অ্যাম্বুলেন্সে বাধায় নবজাতক মৃত্যু, সবুজের বাবার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি

মো. আল-আমিন, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৫৯

শ্বাসকষ্টে কাতরাচ্ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার এক নবজাতক। পরিবারের সদস্যরা মরিয়া হয়ে তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় নিয়ে গেলে হয়তো চিকিৎসার সুযোগ মিলত, হয়তো শিশুটি বাঁচত। কিন্তু পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শরীয়তপুরের ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে শহরের একটি হাসপাতালের সামনে আটকে রাখা হয় রোগীবাহী গাড়িটি। আর এই অবরোধেই নিভে যায় এক শিশুর কোমল জীবন।

বিজ্ঞাপন

সিন্ডিকেটের ভয়াল থাবা, ডামুড্যা উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকেরা দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবার সন্ধ্যার পর ঢাকাফেরত একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে।

কিন্তু তখনই হাজির হয় সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্যরা—সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ান, তার ছেলে সবুজ দেওয়ান এবং তাদের সহযোগীরা। তারা চালককে মারধর করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। পরিবারের অনুনয়-বিনয়ও কোনো কাজে আসেনি। দাবি ছিল একটাই—আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে হবে।

ফলাফল—৪০ মিনিটের যন্ত্রণার পর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই শিশুটি মারা যায়।

ভুক্তভোগীদের কণ্ঠে যেন এক চাপা ক্ষোভ, নবজাতকের এক আত্মীয় বলেন, আমরা কাঁদতে কাঁদতে বলেছি ‘শিশুটাকে ঢাকায় নিতে দিন’। কিন্তু তারা কিছুই শোনেনি। শুধু বলেছে, তাদের গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়িতে যেতে দেওয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটাই মারা গেল।

এমন অভিযোগ শুধু এই পরিবারের নয়। সদর উপজেলার মজনু মিয়া নামে আরও একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমার অসুস্থ বাবাকে ঢাকায় নিতে চেয়েছিলাম। সিন্ডিকেটের লোকজন আমাদেরও আটকে দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে তাকে নিতে হয়েছিল।

শরীয়তপুরের আরও অনেকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সিন্ডিকেট রোগী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে রেখেছে। এরা চাইলে গাড়ি ছাড়ে, না চাইলে বন্ধ করে দেয়। ফলে অসহায় পরিবারগুলো বাধ্য হয় তাদের শর্ত মেনে নিতে।

এ ঘটনায় নূর হোসেন সরদার বাদী হয়ে আবু তাহের দেওয়ান, তার ছেলে সবুজ দেওয়ানসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। শনিবার ভোরে র‍্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযানে সদর উপজেলার বেড়া চিকন্দি গ্রামের একটি বাড়ি থেকে সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান। অন্যদিকে, জেলা সিভিল সার্জন মো. রেহান উদ্দিন আবু তাহের দেওয়ানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সিভিল সার্জন বলেন, অ্যাম্বুলেন্স বাধা দেওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, বাধার মুখে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত আসামি সবুজ দেওয়ানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত