আদালত আবেদন গ্রহণ করে আদেশের জন্য ২৭ নভেম্বর শুনানীর দিন ধার্য করেছেন।
ফরিদা বেগমের অভিযোগ, মামলা দায়ের করার পর থেকেই বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে অস্ত্রধারীরা। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। অব্যাহত চাপ ও আতঙ্কের কারণেই তিনি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন।
ফরিদা বেগম আমার দেশকে বলেন, আমার ছেলে সাজ্জাদের খুনের বিচার চাইতে গিয়ে এখন নিজের পরিবারের প্রাণ নিয়ে শঙ্কায় আছি। প্রতিদিন কেউ না কেউ বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করে। দরজায় কড়া নাড়ে। রাতে জানালা ধাক্কা দেয়। মামলা না তুললে আমাদের মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে বাদশার লোকজন।
তিনি আরো দাবি করেন, ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় মামলাটি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বহিষ্কৃত যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশার সশস্ত্র অনুসারীরা তার বাড়ির সামনে এসে অবস্থান নেয়। একই রাতে বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা তাকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
তবে যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশা আমার দেশকে বলেন, আমাকে জড়ানো পুরোপুরি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমি ভালো কাজ করছি, সেটির ঈষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে জড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি এটি এখন আদালতে তদন্তধীন বিষয়। এটি আদালতের মাধ্যমে ডিবি তদন্ত করছে। আমাদের সবার উচিত তদন্ত কর্মকর্তা ও আদালতে সহযোগিতা করা।
গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন (২২)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের দুই নেতা এমদাদুল হক বাদশা ও গাজী সিরাজের অনুসারী বোরহান-সোহেলদের মধ্যে ওইদিন সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়।
ওইদিন রাত ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১টা ৫ মিনিটের মধ্যে সৈয়দ শাহ রোড থেকে বলাকা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে এলাকাটি অন্ধকার করে ‘ব্ল্যাকআউট কিলিং মিশন’ চালানো হয়। অন্ধকারের সুযোগে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় সাজ্জাদকে। পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এই বিষয়ে এমদাদুল হক বাদশা বলেন, আরেকটি বিষয় এখানে ব্লাকআউটের কথা বলা হচ্ছে। ব্লেকআউটের বিষয়টিও তদেন্ত বেরিয়ে আসবে। এত সহজ কেউ ফোন করলো, আর ওমনি বিদ্যুৎ অফিস বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলো।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতের বিষয়। তবে বাদীর নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

