প্রেমের টানে চীন থেকে বাংলাদেশে এসে টংগিবাড়ীর মেয়েকে বিয়ে করলেন লি ইয়াং। ১৪ নভেম্বর সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরই তিনি তার প্রিয় মানুষ মঞ্জুরী আক্তার জেসিকাকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় রিকাবী বাজার কাজী অফিসে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিয়ের নিবন্ধনের সময় নিজের নামও পরিবর্তন করে রাখেন ‘আবদুল্লাহ’। এখন তিনি টংগিবাড়ী উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করছেন। বিষয়টি এলাকায় রীতিমতো আলোচনার ঝড় বইছে।
দেড় বছর আগে ফেসবুকে লি ইয়াং ও জেসিকার পরিচয়। ভাষা–অনুবাদ অ্যাপ দিয়ে শুরু হওয়া কথোপকথন ধীরে ধীরে রূপ নেয় গভীর সম্পর্কের। তবে বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণার নানা খবর দেখে শুরুতে বিয়েতে রাজি ছিলেন না জেসিকা। বিষয়টি বুঝতে পেরে লি ইয়াং নিজের বাবা–মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেন জেসিকার মাকে। কিছুটা আশ্বস্ত হলে জেসিকার পরিবারও তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়।
জেসিকা জানান, “ছয় মাস ধরে ও আমাকে বারবার বলেছে, ‘আমি আসবো, তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’ আমি নিষেধ করেছি, ভয় পেয়েছি— যদি প্রতারণা হয়! কিন্তু সে তার আন্তরিকতায় আমাকে বিশ্বাস করিয়েছে।”
বিয়ের পর দুজন মিলে চীনা দূতাবাসে গিয়ে এফিডেভিটও করেছেন। এখন জেসিকার ভিসা প্রসেস চলছে। ভিসা হলে সে স্বামীর সঙ্গে চীনেও যাবে। আর যদি মন না মানে— চীনা স্বামী আবার তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়—উৎসুক মানুষদের ভিড়। সবাই দেখতে চাইছে নতুন আগন্তুক চীনা যুবকটিকে, যিনি এখন ‘আবদুল্লাহ’। তিনি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে ঘুরছেন, একই খাবার খাচ্ছেন। পরিবারের লোকদের ভাষায়— “আমরা যা খাই, সেও তাই খায়। মাছ খেতে খুব পছন্দ করে।”
জেসিকার ফুফু বলেন, “ও খুব ভালো মেয়ে। ধর্ম অনুযায়ী বিয়ে করেছে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। ভালো থাকুক”
এক আত্মীয় বলেন, “জেসিকা আমার ভাতিজি। ওর বাবা হোসেন সেখ ৩ বছর আগে মারা গেছে। ওর পরিবারের অভিভাবকরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে জেসিকার বিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা খুব ভদ্র, বিনয়ী।”
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানায়— লি ইয়াং চীনের রাজং সিটির নানজিয়াং এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা মি. লি গুয়াং। দীর্ঘ অনলাইন যোগাযোগের পর ১৪ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশে এসে জেসিকাকে বিয়ে করেন এবং বর্তমানে কাঠাদিয়ায় স্ত্রীর পরিবারসহ অবস্থান করছেন।
টংগিবাড়ী থানার ওসি মো. সাইফুল আলম বলেন, “বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম দিনই পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে গোয়েন্দা টিমও পাঠিয়ে বিস্তারিত যাচাই করা হয়েছে।”

