আড়াইশ বছরের মেলা নিয়ে দুপক্ষের টানাটানি, সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি প্রশাসন

জেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৫

মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় আড়াইশ বছরের কুন্ডুবাড়ির মেলা নিয়ে দুপক্ষের মাঝে রশি টানাটানি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন নিয়ে একদফা মতবিনিময় সভা করেও শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। তবে মেলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত দিবেন বলে জানিয়েছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ উল আরেফিন।

বিজ্ঞাপন

এলাকা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুন্ডুবাড়ির মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে স্থানীয় জনতার ব্যানারে প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের অংশগ্রহণে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলার কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম হোসাইন ও মাওলানা মহাসিন হোসেন প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, সপ্তাহব্যাপী কুন্ডুবাড়ি মেলাকে ঘিরে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক বিক্রির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। তাই তারা মেলাটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানান।

এ সময় তারা আরো বলেন, কুন্ডুবাড়িতে পূজা চলবে কিন্তু মেলা করা যাবে না। তাই এই মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরেও মেলা মিলানোর পক্ষে উপজেলা ও পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং কুন্ডুবাড়ির মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শতাধিক ব্যবসায়ীরা রয়েছেন অনড়।

পরে বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মাঝে রশি টানাটানি সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ-উল আরেফীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কালকিনি থানার ওসি কে এম সোহেল রানা, আলেম সমাজের কর্নধার মাওলানা আব্দুল বারি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক বেপারী, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন মুন্সী, জামায়াতের মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মো. মিজানুর রহমান বেপারী, পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামা প্রসাদ পাল, ভবতোষ দত্ত ভজনসহ প্রায় শতাধীক লোকজন। এসময় উভয় পক্ষের আলোচনা শেষেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।

পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামা প্রসাদ পাল বলেন, এই মেলা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারন করে আছে। প্রায় আড়াইশ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কুন্ডুবাড়ির মেলা অনুষ্ঠিত না হলে এই অঞ্চলের গরিব-অসহায় মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ক্রয় করতে পারতেন না। কারণ এই মেলার মালামাল সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষতার মধ্যে থাকে। তাই আমি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মেলাটি প্রতি বছরের ন্যায় চলতী বছরেও অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি আসা রাখি।

প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের বাব-দাদারাও এই মেলায় আসছে এবং আমরাও প্রায় ৪০ বছর যাবত আসছি। বর্তমানে এই মেলা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে তার একটা সমাধান চাই। কারন এই মেলা না মিললে আমাদের পরিবারের না খেয়ে থাকতে হবে।

কালকিনি থানার ওসি কে এম সোহেল রানা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এসপি স্যারের নির্দেশক্রমে আমি সর্বোচ্চ সতর্কভাবে কাজ করবো।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ-উল আরেফীন বলেন, মেলা নিয়ে দুই পক্ষের মতামত আমি জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে লিখিত আকারে পাঠাবো। এই মেলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যার ও জেলা পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত নিবেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত