পদ্মায় বিলীন বিদ্যালয় ভবন, পড়ালেখা বন্ধ শিক্ষার্থীদের

উপজেলা প্রতিনিধি, ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর)
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৪

রক্ষা করা গেলো না বিদ্যালয় ভবটিকে। পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলো ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমিও।

বিজ্ঞাপন

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. ছোবাহান মুন্সী জানান, উপজেলার কাঁচিকাটি ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। যার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ ও পূর্বে চাঁদপুর জেলা ও মেঘনা নদী। ওই এলাকাটির তিনদিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবার্নিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করতেন। ওই গ্রামের মানুষের মূল পেশা নদীতে মাছ ধরা ও কৃষিকাজ। ২০১৭ সালে পিডিপিই-৪ প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের ৪টি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। মঙ্গলবার পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে জমিসহ স্কুলভবনটি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মকবুল খালাশি ও শিক্ষক জাহানারা জানান,২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছর জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়া হয়।

কাচিকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম এ হামিদ বলেন, আমাদের এলাকা দুর্গম। নৌপথ ছাড়া আমরা যাতায়াত করতে পারি না। এলাকায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার শিশুরা পড়ালেখা করতে পারে না। নতুন এ বিদ্যালয়টিতে ৬ বছর ধরে পড়ালেখা করানো হচ্ছিল। আমাদের সন্তানরা পড়ালেখা করছিল। এখন সেটিও পদ্মায় ভেঙে গেছে। এখন আমাদের সন্তানরা কোথায় পড়ালেখা করবে জানি না।

কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিন খান বলেন, উত্তর মাথাভাঙা মৌজায় একটি স্কুলই ছিল। তাও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিছু দিন হয়তো পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ওই বিদ্যালয়ের জন্য যারা জমি দিয়েছিলেন তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা অন্যত্র জমি দিতে রাজি হলে সেখানে স্কুলের কার্যক্রম চালু করা হবে।

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, বিদ্যালয়ের জমি ও ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভবন ভাঙনের আগে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছিলাম। এখন কোথায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে তা বলতে পারছি না। শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবো। আপাতত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মুজাহিদ বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের কবলে পড়ায় আপাতত পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যিনি বিদ্যালয়ের জমিদাতা তিনি অন্যত্র আরেকটি জমি দিতে রাজি হয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়ার কারণে উপজেলা পরিষদের একটি সভা হয়েছিল। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেয়া জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখন বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেছে। আমরা শীঘ্রই এর কার্যক্রম অন্যত্র শুরু করার উদ্যোগ নেবো।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, কাচিকাটা এলাকায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ কারণে ওই বিদ্যালয়টির জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত