শীতের ভোরে যখন গ্রাম এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই নিভে গেল এক নিঃসঙ্গ জীবনের প্রদীপ। শরীয়তপুরের রুদ্রকরে শীত লাঘবের জন্য জ্বালানো আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা কামরুন নাহার। একটি ছোট কাঁচা ঘরে একাই থাকা এই নারীর মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি সমাজের নীরব অবহেলারও করুণ প্রতিচ্ছবি।
শনিবার ভোরে সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের রুদ্রকর এলাকায় বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুন নাহার ওই এলাকার মৃত মোসলেম সরদারের স্ত্রী।
স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী মোসলেম সরদার মারা যাওয়ার পর থেকেই একাই জীবন কাটাচ্ছিলেন কামরুন নাহার। কোনো সন্তান না থাকায় শেষ বয়সে তাঁর দিন কাটত প্রতিবেশীদের দয়া আর আল্লাহর ওপর ভরসা করে। শীতের রাতে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতর মাটির মালসায় আগুন জ্বালানোই ছিল তার একমাত্র উপায়।
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় আলো জ্বালাতে ব্যবহার করতেন কেরোসিনের ল্যাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, সেই আগুন থেকেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, ভোর রাতে হঠাৎ ছেলের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি কাকির ঘরে আগুন জ্বলছে। আমরা বালতি আর মটরের পানি দিয়ে আগুন নেভাই। কিন্তু ততক্ষণে কাকি মারা গেছেন। ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না—ল্যাম্প আর মালসার আগুনই হয়তো সব শেষ করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাঈদ শেখ বলেন, তিনি খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। কোনো ছেলে সন্তান ছিল না। আগের ঘরের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। একাই থাকতেন। ঘটনা শুনে পুরো এলাকায় শোক নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
একাকী এই বৃদ্ধার মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—শীতের রাতে আগুনের কাছে আশ্রয় খোঁজা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোও সমাজের দায়িত্ব। আল্লাহর কাছে এই কামনা—তিনি যেন মরহুমাকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং আমাদের সবাইকে মানবিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেন।

