আড়িয়ালখাঁ নদের ভাঙনে দিশেহারা দুই শতাধিক পরিবার

জেলা প্রতি‌নি‌ধি, মাদারীপুর
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১০: ০৪
নদের ভাঙনে হুমকির মুখে স্থানীয়রা

এক সময় ছিল কয়েক বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা। নদীভাঙনে সেই সব কিছু হারিয়ে হতে হয়েছে নিঃস্ব। এরপর নদীর পাড়ের সরকারি জমিতে ছোট একটি টিনের ঘর তুলে কোনো রকমে বসবাস করছেন তিনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর এলাকার নতুন আন্ডারচর লঞ্চঘাট এলাকার ৭০ বছর বয়সী চান মিয়া।

বিজ্ঞাপন

নদীর পাড়ে বসে অপলক দৃষ্টিতে কী যেন দেখছিলেন তিনি। একটু এগিয়ে গিয়ে কথা হলো তার সাথে। কী দেখছিলেন তিনি জানতে চাইলে বলেন, ‘ওই যে নদীর ওপার দেখতেছেন না? ওই পারে আমাগো বাড়িঘর সব আছিলো, এখন আর কিছুই নাই। আমার এই জীবনে তিনবার আমাগো বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিল সব শেষ। কত যে না খাইয়া থাকছি হিসাব নাই। যাগো নদীতে সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোনো অস্তিত্ব থাহে না।’

চান মিয়ার মতো একই অবস্থা প্রতিবেশী বৃদ্ধ বজলু সরদারের, ৭৫ বছর বয়সে সাত বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। এখন তার কিছুই নেই। সরকার থেকে পাননি কোনো আর্থিক সুবিধাও। তিনি বলেন, ‘একবার হুনছি সরকার নাকি আমাগো একখান ঘর দিবো, কই তাও আহে না। না দিলো কোনো ঘর, না দিলো কোনো খাওন। এক পোলায় বদলা দেয়, তাই দিয়া আমাগো সংসার টিক্কা আছে।’

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সাহেবরামপুর এলাকার নতুন আন্ডারচর লঞ্চঘাট ও উত্তর আন্ডারচর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়ালখাঁ নদ। বছরের পর বছর আড়িয়ালখাঁর তাণ্ডবে বিলীন হয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর। এ বছর নতুন করে আড়িয়ালখাঁ নদের ভাঙনে শেষ হয়েছে দুই শতাধিক বসতঘর। এছাড়াও একটি গ্রামীণ সড়কের ৫০০ মিটার অংশ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে লঞ্চঘাট এলাকার আরো শতাধিক পরিবার।

এছাড়া নতুন আন্ডারচর এলাকার বঙ্গবন্ধু কলেজ, নতুন আন্ডারচর হাজী করিমখানের হাট, ৭৩নং নতুন আন্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়, নতুন আন্ডারচর ইমদাদুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, আল মাহমুদ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, করিমখানের হাট পোস্ট অফিস, গোলপাতা বাজারসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ভাঙন রোধের জন্য মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

এদিকে ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শিক্ষ-প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক আবুল হালিম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত মাদ্রাসা সুপার জাকির হোসেন, ইউপি সদস্য মোকলেসুর রহমান ও শিকক মো. আরাফাত।

চর সাহেবরামপুর ও লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আড়িয়ালখাঁ নদের পানি কমায় পাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে লঞ্চঘাট থেকে চর সাহেবরামপুর যাওয়ার একমাত্র সড়কটির প্রায় ৭০০ মিটার অংশ নদগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের অপর পাশেই রয়েছে বেশ কিছু বসতঘর, ফসলি জমি, স্থাপনাসহ একটি বাজার। অনেকে বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে অন্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে ভাঙনরোধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শুভ সরকার বলেন, কালকিনি সাহেবরামপুর আড়িয়ালখাঁ নদ এলাকায় আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন কবলিত এলাকায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেছি।

এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফ উল আরেফিন বলেন, লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন কবলিত লোকজনের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিগগিরই তাঁদের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে পুরো ইউনিয়নে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত