গোপালগঞ্জে আ.লীগ নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২২: ১০

গোপালগঞ্জে একের পর এক পদত্যাগের ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের আরও পাঁচজন নেতা দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ থেকে মোট ১৮ জন নেতা পদত্যাগ করলেন।

শুক্রবার রাতে ওই পাঁচ নেতা মুকসুদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) একই উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আটজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একই দিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান শিকদারও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ পদত্যাগী পাঁচ নেতা হলেন, মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. নিয়ামত খান, ২নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জামাল হোসেন মুন্সী, ৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি পরিমল সাহা, সাধারণ সম্পাদক শান্ত সাহা এবং ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. নিয়ামত খান বলেন, “২২ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। তবে আমরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সবসময় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাব।”

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আটজন নেতা ননীক্ষীর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগী আট নেতা হলেন, ননীক্ষীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনোজ মৌলিক ও কাজী মিজানুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক রাসেল শেখ, সদস্য স্বপন শেখ, একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুর আলম মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আক্কাস চোকদার এবং ননীক্ষীর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জলিল কাজী।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনোজ মৌলিক। তিনি বলেন, “আমরা ননীক্ষীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ শাখার সকল পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে পদত্যাগ করছি। আমরা আমাদের পদত্যাগপত্র দ্রুত মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব।”

একই দিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান শিকদারও পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে ডুমরিয়া ইউনিয়ন শাখার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২১ আগস্ট থেকে স্বেচ্ছায় পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। শিগগিরই লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেব।”

এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেন, “সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করা যায় না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিলে সেটি পদত্যাগ বলে গণ্য হয়।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা, সেনাবাহিনীর গাড়ি পোড়ানো, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ২২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির এক নেতার ইশারায় মুকসুদপুরে আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়ার এটি একটি বড় কারণ।

তাছাড়া আওয়ামী লীগের সময় টিসিবি, সারের ডিলার, টিআরসহ বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। এখন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে বিএনপিতে ঢোকার জন্য এরা পদত্যাগ করছে।” তিনি আরও বলেন, “এ রকম দুই-একশ নেতা চলে গেলেও মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হবে না।”

হায়দার হোসেন আরও দাবি করেন, পদত্যাগী নেতাদের মধ্যে মুকসুদপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জামাল হোসেন মুন্সী শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিএনপির এক সভায় গিয়েছিলেন।

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, মুকসুদপুরে অযথা কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। একটি প্রতারক চক্র পুলিশের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বা গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে। বিকাশে টাকাও নিচ্ছে বলে শুনেছি। সে বিষয়ে আমরা সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে চলেছি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে টুঙ্গিপাড়ার কুশলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশের ফকির (৬০) ও একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস আলী (৫৫) একই কারণ দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলায় সর্বপ্রথম ১৫ জুন মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামাল পদত্যাগ করেন। এদিকে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম ভূঁইয়া গত ২৬ জুলাই দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।

মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানি নিখোঁজ, সন্দেহের তীর ইসকনের দিকে

সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন তালুকদারের মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শোক

রাবাদার রেকর্ডে স্বস্তিতে প্রোটিয়ারা

যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে খামেনির উপহাস

হোয়াইট হাউসে বলরুম নিয়ে রহস্য, নির্মাণে টাকা দিচ্ছে কারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত