চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় অস্ত্র ও গুলি সরবরাহকারী একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। প্রায় ২ মিনিটের ওই অডিওতে উঠে এসেছে বিদেশি পিস্তল ও বিশেষ গুলি কেনাবেচার পাশাপাশি একজনকে হত্যার অর্ডার নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের প্রস্তুতির তথ্য। ওই সন্ত্রাসীর সঙ্গে বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা ও যুবদল নেতার ছবি রয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে অডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশের একটি সংস্থা ও অডিও বিশ্লেষণে স্বীকৃত সফটওয়্যার ব্যবহার করে রেকর্ডটির সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।
পরীক্ষায় করে দেখা গেছে, অডিওটিতে কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া বা ডাবিংয়ের চিহ্ন নেই। রেকর্ডটি অরিজিনাল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফোনালাপে কথোপকথনকারীদের একজন হিসেবে পরিচয় পাওয়া গেছে স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ওরফে আতুরি জাকিরকে। অপরজন তার সহযোগী আবদুস সোবহান। কথোপকথনের শুরুতেই দেড় লাখ টাকায় একটি বিদেশি পিস্তল এবং প্রতিটি ৫০ হাজার টাকায় তিনটি থ্রি-কোয়ার্টার বন্দুক সরবরাহের চুক্তি চূড়ান্ত করতে শোনা যায় জাকিরকে।
তিনি দাবি করেন, ভারতীয় কারিগরের তৈরি উচ্চক্ষমতার অস্ত্র তার কাছে রয়েছে এবং সেগুলো এলাকায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে।
অডিওতে জাকিরকে বলতে শোনা যায়, যুদ্ধ যুদ্ধের মতো করতে হবে। এরপরই তিনি সোবহানকে আশ্বস্ত করেন, দূর থেকে গুলি করলেও যেন লক্ষ্যবস্তু পড়ে যায়-সেজন্য ‘মোটা দানা’ ধরনের বিশেষ গুলি ব্যবহার করতে হবে। কথোপকথনে স্পষ্টভাবে উঠে আসে, হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করতেই এই ধরনের গুলি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অডিওতে আরো জানা যায়, ২৫ পিস কার্তুজের একটি প্যাকেটের দাম ৪৮ হাজার টাকা এবং সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ গুলির প্রতিটির দাম দুই হাজার টাকা। জাকির দাবি করেন, অর্ডার দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই তিনি গুলি সরবরাহ করতে পারবেন।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, রাউজানের কামাল নামে এক ব্যক্তির কাছেও তিনি পূর্বে অস্ত্র পাঠিয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক অংশটি আসে কথোপকথনের মাঝামাঝিতে। সেখানে অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
জাকির সোবহানকে বলেন, প্রয়োজনে তিনি পেশাদার শ্যুটার পাঠিয়ে দেবেন। তার ভাষায়, ‘অস্ত্র ছাড়া টিকে থাকা যাবে না।’ এই বক্তব্য চট্টগ্রামে চলমান সশস্ত্র আধিপত্য ও প্রতিপক্ষ নির্মূলের প্রবণতার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাকলিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছে। তারা বলছেন, রাতের বেলায় মোটরসাইকেলে করে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এলাকায় ছোটখাটো বিরোধও এখন প্রাণঘাতী হামলায় রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরে ওই বাকলিয়া এক্সেসরোডে ৩ জন খুনের শিকার হয়েছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে কারা কারা অস্ত্র রাখে, কে কার ব্যাকিংয়ে চলে-সবাই জানে। কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। ভয় লাগে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, অডিওটি ইতিমধ্যে তাদের হাতে এসেছে এবং তা যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, অডিওতে যে আলোচনাগুলো পাওয়া গেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। অস্ত্র সরবরাহের সক্ষমতা, টাকা লেনদেন, হত্যার অর্ডার-সবই সুসংগঠিত নেটওয়ার্কের নির্দেশক।
তিনি আরো বলেন, কারা এই নেটওয়ার্কের পেছনে রয়েছে, কারা তাদের অর্থায়ন করছে তা আমরা খুজে বের করবো। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টরারেন্স।

